somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্থঋণ মামলার রায় হলে করণীয়

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মামলা করতে হয় বিশেষ আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অর্থঋণ আদালতে। এসংক্রান্ত বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত আইনের নাম অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩।
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় এক বা একাধিক অর্থ ঋণ আদালত আছে। যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ের একজন বিচারক সাধারণত অর্থ ঋণ আদালতের বিচার কাজ করে থাকেন। আইনানুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় সম্পর্কিত যাবতীয় মামলা এ আদালতে দায়ের করতে হয়।

অর্থঋণ মামলায় বাদী ও বিবাদী নিজেদের আরজী-জবাবে (Pleadings) তাদের দাবির সমর্থনে কোনো সাক্ষ্য অথবা দলিল উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে আদালত সঙ্গত কারণ ও খরচ প্রদান ছাড়াই ওই সাক্ষ্য ও দলিল গ্রহণ না-ও করতে পারে। সুতরাং অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এসব সাক্ষ্য ও দলিলপত্রাদি সংযুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে যেসব সাক্ষ্য অথবা দলিল বাদী অথবা বিবাদীর কাছে মজুদ নেই, সেসব সাক্ষ্য ও দলিলের সম্ভাব্য উৎসের বিবরণও আরজিতে উল্লেখ করতে হবে। কারণ এই আইনের ৬(৪) ধারায় বলা হয়েছে, আদালত চাইলে এ ধারার উপধারা ২ ও ৩ বিধান অনুযায়ী সংযুক্ত হলফনামাই মৌলিক সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে এবং আদালত চাইলে কোনো মামলার এরকম হলফনামাযুক্ত আরজি বা লিখিত জবাব ও সংশ্লিষ্ট দলিলাদি বিশ্লেষণ করে এবং কোনো সাক্ষীকে পরীক্ষা করা ছাড়াই একতরফাভাবে রায় বা আদেশ প্রদান করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিবাদীর অজ্ঞাতে কিংবা বিবাদী কিছু বুঝে ওঠার আগে কিংবা অর্থঋণ মামলা তেমন বুঝেন না এমন কোন বিজ্ঞ আইনজীবী কর্তৃক মামলা পরিচালনার কারণে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার রায় হয়ে যায়। তখন বিবাদী খৈ হারিয়ে পেলে এবং কি করবে তাও বুঝতে পারে না। এমনকি অনেক সময় দেখা যায় সামাস্য ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত বাবদ রাখা মূল্যবান মর্গেজকৃত সম্পত্তি নিলাম হয়ে যায়। তাই অর্থঋণ মামলায় শুরু থেকেই বাড়তি সতর্কতা জরুরি এবং রায়-ডিক্রি হয়ে গেলেও হতাশ হওয়ায় কিছু নেই। আইনি প্রক্রিয়ায় আপনি সুরক্ষা পেতে পারেন। আজতে আমরা রায়-ডিক্রি হয়ে গেলে কি কি শর্তে আপীল, রিভিশন করে প্রতিকার পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা ।

লিখিত জবাব দাখিলের পর আদালত উভয়পক্ষকে মৌখিক শুনানি শেষে কিংবা তাদের অনুপস্থিতিতে মামলার বিচার্য বিষয় গঠন করবে। আর বিচার্য বিষয় না থাকলে আদালত অবিলম্বে রায় প্রদান করবে। এছাড়াও মামলার শুনানীর জন্য ধার্য কোনো তারিখে যদি বিবাদী আদালতে অনুপস্থিত থাকে অথবা মামলা শুনানীর পর্যায়ে আদালত যদি তাকে প্রয়োজন মতো উপস্থিত না পায় তাহলে এক্ষেত্রে আদালত সে মামলা একতরফা সূত্রে নিষ্পত্তি করতে পারে।

মামলা নিষ্পত্তি তথা রায় ও ডিক্রি হলে করণীয়

মামলা নিষ্পত্তি তথা রায় ও ডিক্রি হলে আপীল, রিভিশনের সুযোগ রয়েছে। এই আইনের ৪১, ৪২ এবং ৪৩ ধারায় যথাক্রমে আপিল ও রিভিশনের বিধানাবলি বর্ণিত আছে।

আপীল করার ক্ষে্ত্রে আইনের বিধানঃ

এই আইনের ধারা-৪১ অধীনে ডিক্রীকৃত টাকার পরিমাণ ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা অপেক্ষা অধিক হয়, তাহলে হাইকোর্ট বিভাগে, এবং যদি ডিক্রীকৃত টাকার পরিমাণ ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা অথবা তদ্অপেক্ষা কম হয়, তাহলে জেলা জজ আদালতে আপীল দায়ের করতে হবে। আপীলকারী, ডিক্রীকৃত টাকার পরিমাণের ৫০% এর সমপরিমাণ টাকা আদালতে জমা করে আপীল দায়ের করতে হবে। তবে বিবাদী-দায়িক ইতোমধ্যে ১৯(৩) ধারার বিধান মতে ১০% (দশ শতাংশ) পরিমাণ টাকা নগদ অথবা জামানত হিসাবে জমা করে থাকলে, অত্র ধারার অধীনে আপীল দায়েরের ক্ষেত্রে উক্ত ১০% (দশ শতাংশ) টাকা উপরি-উল্লিখিত ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) টাকা হতে বাদ যাবে৷
তবে এক্ষেত্রে বাদী-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই ধারার অধীনে কোন আপীল দায়ের করলে, তাকে উপরি-উল্লিখিত নিয়মে কোন টাকা বা জামানত জমা দান করতে হবে না৷

আপীল নিষ্পত্তির সময়সীমা

আপীল আদালত, আপীল গৃহীত হবার পরবর্তী ৯০ (নব্বই) দিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং ৯০ (নব্বই) দিবসের মধ্যে আপীলটি নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে, আদালত, লিখিতভাবে কারণ উল্লেখপূর্বক, উক্ত সময়সীমা অনধিক আরো ৩০ (ত্রিশ) দিবস বর্ধিত করতে পারবে৷

রিভিশন করার ক্ষে্ত্রে আইনের বিধানঃ

এই আইনের ধারা-৪২ অধীনে কোন আদালত, আপীলে প্রদত্ত রায় বা ডিক্রীর বিরুদ্ধে কোন রিভিশনের দরখাস্ত গ্রহণ করা যাবে না, যদি না দরখাস্তকারী, আপীল আদালত কর্তৃক প্রদত্ত বা বহালকৃত ডিক্রীর টাকার ৭৫% এর সমপরিমাণ টাকা, আপীল দায়ের কালে দাখিলকৃত ৫০% টাকাসমেত, উক্ত পরিমাণ টাকার স্বীকৃতি স্বরূপে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, অথবা বাদীর দাবী স্বীকার না করলে জামানত স্বরূপে ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার বা নগদায়নযোগ্য অন্য কোন বিনিমেয় দলিল (Negotiable Instrument) আকারে ডিক্রী প্রদানকারী আদালতে জমা করে উক্তরূপ জমার প্রমাণ দরখাস্তের সহিত আদালতে দাখিল করে৷

তবে বাদী-আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে এই ধারার অধীনে রিভিশন দায়ের করলে, তাকে উপরি-উল্লিখিত নিয়মে কোন টাকা বা জামানত জমা বা দাখিল করতে হবে না৷

রিভিশন নিষ্পত্তির সময়সীমা

উচ্চতর আদালত, রিভিশনের দরখাস্ত গৃহীত হবার পরবর্তী ৬০ (ষাট) দিবসের মধ্যে ইহা নিষ্পত্তি করবে, এবং ৬০ (ষাট) দিবসের মধ্যে রিভিশন নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে, আদালত, লিখিতভাবে কারণ উল্লেখপূর্বক, উক্ত সময়সীমা অনধিক আরো ৩০ (ত্রিশ) দিবস বর্ধিত করতে পারবে।

সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আপীল

এই আইনের ৪৩ ধারার অধীনে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক আপীল বা রিভিশনে প্রদত্ত কোন রায়, ডিক্রী বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আপীল দায়েরের জন্য ঋণ গ্রহীতা-বিবাদীকে আপীল বিভাগ অনুমতি প্রদান করার ক্ষেত্রে, সংগত মনে করলে, এই আইনের ৪২(১) ধারার অনুরূপ পদ্ধতিতে ডিক্রীকৃত টাকার অপরিশোধিত অবশিষ্টাংশের যে কোন পরিমাণ টাকা নগদ বাদী-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অথবা জামানতস্বরূপ ডিক্রী প্রদানকারী আদালতে জমাদান করার আদেশ প্রদান করবে।

আপীল বা রিভিশন চলাকালীন সময়ে আপোষ/ মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি

এই আইনের ৪৪ক ধারায় বর্নিত আছে যে, আপীল বা রিভিশন কার্যক্রম অব্যাহত থাকার যে কোন পর্যায়ে পক্ষগণ মধ্যস্থতার মাধ্যমে আপীল বা রিভিশন মামলার বিষয়বস্তু নিষ্পত্তি করে আদালতকে অবহিত করতে পারবেন। আদালত উক্ত ধারার অধীন অবহিত হলে এবং নিষ্পত্তির বিষয়ে সন্তুষ্ট হলে, উক্ত আপীল বা রিভিশন মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করিয়া আদেশ প্রদান করবেন। এই ধারায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মধ্যস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবাদীকে সমান সুযোগ দেয়া হয়েছে, যা আইনটিকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছে। পরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলায় যদি নিজের পক্ষে ডিক্রি পায় তাহলে আদালতের আদেশক্রমে বন্ধকি সম্পত্তি ধারা ৩৩ অনুযায়ী নিলামে বিক্রির মাধ্যমে প্রদত্ত ঋণের অর্থ সমন্বয় করতে পারবে বাদী-আর্থিক প্রতিষ্ঠান।




- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ (এম টি উল্যাহ)
আইনজীবী
০১৭৩৩৫৯৪২৭০
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর।"

লিখেছেন এমএলজি, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৩০

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর।" বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় এ কাজটি করা হয়নি বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

বিষয়টি সত্য কিনা তা তদন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া কেমন ছিলেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া কেমন ছিলেন?

ইয়াতিমদের সাথে ইফতার অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া, ছবি https://www.risingbd.com/ থেকে সংগৃহিত।

তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রীও তিনি। তাকেই তার বৈধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বছরশেষের ভাবনা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৮


এসএসসি পাস করে তখন একাদশ শ্রেণিতে উঠেছি। সেই সময়ে, এখন গাজায় যেমন ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন বসনিয়া নামে ইউরোপের ছোট একটা দেশে এরকম এক গণহত্যা চলছিল। গাজার গণহত্যার সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উৎসর্গ : জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP)

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৮



খিচুড়ি

হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল “হাঁসজারু” কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে—“বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।”
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা—
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×