somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন তারেক রহমানের দুর্নীতির নিয়ে আরো কিছু জেনে নেই

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘তারেক রহমানের উপর আস্থা রাখবো কিভাবে? দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, হাওয়া ভবন দিয়ে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার কী না করেছেন তিনি’, আলাপচারিতায় কথাগুলো বলতেছিলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক বিপ্লবী ছোটভাই। বিএনপির কর্মী হিসেবে এমন কথা শুনতে শুনতে আমাদের চামড়া অনেকটা গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। যুক্তি দিতেও বিরক্ত লাগে।
দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সত্য তুলে ধরার ইমানী প্রয়াসে একজন নাগরিক হিসেবে ছোট ভাইটিকে জিজ্ঞেস করলাম;

ভাই তারেক রহমান সাহেবকে তুমি দেখেছো?

: ভাই, আমার জন্মই তো ২০০৬ সালে।

তাহলে তারেক রহমান সাহেবকে নিয়ে জানাশোনার ভিত্তিটাই তো মিডিয়া, তাই না?

: হ্যাঁ, আমি স্ট্যাডিও করেছি। এসব লুকানোর কোন সুযোগ নেই।

লুকানো নয় বরং আমাদের উদঘাটনই করা উচিত প্রকৃত সত্য। তুমি,আমি আর যা-ই হই তারেক রহমান সাহেবের তো শত্রু নয়। শত্রু যদি কেউ থেকেই থাকে তা তো আওয়ামিলীগই হবে, তাই না? 

: অবশ্যই

আর তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ থাকলেও সবকিছুর সারমর্ম হলো তিনি দুর্নীতি করেছেন আর অর্থ পাচার করেছেন। এইতো?

: হ্যাঁ

তাহলে ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগ মিলে বিগত আঠারো বছরে তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে কয়টি দুর্নীতির মামলা হয়েছে, কয়টি মামলার সাজা হয়েছে, দুর্নীতির কী প্রমাণ পেয়েছে এসব জানাও তো আমাদের দরকার আছে। জানা আছে এসব?

: তা আইনের বিষয়। আমি অতো বিস্তারিত জানি না। এটা ঠিক সাজা হয়েছে এবং তিনি পলাতকই আছেন।

তাহলো শোন, ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় উনার বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হয়েছে। যায় মধ্যে মানহানির অভিযোগেই ৬৫টি পিটিশন মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা হয়েছে তিনটি মামলা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি করে মামলা রয়েছে। দুর্নীতি, চাঁদা দাবির অভিযোগসহ অন্য দণ্ডবিধি ধারায় পাঁচ মামলা রয়েছে। আমাদের জানার বিষয় যেহেতু দুর্নীতি নিয়ে তাহলে সেটা নিয়ে জানা যাক।

দুর্নীতি সংক্রান্তে তারেক রহমান সাহেবকে জড়িয়ে মামলা হয়েছে দুটি। মজার বিষয় হলো দুটো মামলাতেই তিনি মূল আসামি নন।
যার মধ্যে প্রথম মামলাটা হলো; টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের কাজ একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস জনৈক ব্যক্তি ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। যার মধ্যে থেকে ৩ (তিন) কোটি টাকা ভাগ পান তারেক রহমান সাহেব। উক্ত মামলার বিচার শেষে রায়ে তারেক রহমান সাহেব ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩(তিন) কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার বায়বীয় অভিযোগের কোন সত্যতা না পেয়ে আওয়ামিলীগ আমলেই তারেক রহমান সাহেবকে বেকসুর খালাস প্রদান করে আদালত (অবশ্য যার প্রেক্ষিতে ওই বিচারকের উপর অবর্ণনীয় চাপ সৃষ্টি হয় এবং বিচারক মোতাহার হোসনে সাহেব জীবন রক্ষার্থে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন)। পরবর্তী দুদক আপীল করে হাইকোর্টে নিয়ে এটাতে সাত বছরের সাজা নিশ্চিত করে স্বঘোষিত শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ খ্যাত বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দিয়ে!

দুর্নীতির দ্বিতীয় মামলাটি হলো তারেক রহমান সাহেবের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, শ্বাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। এই মামলার মূল অভিযোগ হলো দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে তাঁরা যে সম্পত্তি বিবরণী দাখিল করেন তা দুদকের মনোভূত না হওয়ায় দুদক অভিযোগপত্র দাখিল করে বলে তাঁরা ৪ কোটি ৮২ লাখা টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন আর ২ কোটি ১৬ লাখ টার তথ্য গোপন করেছেন। অথচ, দুদক চাইলে এমন অভিযোগে দেশের সতের কোটি  মানুষের বিরুদ্ধেই মামলা করতে পারে। কেন এটা বললাম, একটা উদাহরণ দিলে ক্লিয়ার হবে।
ধরো দুদক তোমার প্রতি নোটিশ করলো স্থাবর অস্থাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে। তুমি দাখিলও করলে। তুমি সেখানে তোমার বাসার আসবাবপত্রের দাম দেখালে ৫০ হাজার টাকা। দুদক তা মানলো না, সে অনুসন্ধান করে বললো না এসবের প্রকৃত দাম দুই লক্ষ টাকা। অতএব, তুমি দেড় লক্ষ টাকার তথ্যগোপন করলে এবং দেড় লক্ষ টাকা ছিল অবৈধ উপায়ে অর্জন! দশ বছর আগে তুমি কত দিয়ে ফার্ণিচারগুলো কিনলে না শ্বশুর বাড়ি থেকে দিলো সেটাই তো খেয়াল নেই। খেয়াল থাকলেও রশিদ তো রাখে নি। সুতরাং তুমি আসামি! তারেক রহমান সাহেব, তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান এবং শ্বাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর নামে এমন অভিযোগ আনায়ন করে মামলা দায়ের করা হয় এবং দীর্ঘ ষোল বছর ধরে বিচার করে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ফরমায়েশি সাজা নিশ্চিত করা হয় তারেক রহমান সাহেব ও ডা. জোবাইদা রহমান ম্যাডামের বিরুদ্ধে। (সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক বিচার কার্যক্রম বাতিল করা হওয়ার সাজা লাগে নি)। যার পিতা ছিল দেশের প্রেসিডেন্ট , মা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী তার পৃথিবীব্যাপী দূরের কথা দেশেও কোন স্থাবর সম্পত্তিই নেই। কল্পনা করা যায়?  অথচ, এক পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তির গল্প তো পুরো জাতি জানলো পিয়নের মনিবের কাছ থেকেই!

তাহলে, তারেক রহমান সাহেব দুর্নীতি করলেন এবং  হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করলেন এসব তথ্যের ভিত্তি কী? বিগত আঠারো বছর দুদকসহ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র, সুশীল-সমাজ, টিআইবি, সরকার দলীয় থিংক ট্যাংক, দেশী-বিদেশী লবিস্ট ফার্ম মিলে তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে একটা টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনতে পারলেন না? সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, পলায়নকারী প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ সহকারী ছিলেন যার নাম ফেরদৌস আহমেদ খান। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফেরদৌস আহমেদ খান অক্টোখান হিসেবে পরিচিত। তার প্রতিষ্ঠানের নাম-Octokhan Institute of Chartered Accountants. এই ভদ্রলোককে বিশেষ সহকারী পদমর্যাদায় নিয়োগ দেওয়াই হয়েছিল শুধুমাত্র জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আর দুর্নীতির অনুসন্ধানের জন্য। Octokhan ফার্ম স্বয়ং এবং আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করে কোটি কোটি ডলার খরচ করলেও এক টাকা পাচারেরও তথ্য বের করতে পারলেন না! এটাই সম্ভবত সরকারের সবচেয়ে বড় লস প্রজেক্ট ছিল। এমন Octokhan ফার্ম, আন্তর্জাতিক লবিস্টরা আর বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল অফিস এক তারেক রহমান সাহেবের দুর্নীতি অনুসন্ধানে সাত মহাদেশ তন্ন তন্ন করে যে টাকা উড়িয়েছে সেটা দিয়ে সম্ভবত আরেকটা পদ্মা সেতু করা যেত!

: ভাই, এভাবে তো কেউ কখনো বুঝিয়ে বলে নি। দুঃখিত।

বুঝিয়ে বলবে কে? উন্নয়নের জিকির আর হাওয়া ভবনের নামে কুৎসা রটনোটাই তো ছিল ফরজ কাজ! হাওয়া ভবন একটি বাড়ির নাম। যেটি ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়। কুৎসা রটানোর ক্ষেত্রে নামটি মুখরোচক হিসেবে ব্যবহার করেছে স্বৈরাচারী শক্তি!

- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
[email protected]

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪০
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। অন্য দেশে চলে যাচ্ছে গার্মেন্টসের অর্ডার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২০




এবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডারের একটি অংশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশের সবচেয়ে বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

অ্যাকশন মুভি সিরিজ - ডাই হার্ড ফ্র্যাঞ্চাইজি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩০




আমার পছন্দের অভিনেতাদের একজন হচ্ছেন ব্রুস উইলিস। তার অভিনীত অসংখ্য সিনেমার মধ্যে আমি অল্প কিছু দেখেছি। সেগুলির মধ্যে ডাই হার্ড ফ্র্যাঞ্চাইজিটি আমার বেশ পছন্দের। বিশেষ করে ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম কয়েকটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ভারতের উদ্বেগ!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


ভালোভাবেই শেষ হলো সনাতনীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা কিন্তু দুর্গাপূজা ভালো ভাবে শেষ হওয়ায় অনেকেই বড্ড হতাশ হয়েছে; পূজা নিয়ে তারা ট্রামকার্ড খেলতে চেয়েছিল কিন্তু ট্রামকার্ড খেলার পরও সফল হতে পারেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংস্কৃতি সংকরায়ন

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:১৬

কোথায় চলছে আমাদের সংস্কৃতি!! একদিকে পাড়ায় পাড়ায় মাদ্রাসা, অপরদিকে মহল্লায় মহল্লায় ক্লাবে মদ্যপান, জুয়ার আড্ডা। হজ, হিজাবের উত্থানের সাথে দুর্নীতি, অবৈধ প্রণয়ের মহোৎসব। ভারত খেদাওদের মুখে হিন্দি গান, লুঙ্গি ড্যান্স... ...বাকিটুকু পড়ুন

"গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রি" ব্যতিত জাতির বাঁচার পথ নেই।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫



"নতুন স্বাধীনতা" আসার সময় বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে এনার্খী এসেছে সমাজে, প্রশাসনে, রাজনীতিতে ও ব্যবসায়; তাতে গার্মেন্টস'এর সাপ্লাইচেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা, এবং হয়েছে; উহাকে রিকোভার করার দায়িত্ব কার? দায়িত্ব ড:... ...বাকিটুকু পড়ুন

×