somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-২)

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-১)

তবে কেন সালোনিকাতে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এর পারিবারিক ইতিহাসের বিশদ বিবরণ কিংবা Domneh সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক গত পরিস্কার কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না?

কারণ গুলো নিম্নরূপঃ
১। মুস্তফা কামাল বিখ্যাত হয়ে উঠার আগে তার পারিবারিক ইতিহাসে বিশদ বিবরণ জানার প্রয়োজন পড়েনি। এ সমস্ত ক্ষেত্রে পরিবার কর্তৃক সংরক্ষিত ইতিহাসই পরবর্তীতে মূল সুত্র হয়ে থাকে। মুস্তফা কামাল তার পিতার মতই নিজের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে গোপণীয়তা অবলম্বন করতেন।
২। তার মা প্রকৃতই একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান হওয়াতে তার Domneh সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে সন্দেহের উদ্রেক হয়নি। প্রসংগত আমরা জেনেছি Domneh সম্প্রদায়ের বিয়ে-শাদি নিজেদের মধ্যেই হয়।
৩। ১৯১৩ সালে গ্রীসের হাতে সালোনিকার পতনের পর তুর্কি নাগরিকেরা মুলতঃ মুসলমান এবং Domneh সম্প্রদায় ইস্তানবুলে গিয়ে বাস করা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে সেখানেই আত্মীকৃত হয়ে যায়। ফলে তাদের আর তেমন খুঁজে পাওয়া যায়না।
৪। Domneh সম্প্রদায় বাহ্যিক ভাবে মুসলমানদের মতই ছিলেন। তাদের এই বর্ণচোরা বৈশিষ্ট্যের কারণে কাউকে সন্দেহাতীত ভাবে Domneh বলা সম্ভব নয়।

এই কারণ গুলোর পাশাপাশি একটি সম্ভাবনাও রয়ে যায়, আর তাহলো তিনি প্রকৃতই এক মুসলিম পরিবারের সন্তান, যে পরিবারের কর্তা সেকুলার ধ্যান-ধারণা পোষনকারী ব্যাক্তি, যা আমাদের সমাজে আকসার দেখা যায়।
কিন্তু, ১৯৯৪ তে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত Forward নামক ইহুদী সংবাদপত্রের ২৮শে জানুয়ারী সংখ্যা কামাল আতাতুর্ক এর পরিচয় এর উপর হঠাৎ আলোর ঝলকানি ফেলে। সেই বছর ২৪শে জানুয়ারী ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট এজের ওয়েজমেন কোনো ইসরায়েলি রাস্ট্র প্রধান হিসাবে সর্বপ্রথম তুরস্ক সফর করেন। জিকরন ইয়াকুব নামে একজন সাংবাদিক প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারীকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন যে, প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্কের স্মরণে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন কিনা ? সেক্রেটারী তার সফর সূচী দেখে হাঁ সুচক উত্তর দেন।

এই মোক্ষম সময় তিনি দ্বিতীয় প্রশ্ন করে বসেন, “ প্রেসিডেন্ট কি জানেন যে, কামাল আতাতুর্ককে শৈশবে হিব্রু প্রার্থনা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল এবং তিনি ইহুদী বংশদ্ভুত। তিনি সাথে সাথে বিস্মিত না হয়ে বলেন অবশ্যই। ফোন রেখে দেয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি ভুল করে ফেলেছেন, এবং আতাতুর্কের গোপনীয় তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। তাই পরবর্তীতে তিনি জনাব ইয়াকুবের কাছে আবার টেলিফোন করেন এবং জানতে চান, তিনি এই গোপন তথ্যের ব্যাপারে কতটুকু জানেন। সেক্রেটারী সেই তথ্যেরই সত্যায়ন করেন যা কামালের জীবদ্দশায় মানুষের মুখে মুখে ছিল, যা তিনি সব সময়ই অস্বীকার করে এসেছেন, তার জীবনী লেখকেরাও কখনো এই ব্যাপারটাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেননি।

সাংবাদিক সাহেব যা জানেন তার সংক্ষিপ্ত রূপ ফ্যাক্স করে পাঠান।
জিকরন ইয়াকুবের ব্যাপারটি নজরে আসে যখন তিনি ইতামার বেন আভির আত্ম জীবনী পড়ছিলেন, যিনি এলিজার বেন আভির সন্তান। এলিজার বেন আভি সেই ব্যাক্তি যিনি উনবিংশ শতাব্দীতে হিব্রু ভাষায় কথনকে পুনরূদ্ধার ও প্রচলন করেন। বেন আভি একজন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি লিখেনঃ

১৯১১ সালের শরৎ কালীন এক সন্ধ্যায় তিনি জেরুসালেমের কামেনিটজ হোটেলে প্রবেশ করেন, হোটেলের মালিক তাকে বলেন,
“ তুমি কি ঐ তুর্কী অফিসারকে দেখেছ, যে ঐ কোণায় এক বোতল আরক ( এক প্রকার মদ) নিয়ে বসে আছে?”
“হাঁ”
“তিনি তুর্কী সেনাবাহিনীর একজন অন্যতম প্রভাবশালী অফিসার।”
“ তার নাম কি?”
“ মুস্তফা কামাল”
“ আমি তার সাথে কথা বলতে চাই” তিনি তাকে বলেন, “কেননা যে মুহুর্তে আমি তাকে দেখি তার তৃক্ষ্ণ সবুজ চোখের দৃষ্টি দেখে আঁতকে উঠি।”

বেন আভি মুস্তফা কামালের সাথে দুইটি সাক্ষাতের বিবরণ দেন, যিনি তখনো আতাতুর্ক নাম ধারণ করেননি। দুইবারই কথোপকথন ফ্রেঞ্চ ভাষায় হয়েছিলো, যার অধিকাংশই ছিল আরকের নেশায় আচ্ছন্ন অবস্থায় উসমানী রাজনীতি নিয়ে। প্রথমেই কামাল আস্থার সাথে বলেনঃ
“আমি সাবাতি জেভির একজন বংশধর- কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমি এখন আর ইহুদী নই, কিন্তু আমি তোমাদের এই নবীর ( সাবাতি জেভি) একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত। এই দেশের সকল ইহুদী তার সাথে যোগ দিলে ভালো করত।”

১০ দিন পর তাদের দ্বিতীয় সাক্ষাতে তিনি বলেন, “ আমার বাড়িতে ভেনিসে মুদ্রিত একটি হিব্রু বাইবেল আছে। এটা আসলে অনেক পুরনো, আমার মনে আছে আমার বাবা আমাকে এটা শিক্ষা দেয়ার জন্য একজন কারাইতে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন, যিনি এটা আমাকে পড়তে শেখান। আমার এখনো এটা থেকে কিছু শব্দ মনে আছে-----”
বেন আভি বলতে থাকেনঃ
সে কিছুক্ষণ চুপ থাকেন, তার চোখ শুন্যে কিছু খুঁজছিল। তার পর সে বলেনঃ
“শেমা ইস্রায়েল, আদোনাই এলোহেনু, এদোনাই এহাদ!” (শোনো ও ইসরায়েল, প্রভু আমাদের উপাস্য, আমাদের উপাস্য এক”)
“ এটা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনা ক্যাপ্টেইন”
“ এবং এটা আমারও গোপণ প্রার্থণা” গ্লাস গুলো পূর্ণ করতে করতে সে উত্তর দেয়।

যদিও বেন আভি’র এটা জানার কোনো উপায় ছিলনা, কোনো সন্দেহ নেই আতাতুর্ক আক্ষরিক অর্থেই গোপণ প্রার্থণা বুঝিয়েছেন। Donmeh দের গুপ্ত প্রার্থণা গুলোর খবর ১৯৩৫ সালে সর্ব প্রথম বিদগ্ধ মহল জানেন, যখন জেরুজালেম ন্যাশনাল লাইব্রেরী থেকে একটি বই তাদের হাতে পৌঁছে, যা ছিলো তাদের বিশ্বাসের স্বীকারোক্তিঃ
“ একমাত্র সাবাতি জেভিই সত্য মাসিহ। শোনো ও ইসরায়েল, প্রভু আমাদের উপাস্য, আমাদের উপাস্য এক”

এটা সন্দেহাতিত ভাবে এই বই থেকেই আতাতুর্ক এই প্রার্থণা কে মনে রেখেছেন, বাইবেল থেকে নয়, । যেটা পরিণত বয়সে তার গুপ্ত বিশ্বাসের একটি স্বীকারোক্তি, যা তিনি করেছিলেন একজন তরুন ইহুদী সাংবাদিকের কাছে মাতাল অবস্থায়। এ ঘটনার প্রায় এক দশক পরে, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে উসমানী সম্রাজ্যের লজ্জাজনক পরাজয়ের পর যখন তিনি জাতির নেতৃত্ব গ্রহন করেন, আগ্রাসী গ্রিকদের পরাজিত করেন। অতঃপর মসজিদ সমূহের বিকৃতি ঘটান। তখন তার Donmeh পরিচয় গোপণ করার জন্য যথাযথ কারন বিদ্যমান ছিলো।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়, মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক একজন গুপ্ত ইহুদী ছিলেন এবং ভন্ড মাসিহ সাবাতি জেভির বংশধর।



রেফারেন্সঃ
১। The City of Salonica: A true cross road by Victoria M. Lord
২। Weakipedia
৩।Exposed-ATATURK WAS A CRYPTO-JEWISH CABAL OPERATIVE & FREEMASON!
৪। FORWARD, A Jewish Newspaper published in New York, January 28, 1994


কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-৩)
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( শেষ পর্ব)


RELATED READING:

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-১)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-২)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৩)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৪)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:১৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×