somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অধিকার বুঝে নেওয়া কঠোর দাবিতে... ( নারী দিবস )

০৮ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে দিনটা আজ ৮ মার্চ। বিশ্বজুড়ে আজ পালন করা হচ্ছে নারী দিবস। কিন্তু যে দাবিতে আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী মহিলা নারী দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সত্যিই কি আজও সেই দাবি গুলো স্বীকৃতি পেয়েছে?


বাজারের চাপে দিবসের ভিড়ে আজকের দিনটা অনেকটা আলাদা। কারণ মানুষ হিসেবে একজন নারী পরিপূর্ণ অধিকারের দাবিতে সুদীর্ঘকাল যে আন্দোলন চালিয়ে আসছে, তারই সম্মানস্বরূপ আজ পালিত হচ্ছে নারী দিবস। অন্তত একটা দিন গোটা বিশ্ব আলাদা করে মনে করে নারীরাই এই জগতের শক্তির উত্‍স আর প্রেরণা। যদিও আলাদা করে বছরের একটা বিশেষ দিনে নারী দিবস পালন করা নিয়ে নানা কথা হয়। নিন্দুকরা নাক সিঁটকে বলেন, সবটাই বাড়াবাড়ি। কিন্তু যারা এ কথাটা বলেন তারা নিশ্চয় ইতিহাসের পাতাটা ভাল করে উল্টে দেখেননি। তাই বিশেষ করে তাঁদের জন্য আর সকলের জন্য থাকল নারী দিবসের ইতিহাস নিয়ে ছেঁড়া একটা পাতা।

সামাজিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন ধারায় দেখা যায়, নারী কোনও অংশেই পুরুষের পিছনে ছিল না। ফ্রান্সের প্যারি কমিউন, ফরাসি বিপ্লব, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক আন্দোলনসহ ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে পুরুষের পাশেই নারীকে দেখা যায়। কিন্তু, কাঙ্ক্ষিত দাবি নারী সমাজ অর্জন করতে পারেনি। কর্মক্ষেত্রে নারীর মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ২০০৯-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ ভাগ পারিশ্রমিক কম পায়। অপর এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে নারীরা কাজ করছে শতকরা ৬৫ ভাগ।

বিপরীতে, তার আয় মাত্র শতকরা দশ ভাগ। পৃথিবীতে নারী-পুরুষের সংখ্যানুপাত প্রায় সমান। অথচ, দুনিয়ার মোট সম্পদের একশ` ভাগের মাত্র এক অংশের মালিক মেয়েরা। মেয়েদের গৃহস্থালী কাজের আর্থিক স্বীকৃতি এখনও দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ, তা অর্থনৈতিক মূল্যে অদৃশ্যই থাকে। অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা তো বটেই এমনকী উন্নত বিশ্বের চিত্রটাও অনেকটা একই। কখনও শ্লীলতাহানি, কখনও যৌন নির্যাতন, কখনও মেয়ে হিসাবে জন্মানোর জন্য চূড়ান্ত নিপীড়ন, আবার কখনও ধর্ষণ। মহিলারা সত্যি ভাল নেই। বিশ্ব, সমাজ, যুগ যত তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে, ততোই এগিয়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে মেয়েরা। কিন্তু কিছু মানুষের লোভ-লালসা, আর কিছু অদৃশ্য শক্তি মহিলাদের কেমনভাবে যেন পিছনে টেনে ধরে রেখেছে। সেই অদৃশ্য শক্তিকে অগ্রাহ্য করে কেউ কেউ অনেক উপরে উঠতে পারলেও, বেশিরভাগই সেই অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করছেন। ইতিহাসের পাতা কিন্তু বলছে মেয়েরা পারবে সেই অদৃশ্য শক্তিকে ভেঙে ফেলে অনেক অনেক এগিয়ে যেতে।

ইতিহাসের পাতায় নারী দিবসের উল্লেখ্যযোগ্য দিন--
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা রাস্তায় নামেন। দাবি ছিল দিনে ১০ ঘণ্টা কাজের সময়, পুরুষদের সমান পারিশ্রমিক, সমানাধিকার।

১৮৬০ সালের ৮ মার্চ সেই নিউইয়র্কেই নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে পথে নামেন। দাবি ছিল একই। সঙ্গে শিশুশ্রম বন্ধের দাবিতেও আওয়াজ তুলেছিলেন তাঁরা।

১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিন পুরুষের পাশাপাশি নারীর সম-অধিকারের দাবিটি আরও জোরালো করেন

১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলন

১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়

১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে ১৭টি দেশের ১০০ জন প্রতিনিধি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন
১৯১১ সাল থেকে ৮ মার্চ দিনটিকে `নারীর সম-অধিকার দিবস` হিসেবে পালিত হয় ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে এই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী

১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা করা হয়। এই দিনে সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, অষ্ট্রিয়া ও জার্মানিতে লক্ষাধিক নারী মিছিল ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ দিনটি উদযাপন করেন

১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে

১৯৪৫ সালে সানফ্রান্সিসকোতে রাষ্ট্রসংঘ স্বাক্ষর করে `জেন্ডার ইকুয়ালিটি` চুক্তিতে নারী অধিকারের যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনায় রেখে

১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যায়

১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে ৮ মার্চ নারী দিবস পালনের জন্য উত্থাপিত বিল অনুমোদন পায়

১৯৮৪ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ। ঐতিহাসিক সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রসংঘ এই সিদ্ধান্ত নেয়

২০০৯-এ বিশ্বের ২৯টি দেশে সরকারি ছুটি সহ প্রায় ৬০টি দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়েছে

২০১০ সালে বিশ্বজুড়ে নারী দিবস পালন করা হয়। অভূতপূর্ব সাড়া মেলে

ইতিহাসকে স্বীকৃতি-- বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় ৮ মার্চ। এরমধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনেগ্রো, রাশিয়া, তাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া।
চিন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে শুধুমাত্র মেয়েরাই সরকারি ছুটি পায়।

তথ্য সূত্র :
মুল লিন্ক :
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×