১ দিনে ভারত ভ্রমন, পর্ব-০১।
সুপ্রিয় ব্লগারবৃন্দ, সবাই কেমন আছেন? বইমেলা কেন্দ্রিক ব্যস্ততা এখন সবার, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও, আমি কথা দিয়েছিলাম কয়েকদিন পর ভারত ভ্রমনের ২য় কাহিনী নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। তার-ই প্রেক্ষিতে আজ আবার আপনাদের সামনে হাজির হলাম। আজ আপনাদের জানাবো, "১ দিনে ভারত ভ্রমন- পর্ব ০২" তথা শেষ পর্ব।
এই বিষয়ের শিরোনামটি এভাবেই করেছি কারণ সেই দিন রাতেই আমাকে ঢাকা ফেরত আসতে হয়েছিল। কেননা পরদিন সকাল নয়টায় আমাকে অফিসে পৌছতেই হবে। তাই তাড়াহুড়ো করে ভারত ভ্রমন শেষ করতে হয়েছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, এতো তাড়াহুড়ো’র কি-ই বা প্রয়োজন ছিল? হ্যাঁ, এই প্রশ্ন করতে পারেন! বলছি, শুনুন... ১ বছর আগে ভারতের ভিসা লাগিয়েছিলাম, যাওয়া হয়ে উঠে নি। অফিসের এক কলিগ বললো, ভিসা পাবার পর যদি ভারতে না ঢুকেন তবে পরবর্তীতে ভারতের ভিসা পেতে ঝামেলা করবে। শুধুমাত্র পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল মারার জন্য ভারতে ঢুকতে হয়েছে!
এবার আসি মূল আলোচনায়। মূল আলোচনার পাশাপাশি ছবিও আপলোড দেবো আশা করছি। বাংলাদেশ ও ভারতের ইমিগ্রেশন কিভাবে ক্রস করলাম তা ১ম পর্বে বলেছি। দ্বিতীয়বার বলার প্রয়োজন বোধ করছি না! চ্যাংড়াবান্দা দিয়ে ঢুকার পর ভাবলাম যেহেতু আমি মাত্র ৪/৫ ঘন্টা ভারতে অবস্থান করবো, তাই ভাবলাম আত্নীয়’র বাড়ীর জন্য কিছু না নিয়ে গেলে কেমন হয়। চ্যাংড়াবান্দা বর্ডার থেকে অটোতে করে দুর্গামন্দির মোড় পর্যন্ত গেলাম। অটো ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা এখানে কোন মার্কেট আছে কি? জবাবে বলল, দাদা এখানে কোন মার্কেট পাবেন না, মার্কেট করতে হলে আপনাকে যেতে হবে ময়নাগুড়ি। আমি তো পড়লাম মহা বিপদে। আমি বললাম, দাদা ময়নাগুড়ি এখান থেকে কতদূর? বলল, লোকাল বাসে যেতে ৩০/৪০ টাকা(পশ্চিম বঙ্গের লোকজন রুপি কে টাকা বলে) লাগবে। পরে আমি ভাবলাম যে না আমাকে ময়নাগুড়ি যেতেই হবে। ঐ মোড়ে দাড়াতেই একটা লোকাল বাস আসলো। আমি বাসে উঠলাম। বাসটি রাজ্য সড়ক ১২-এ দিয়ে সাঁ সাঁ করে চলতে থকলো।রাস্তাটা বেশ বড় এবং সমান। রাস্তার দুপাশে অনেক চা বাগান দেখতে পেলুম এবং ধানকাটার পর বাংলাদেশের জমি গুলো যেমন দেখা যায় ঠিক তেমন জমিও চোখে পড়ল। আধঘন্টা পরই ময়নাগুড়ি পৌছলাম। পুরো রাস্তাটাই আমাকে দাড়িয়ে যেতে হয়েছে!

বাসটি ময়নাগুড়ি লোকাল সাব পোষ্ট অফিসে নামিয়ে দিল। এদিকে খিদেয় আমার পেট চো চো করছিল। রাস্তার পাশে একটি দোকান থেকে ঝালমুড়ি ও ছোলাবুট সেদ্ধ মাখা খেলাম, অন্যরকম স্বাধ! বাংলাদেশের কোন এক মফস্বল শহরের মতোই মনে হল। তবে রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। রাস্তায় রিকশাও চলতে দেখলাম। তবে আমাদের বাংলাদেশের মতো বিশৃঙ্খল যান চলাচল না। নেই তেমন জানজট। ওখানে নেমে হাটলাম। জারদা ব্রিজ পারহয়ে নতুন বাজার, বাজারে ঢুকতেই একটি কনফেকশনারী দোকান চোখে পড়ল। ওখান থেকেই বেশকিছু চকোলেট, স্নাক্স, চিপস এবং কিছু কসমেটিক্স খরিদ করলাম।

জারদা ব্রিজ ধরলা নদীর উপর। নদীর উপর থেকে আর একটি মন্দির চোখে পড়ল। মন্দিরের সংখ্যাধিক্য মনে হল। হবেই তো কেননা হিন্দু প্রধান দেশ। নদীটি মোটমুটি গভীর মনে হলো। বর্ষাসময় হয়তো বেশ জল গড়ে।


নতুন বাজারে কেনাকাটা করে যেখানে নেমেছিলাম সেদিক হাটা ধরলাম। হাটতে ভালই লাগছিল। নতুন জায়গায় হাটতে আমার সবসময় ভালো লাগে। ওখানে আর আমাদের দেশের মেয়েদের মাঝে একটিই পার্থক্য পরিলক্ষিত করলাম, ওখানে ওরা ওড়না পড়ে না আর আমাদের মেয়েরা ওড়না পড়ে। আর তাছাড়া ময়নাগুড়ি শহরটা বাংলাদেশের কোন এক মফস্বল শহরের মতোই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মন্দির। তবে শহরটা বেশ পরিষ্কার মনে হলো।

আরও হাটলাম। হাটতে হাটতে বাসস্টপ পর্যন্ত এসে পাশের দোকান থেকে আরও কিছু চকলেট খরিদ করলাম। এরপর চ্যাংড়াবান্দার দিকে রওয়না, টাটার তৈরি প্রাইভেট কারে চ্যাংড়াবান্দা পৌছাই। ভাড়া বেশি নিয়েছিল, সে হয়তো বুঝেছে এই বাঙ্গালী এখানে নতুন। ৩৫০ রুপি দিতে হয়েছে তাকে। এখন বাংলাদেশে ঢুকার পালা। বর্ডারেই নেটওয়ার্ক পেলাম। আমার আত্নীয়কে ফোন দিয়ে কথা হলো। সে ওপারে দড়িয়ে আছে আমাকে রিসিভ করার জন্য। আমি একটু ভয়ে ছিলাম। এত দ্রুত ঢুকলাম আবার দ্রুত বের হলাম। ইমিগ্রেশনে কিছু বলে কি না, এই নিয়ে বেশ দুঃচিন্তায় ছিলাম। বুকে ফু দিয়ে ঢুকলাম ইমিগ্রেশন অফিসে, ধপাধপ সিল মেরে আমাকে পার করে দিল। বি এস এফ আমার বেগ চেক করল।

তারপর আমি বাংলাদেশে ঢুকলাম। ওখানে বি জি বি আমার লাগেজ চেক করার পর আমি চলে গেলাম ইমিগ্রেশন অফিসে। ওখানে এরাইভাল সিল দিয়ে আমাকে বিদায় করে দিল। পাশেই আমার আত্নীয় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমাকে দেখে একগাল হাসি দিলো, বললো ভালই তো ভারত ভ্রমন করলেন এবার চলেন। বুড়িমারি বর্ডার থেকে আরও কিছু কসমেটিক্স খরিদ করলাম। পরে মটর সাইকেলে আমার আত্নীয়র বাড়ি।
সন্ধায় তার বাড়ি থেকে ঢাকার দিকে রওয়ানা হই। পরদিন সকাল ৭ টায় সহিসালামতে ঢাকায় পৌছাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




