somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মা

১৩ ই মে, ২০১২ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)
মাত্র তখন ক্লাস থ্রী তে পড়ি।একদিন বিনা নোটিশ-এ স্কুল ১ ঘন্টা আগে ছুটি দিয়ে দিলো।আমার এক বান্ধবী অফার করলো তার বাসায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য। সেই ছোটবেলা থেকেই আমার ঘুরে বেড়ানোর নেশা ।অতএব কিছু না বলে তার পিছু পিছু হাটা শুরু করলাম।মনে মনে ঠিক করে নিলাম কেবল ১ ঘন্টার জন্যই যাবো যেন বাসার কেউ টের না পায়। কিন্তু বান্ধবীর সাথে খেলায় খেলায় কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসেছে বুঝতেই পারিনি। ওখানে এতো খেলার সঙ্গী পেয়ে আমি যেন সব ভুলে গিয়েছিলাম । এদিকে আমার বাড়ি না ফেরা নিয়ে বাসায় গোলমিটিং বসে গেছে। মোটামুটি সব আত্মীয় সজনরাই জেনে গেছে আমি হারিয়ে গেছি। সবাই বাসায় ভীর করে এটা ওটা পরামর্শ দিতে লাগলো মা আর বাবাকে।কেউ বললো থানায় যেতে তো আবার কে্উ বললো একটা টেক্সী নিয়ে পুরো শহরে মাইকিং করতে । আমার মায়ের মনে কি চলছিলো জানি না তবে হঠাৎ তিনি কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে এলেন। আমার স্কুলমুখী রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে দোকানে দোকানে খোজ নিলেন কেউ আমাকে ফিরতে দেখেছে কিনা। এভাবে এক এক অবস্থানের দোকান থেকে জিগ্ঞেস করতে করতে তিনি সেই গলিতে পৌছে গেলেন যেখানে আমি আছি। পাশের একটা দোকান থেকে আমরা সবাই মিলে আইসক্রীম খেয়েছিলাম। মা গিয়ে ঐ দোকানদারকে জিগ্ঞেস করতেই তিনি বলে দিলেন আমাদের অবস্থান। বান্ধবীর বাড়িতে আমরা সবাই মিলে খেতে বসেছিলাম ঠিক এই সময় মা দরজা দিয়ে ঢুকলেন। আমি খাওয়া বাদ দিয়ে অবাক হয়ে মার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মা কিভাবে জানলেন আমি ওখানে আছি ! আর মনে মনে প্রস্তুতি নিতে থাকলাম বাসায় গিয়ে রাম ধোলায় খাওয়ার জন্য। অথচ মা আমাকে কোন বকাও দিলেন না বরং যেই মহিলাটি আমাকে স্কুল থেকে আনা নেয়া করতো তারই চাকরী নট করে দিলেন। ওটাই ছিলো মার থেকে পাওয়া আমার প্রথম প্রশ্রয়।
(২)
এরপর ক্লাস V এর ঘটনা। আমার চাকরীজীবী মা সারাদিন সময় দিতে পারতেন না বলে বাসায় আমারই বয়সী একটি মেয়ে রেখেছিলেন। মায়ের অগোচরে আমি আর সেই মেয়েটি সারাদিন এর ওর বাড়ি থেকে চুরি করে আম-জাম-তেতুল পাড়তাম, সারাদিন নদীতে সাতরে বেড়াতাম। মেয়েটিকে বলে রেখেছিলাম এসব যেন মা জানতে না পারে। একদিন রাতে আবিস্কার করলাম মেয়েটি লুকিয়ে মার কাছে সারাদিনে যা করেছি তার বিবৃতি দিচ্ছে। রাগে আমার গা পুড়ে্ গেল। ঠিক করলাম একে শায়েস্তা করতে হবে। পরের দিন মা অফিসে চলে যাওয়ার পর মেয়েটি কে বাথরুমে আটকে রেখে আমি সারাদিনের জন্য লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলাম। বাসায় ফিরে দেখি আমার কাঠের স্কেল হাতে নিয়ে মা সোফায় বসে আছেন। সেদিন দরজা আটকে মা খুব মেরেছিলেন । আর আমি কান্নাজড়িত ঝাপসা চোখেও দেখতে পেয়েছিলাম মায়ের চোখ দিয়ে অনবরত কান্না ঝরে পড়ছিল।
(৩)
যখন একটু বড় হয় মা আমাকে একটা আবাসিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানে নিয়ম ছিলো কেবল মাত্র মাসের প্রথম শুক্রবার স্টুডেন্টরা গার্ডিয়ানের সাথে মিট করতে পারবে। মা একমাস গ্যাপ দিয়ে আমার সাথে দেখা করতে যেতেন একটানা প্রায় ১৪ ঘন্টা জার্নি করে । সেইবার মার আসার কথা ছিলো। আমি রেডী হয়ে অপেক্ষা করছি । সকাল গড়িয়ে দুপুরও শেষ হয়ে আসে।তবুও মা বাবা কারো দেখা নেই। আশেপাশে বান্ধবীদের দেখছি সবাই যার যার বাড়ির লোকদের সাথে গল্প করছে। অভিমানে আমি গাল ফুলিয়ে বসে থাকলাম। বিকেল প্রায় শেষ এমন সময় দেখি ক্লান্ত প্রায় বাবা স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকছেন। মা আসেন নি দেখে আমি আর কান্না রাখতে পারলাম না। বাবা আমাকে কাদতে দেখে বললেন, "কাদিস নারে , তোর মার অ্যক্সিডেন্ট হয়েছে। এখন ঢাকা মেডিকেলে আছে। " শুনে আমি যেন কান্না করতেও ভুলে গেলাম। বাবা বলে গেলেন," ওখানে তোর মাকে দেখার কেউ নেই। তুই মন খারাপ করবি দেখে আমাকে জোর করে পাঠিয়ে দিলো। " আমার সব অভিমান নিমেষে উধাও হয়ে গেল । মাকে দেখার জন্য মনটা কেদে উঠলো। কিন্তু উপায় নেই সামনে পরীক্ষা। স্কুল থেকে ছাড়বে না। বাবাকে তাই তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে রুমে এসে খুব কাদলাম । মা কেন যে এমন হয় !
(৪)
যখন ছোট ছিলাম মা কে যমের মতো ভয় পেতাম। আর যখন আমি কিশোরী মায়ের সব বিষয়ে খবরদারী করাটা খুব বিরক্ত লাগতো। কোন ছেলেবন্ধুর সাথে একটু দাড়িয়ে কথা বলছি অমনি মা চোখ রাঙিয়ে ডেকে পাঠাতেন ।কোথাও যেতে হলে খুটিয়ে জিগ্ঞেস করতেন কার সাথে যাচ্ছি। তখন মনে হতো আমার মা টা খুব ব্যাকডেটেড। এরপর আমি যখন যুবতী সবেমাত্র প্রেমপত্র পেতে শুরু করেছি মা আমার অজান্তে (যদিও আমি জেনে ফেলতাম) অকারণে আমার পড়ার টেবিল অথবা আলমারীতে চিরুনী তল্লশী চালাতেন। প্রচন্ড রাগ হতো তখন। মা কেন আমার প্রাইভেসী বোঝেনা !
এখন বুঝি মা কেন অমন করতেন। এখন আমি মা কে খুব বুঝি। এখন আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। আমি এখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখেছি। আগের মতো আর মা আমাকে সবকিছু দেখিয়ে পরিয়ে দেন না। এখন আর আমি মার কাছে কিছু লুকোয় না। তিনিও ছোটবড় সব আবেগ আমার সাথে অবলীলায় ভাগাভাগি করেন। মা আমার সারাজীবনের সেই একমাত্র প্রকৃত বন্ধু যে আমাকে কোন অবস্থাতেই একা ফেলে যায়নি। সবসময় বিপদে আপদে আমি মাকে পাশে পেয়েছি।আমি আমার মাকে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসি যা আসলে বলে বোঝানো যাবে না।
মা দিবসে বিশ্বের সকল মা কে আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×