১.
এস এস সি'র রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ফিলআপের দিন স্কুল থেকে এসেই নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল রুমা। স্কুল থেকে ফিরেই যে মেয়ে কথার পসরা সাজিয়ে বসে মা'র কাছে, মা'কে সবকিছু না জানালে যার স্বস্তি হয় না, তার এহেন আচরণে অবাক হয়ে গেলেন মা আতিয়া পারভীন। তাই বেশ কিছুক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়েই কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি, কিন্তু ভেতর থেকে সাড়া এল না। অবশেষে দরজা খুলল মেয়ে, কিন্তু তার দিকে তাকিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন আতিয়া। উস্কোখুস্কো চুল, লাল চোখ আর তখনো না বদলানো স্কুলের পোশাকে রুমাকে দেখেই বুঝতে পারলেন যে কিছু একটা সমস্যা নিশ্চয়ই হয়েছে, নইলে সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রাণবন্ত তার মেয়ের আজ এ অবস্থা কেন? কি হয়েছে জানতে চাইতেই মা'কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে রুমা, মুখে তার কেবল একটি কথা-"মা গো, আমার বুঝি আর লেখাপড়া হবে না"......
২.
অনেক চেষ্টা করে সান্তনা দিয়ে আদর করে রুমার কাছে যা জানতে পারলেন, তা ছিল আতিয়ার দুঃস্বপ্নেরও অতীত। রুমা স্কুলে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু গিয়ে জানতে পারে যে সব ছাত্রীর এস এস সি'র ফর্ম এলেও তারটা আসে নি, কারণ হিসেবে ক্লাস শিক্ষক তাকে জানিয়েছেন যে এটা নাকি "প্রশাসনিক ভুল"। স্কুলের প্রশাসনিক দপ্তর থেকে নাকি তার নামের বিপক্ষে কোন ফর্ম চেয়ে পাঠানো হয় নি, যেহেতু অষ্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণদের তালিকায় নাকি তার নামই ছিল না! একথা শুনে যেন রুমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল--দীর্ঘ ২ ঘন্টা সে অনেক ছোটাছুটি করেও সে বিকল্প কোন ফর্ম যোগাড় করতে পারল না, কাউকে বোঝাতে পারল না যে এটা নিছকই একটা ভুল, সে নবম শ্রেণীর নিয়মিত ছাত্রী হিসেবেই এতদিন ক্লাস করে এসেছে, কাজেই ফর্মটা তার প্রাপ্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা, বেচারী রুমার বিলাপ আর অসহায় আকুতি, স্কুলের দেওয়ালের মাঝেই আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল......
"পাঠকবৃন্দ ক্ষমা করবেন, গল্পটা চেষ্টা করেও আর লিখতে পারছি না কারণ ঘটনাটা অদ্ভুত মনে হলেও সত্য, আর এমনই সত্য যাকে প্রকাশ করলেও খুব একটা লাভ হবে না। এমন অনেক রুমা আমাদের দেশের আনাচে কানাচে গুমরে গুমরে কেঁদে মরে, যাদের জীবন শুরু হওয়ার আগেই যেন থেমে যায়। রুমার মত মেয়েদের একটাই দোষ যে তারা "প্রাইভেট পড়া" নামক অন্যায় কে মেনে নিতে পারে না, ফলশ্রুতিতে খড়গ নেমে আসে তাদের অমূল্য শিক্ষাজীবনের ওপর। আজ শিক্ষাঙ্গনের অল্প কিছু গুরুতর সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, আন্দোলন করছি, কিন্তু প্রতিনিয়ত যে হাজার হাজার রুমা এমন আপাতক্ষুদ্র অথচ মারাত্মক অন্যায়ের শিকার হয়ে যাচ্ছে, তার প্রতিবাদ করার জন্য কেউই এগিয়ে আসছি না......আবারো তাই ক্ষমা চাই এমন একটি অর্থহীন লেখা প্রকাশ করে আপনাদের বিরক্তি উৎপাদনের জন্য...।"
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:৫০