somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যান্টিনে শোরগোল!- বাই বুয়েটিয়ান ফর বুয়েটিয়ান অফ বুয়েটিয়ান

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাত্রাবাসে বেশ গোলযোগ হইতেছে। খোদ পিয়ন চাপ্রাশিরাও ত্যক্ত। সকলের মুখে একই অভিযোগ "ক্যান্টিনে নাস্তা করিয়া সুখ হইতেছে না। ক্যান্টিনে ভর পেট নাস্তা করিলেও বৈকাল পার হইতেই লুঙ্গির প্যাচ হালকা হইয়া যায়।" দিনের পর দিন অপুষ্টি চলিতে থাকায় ছাত্রদের পশ্চাদদেশের চর্বিস্তুপ গলিতে লাগিল। কোমরবন্ধনীর কাটা নামিতে নামিতে এমন অবস্থায় নাবিল যে, অস্ত্রপচার করিয়া নতুন ফুটো না করিলেই নয়। বাতেল ছাত্রদের ব্যাপক স্বাস্থ্যহানি ঘটায় অনেকের ছাত্রী-প্রেমিকা অন্যত্র ভাগিয়া গেল। এমতাবস্থায় আতেল ছাত্রকূলও ক্ষেপিয়া উঠিল। তাহারা কাষ্ঠনির্মিত শক্ত চেয়ারে বসিয়া পাঠে মনোযোগ দিতে পারিতেছিল না। পশ্চাদদেশের ব্যথায় উহাদের বিদ্যা ধ্যানে ব্যাঘাত ঘটিল। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করিতে নজরুল হলের কমন রুমে ছাত্রকূল এক্ত্রিত হইল।

একজন টিংটিঙ্গে ছাত্র দাড়াইয়া কহিল "ভাই সকল এরুপ আর চলিতে দেয়া যায় না। অপুষ্টির কবলে পড়িয়া... গেল মাসে আমাদের ফুটবলদল গোহারা হারিয়া ১ম রাউন্ডেই বিদায় নিয়াচে। হলের মান ইজ্জত খানদান ধুলায় মিশিয়া গিয়াছে।"
আরেক বিজ্ঞ ছাত্র ল্যাপটপ খুলিয়া এক্সেল শিট দেখাইয়া বলিতে লাগিল "গেল টার্মে আমাদের হলের মাথাপিছু সিজিপিএ নামিয়া গিয়া এখন ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন... "
একজন সাধারন ছাত্র প্রতিনিধি দাড়াইয়া হাকিল "ইহা স্মরণকালের সবচাইতে বড় বিপর্যয়, একাডেমিক ও এক্সটা কারিকুলার জগতে আমরা ক্রমেই পিছাইয়া যাইতেছি। আমাদের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখিতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকেই ভাবিতে হইবেক"।
গোল বাধিয়া গেল কি করা যায় তা লইয়া। নানা মুনির নানা মত। শেষে সাব্যস্ত হইল "হল ক্যান্টীনের উপর কড়া নজর রাখা হইবেক, এর হিসাব কিতাবে স্বচ্ছতা আনিতে কম্পুটারাইজ করা হইবেক। খুজিতে হইবে ক্যানো খাদ্যমান নামিয়া যাইতেছে.. "। আলোচনা ভালই চলিতেছিল...কিন্তু ন্যাতারা আসিয়া বিবাদ বাধাইল। ন্যাতাদের পেশী বহুল শরীর...ছাত্রকূল দিন দিন শুকাইলেও...ন্যাতারা ক্যানো যানি তাগড়া হইয়া উঠিতেছেন। ক্ষমতাসুখের কারনেই কিনা। ন্যাতারা হুমকি দিয়া বলিলেন "ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ...জানা আচে নিচ্চয়...যে যার গর্তে না ঢুকিলে খবর করিয়া দিব কিন্তু"। যে যার মত রুমে চলিয়া গেল।


কিন্তু পরদিন হইতে নজরদারি চলিল... চুপি চুপি। সারাদিন কোন কিছু ধরা পড়িল না। কিন্তু রাত্রি ৪ ঘটিকায় ক্যান্টিনের পাশে টিংটিঙ্গে সেই সাধারন ছাত্রপ্রতিনিধি, চেচাইয়া লোক জড়ো করিল । টিংটিঙ্গের হাক শুনিয়া অনেকে নামিয়া আসিল ...কি হইয়াছেরে? টিংটিঙ্গে একখানা ত্রিচক্র-যানের পাশে দাড়াইয়া আছে। ঘটনা যাহা জানা গেল..."টিংটিঙ্গে হল ক্যান্টিনের সামনে ভ্যানচালক আর ক্যান্টিন মালিককে কথা কহিতে দেখিয়াছে। আগাইয়া আসিতেই...টিংটীঙ্গেকে দেখিতে পাইয়া ভ্যানচালক আর ক্যান্টীনের মামা উভয়েই দৌড়াইয়া কোথায় জানি লুকাইয়াছে"। ভ্যানে বিশাল ...সাদা বস্তা। সমবেত ছাত্ররা বস্তা কাটিয়া দিল। হড়হড় করিয়া বস্তা হইতে সবুজ ঘাস পড়িল। আর পাওয়া গেল ছোট একবস্তা ইউরিয়া সার। ক্ষুধার্ত মানুষ দ্রুত ক্ষেপিয়া যায়। তাই ছাত্ররাও ক্ষেপিয়া ক্যান্টিনে হানা দিল..."কোথায় গেলিরে ...হতভাগা ক্যান্টীন মামা"। শোর শুনিয়া ভয়ে ক্যান্টিন মামা লুঙ্গি তুলিয়া পালাইয়া গেল। দরজা ভাঙ্গিয়া ভিতরে ঢুকিল। ক্যান্টিন বয়দের শুইবার ব্যবস্থা ভিতরেই...উহারা জাগিয়াছে আগেই। অগ্নি মূর্তি ছাত্রদের দেখিয়া সব বলিয়া দিল..."ন্যাতারা পুষ্টি বাড়াইতে সবুজ ঘাস আর ইউরিয়ার মিশ্রণ অর্ডার দিয়াছে ক্ষমতায় আসিয়াই...প্রথমে ভালই চলিতেছিল...কিন্তু সারাদেশে সবুজ ঘাসের আকাল পড়ীল...পাশের অক্সফোর্ডে আর কবিরাজখানাতেও ব্যাপক মাত্রায় সবুঝ ঘাসের অর্ডার আসাতে...সবুঝ ঘাস আর ইউরিয়ার দাম বাড়িয়া গেল... খরচা কমাইতেই সাধারন ছাত্রদের খাবারে টান পড়িল...সেই জন্যই হালিমে মাংস নাই, বার্গারে কিমা নাই, সসে টমেটো নাই, জিলাপিতে শিরাও নাই"। সকলেই বুঝিতে পারিল...তাহাদের দূরাবস্থার মূল কারন কি! প্রভোষ্টের বাড়িতে সেই ভোর রাত্তিরেই ফোন বাজিল...। প্রভোষ্ট ধড় স্যার ধড়মড় করিয়া ঘুম হইতে উঠিলেন। ফোনে ২/১ মিনিট বৃত্তান্ত শুনিলেন...অস্থির প্রকৃতির মানুষ উনি... কিন্তু সবুজ ঘাস আর ইউরিয়া দিয়া নেশা করিবার বর্নণা শুনিয়াই...হাকিলেন "পিএলের মধ্যে কাহিনী ফাদিয়াছ?...ভাবিয়াছ গোল বাধাইলেই পরীক্ষা পিছাইবে?...নটাঙ্গির দল...আজ হইতে তোদের ক্যান্টিন বন্ধ। পড়িতে বস সকলে "। বলিয়া খটাশ করিয়া ফোন কাটিয়া দিলেন।

পরদিন খবরে প্রকাশঃ প্রথম আলো - ছাত্রলীগের চাঁদা দাবির মুখে বুয়েটের হল ক্যানটিন বন্ধ

ক্যান্টিনে শোরগোল! দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১০ ভোর ৬:৫৮
২৮টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×