somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিঠি [গল্প]

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিআরটিসি দো-তলা বাসের দো-তলাতেই বসে আছি। দুপুরের সময় বলে অনেকগুলি সিট ফাঁকা পড়ে আছে, আমি বসে আছি একেবারে সামনের দিকে চালকের মাথার উপরে। ফাঁকা রাস্তা হলে পিচ ঢালা রাস্তায় তাকিয়ে থাকি, মাঝের ফাটলে চেহারা খুঁজি(পাশাপাশি অনেকগুলো ফাঁটল থাকলে কেন যেন মনে হয় এইটা কি কারো চেহারা কিংবা কোন বস্তুর ছবি অজান্তে ফুটিয়ে তুলছে)। আর জ্যামের রাস্তায় ফুটপাথের মানুষগুলোর হাঁটা, পাশের বাসের ড্রাইভার, হেল্পার, যাত্রীর মুখে বিরক্তি এইগুলো দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে যায়।
রাস্তা বেশ ফাঁকাই ছিল এই পর্যন্ত, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে এসে সিগন্যালে পড়লাম। সামনে খেয়াল করলাম, লাশবাহী একটা ট্রাক। লাশকে মাঝখানে রেখে সবাই এই রোদে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের মুখের অভিব্যক্তি দেখে কিছু বুঝা যাচ্ছে না। সিগন্যালের বিরক্তি নাকি কষ্ট নাকি লাশের জন্য কষ্ট নাকি এই দুপুরের রোদের জন্য কষ্ট। লাশের মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছিল, কাকে দেখে বেশি জীবন্ত মনে হয় তা দেখতাম।
সিগন্যাল ছাড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই বাসায় চলে আসি। তখনও মাথায় ঘুরছে সেই লাশবাহী ট্রাকের দৃশ্য। এতো কাছে থেকেও লাশটি তার আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলতে পারছে না। জীবিত অবস্থায় কি এতোগুলো মানুষ তার পাশে থাকতো? সবসময় না হলেও অন্তত সপ্তাহে একবার? না হয় মাসে একবার?
আমার একটি চিঠি জমেছে, নিজের লেখা। প্রেরক আমি আর প্রাপক অজ্ঞাত কেউ কিংবা সবাই। সপ্তাহে অন্তত একটি চিঠি লিখা হয়। খুব সুন্দর করে মনের কষ্ট কিংবা ভালো লাগা একটি পাতায় লিখি। লিখা শেষ হলে শব্দ গুলো, বাক্যগুলো উল্টা পালটা করে আরেকটা কাগজে লিখি। এরপর কোনদিন রাতে কিংবা খুব ভোরে বাসার ছাদে গিয়ে প্লেন বানিয়ে উড়িয়ে দিই। হয়তো রাস্তায় পড়ে থাকে কিংবা কারো বাসার বারান্দায় জমা হয় কিংবা আবার বাড়ির ছাদেই ফিরে আসে। আমি উড়িয়ে দিয়েই পিঠ ঘুরিয়ে নিচে নেমে আসি। আর সুন্দর করে গুছানো চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলি। সেই ছাই pringles এর একটি কৌটাতে জমিয়ে রাখি।
আজকে ভিন্ন কিছু করতে ইচ্ছে হচ্ছে। বাসার খুব কাছেই ৫ মিনিট হাঁটার দূরত্বে নতুন কবরস্থান হয়েছে। সেখানে গেলাম, গিয়ে দেখি একটি কবর খোড়া হচ্ছে। আমি সেই কবরের কাছে যেতে যেতে খোড়া শেষ হয়ে গিয়েছি। সদ্য জন্ম নেয়া কবর বুক মেলে রেখেছে কারো জন্য, অপেক্ষা করছে কারো জন্য। তারা আগে কেউ কাউকে দেখে নি তবুও কি মিলনের অপেক্ষা, সবচেয়ে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে হবে একে অপরের সাথে। পকেট থেকে চিঠিটা বের করে কবরে ফেলে দিলাম, এরপর চিঠির উপরে মাটি ছিটিয়ে দিলাম। চিঠিটার কবর হয়ে গেলো কি? হয়তো তাই হবে। অনুভূতির কবর দিতে পারলে আরো বেশ হতো। তবে আমি এখানে চিঠিটা রেখে যাচ্ছি যে মানুষটি এখানে আসছে কিছুক্ষণের মধ্যে। সময় করে আমার কিছু জানতে পারবে হয়তো, মৃত অন্য কারো সাথে হয়তো রসিয়ে রসিয়ে আমার গাধামির আলোচনা করবে। আমি তো জানবো না সে পড়েছে কি না, আমি তো জানবো না সে কাকে বলছে। সে তো জানবে না আমি কে ছিলাম, কে আছি….
কপালের ঘাম নাক দিয়ে চুইয়ে কবরে পড়লো, আর কত কি রেখে যেতে চাই এক কবরে?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×