তখনো জানতাম না বন্ধুত্ব কাকে বলে।স্কুলে যাওয়া শুরু করিনি। কিন্তু তার আগেই আমার আশেপাশের সবাই আমাকে শুনাতো, একজন বন্ধু আমার জন্যে অপেক্ষা করছে প্রতিদিন, খোঁজ নিচ্ছে আমি কবে থেকে স্কুলে যাব। সেই থেকে বন্ধুত্ব বুঝতে শুরু করলাম একটু একটু। স্কুলে সবসময় গলাগলি করে হাঁটতাম দুজনে। স্কুল শেষে প্রায় আমাদের বাড়িতে চলে আসতাম। কত যে ধুলোজমা স্মৃতি মাঝে মাঝেই হ্যাঁচকা টানে নিয়ে যায় সেই সব দিনগুলোতে এক মূহুর্তেই।
হাইস্কুলে উঠে বন্ধুত্বের পর যেন শত্রুও চিনতে শুরু করলাম। যারা মেধা তালিকায় আমার পরেই ছিল, তারা বারবারই আমার জন্যে হুমকি হয়ে উঠছিল। পিছনেও ফেলে দিল আমাকে একসময়। তখন মনে হত ওরা মনে হয় আমার শত্রু। কিন্ত যখন স্কুল পেরিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কলেজে গেলাম সবাই, সেই শত্রুতাই যেন আমাদের বেঁধে দিল বন্ধুত্বের কোন এক শক্ত সুতোয়। সেই সুতো এখনো আছে টানটান, থাকবে।
কলেজ জীবনে ঢাকায় নতুন এসে যেন নিজেকে বড় অসহায় লাগছিল। বাবা-মা থেকে প্রথম দূরে থাকা। ধীরে ধীরে একজন দুইজন করে বন্ধু পেতে থাকলাম। আমার একাকী, অসহায় দিনগুলোতে রঙ লাগতে শুরু করল একটু একটু করে। ঘন্টার পর ঘন্টা কার্ড খেলা, পরীক্ষার আগের রাতে সাজেশনের জন্যে দল বেঁধে ছুটোছুটি, স্টেডিয়াম এলাকায় ফুচকা খাওয়া। সেইসব মূহুর্তগুলো এখনো অমলিন।
ভার্সিটি লাইফে এসে নিজেকে আবিস্কার করলাম এক ব্যাস্ত, একঘেঁয়ে জীবনে। প্রতিদিন এত্ত এত্ত ক্লাস, ল্যাব ওয়ার্ক আর ভাল্লাগেনা। আক্ষেপ হতো প্রায়ই, কেন এই সাবজেক্টে ভর্তি হলাম। কিন্তু সেই দিনগুলো পার করার পর এখন বুঝতে পারছি, কি দিনগুলো পার করেছি, কত নানান রঙের দিন ছিল। কত হাজার বার দৌড়েছি সেই কার্জন হল, শহীদুল্লায় হল, ফজলুল হক হল থেকে খন্দকার মুকাররম ভবন পর্যন্ত, কত কাপ চা ঢেলেছি সেলিমের দোকান থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডার ফাঁকে, বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে কতবার পড়ে গেছি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এত্ত বেশি, এত্ত বেশি মিস করব সেই ভার্সিটি লাইফ, কখনো ভাবিনি।
সেই স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি লাইফের বন্ধুরা এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেশের বিদেশের নানান জায়গায়।
আজ এই বন্ধু দিবসে খালি কয়টা কথাই মনে আসে…
ও বন্ধু তোদের, মিস করছি ভীষণ,
তোদের ছাড়া কিছুই, আর জমেনা এখন।
ভালো থাকিস বন্ধুরা… যে যেখানে আছিস।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




