বিয়ে হল দেড় বছর। অনেক চেষ্টার পর ১২ মাসের মাথায় আল্লাহ আমার গর্ভে সন্তান দিলেন। আমাদের আনন্দ তখন দেখে কে? প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত আমার তখন প্রবল ঘোরে কাটে।
কিছু শারীরিক অসুবিধা ছিল তখন আমার। কিন্তু বুঝিনি সেটা কি রকম মারাত্নক হতে পারে। যাই হোক প্রথম তিন মাস ভালোভাবেই কাটলো। এরপর প্রথম সনোগ্রাম করার পর ডাক্তার সেটা দেখেই যা বলল,তাতে আমার আর আমার স্বামীর মাথায় বাজ পরল। উনি বললেন তোমার বেবি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে, অ্যাবোরশন করে ফেলতে হবে। আমি বললাম, কোন কারণ ছাড়াই নষ্ট হয়ে গেল? কী বলছেন আপনি? তখন উনি বললেন যে তুমি আবার সনোগ্রাম কর, দেখ কী হয়........তবে আমার মনে হয় কোন লাভ হবেনা।
আমার মাথা তখন প্রবল ঘুরছে, মনে হচ্ছে এক্ষুণি পরে যাব। এসব কী শুনলাম? এটা কি সম্ভব?
আমি ঐ ডাক্তারের কথা বিশ্বাসই করতে পারছিলামনা, আমাদের বেবি নষ্ট হয়ে গেছে? ও পৃথিবীতে আসতে পারবেনা? আমরা ওকে দেখতে পারবোনা? আমাদের দুজনের রঙিন স্বপ্নের জাল বোনা যার জন্য, মধুর ডাক শোনা ইত্যাদি কল্পনা করা যার জন্য সে আসবেনা?
পরের দিনই আবার সনোগ্রাম করতে যেতাম,কিন্তু হায়!!! একী হল? সন্ধ্যার পর থেকেই আমার ব্লিডিং শুরু হল। সাথে তলপেটে চাপ। আম্মু তাড়াতাড়ি করে অনেক পুরনো এবং বিশ্বস্ত এক ডাক্তারের সাথে এ্যাপয়েনমেন্ট করলেন। আমি প্রথমেই এই ডাক্তারের কাছে যেতে পারিনি কারণ উনার চেম্বার অনেক দূরে, কারও সময়সুযোগই হয়নি আমাকে ওখানে নিয়ে যাওয়ার, আর আগেই বলেছি আমার তেমন কোন সমস্যা ছিলোনা।
যাই হোক উনিও বললেন বেবি নষ্ট হয়ে গেছে.........কালকে দুপুরে আস, ওর অ্যাবোরশন করতে হবে। সারারাত আতঙ্ক আর ভয়ের মধ্যে কাটলো। ভোর থেকে প্রচন্ড পেইন উঠলো, আমার বেবি আমার উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করতে লাগলো বের হয়ে যাবার জন্য। ব্লিডিং ও বেড়ে গেল। আমি তখন ব্যাথায় পাগল, আমার কান্নায় সবার দিশেহারা অবস্হা। আমাদের ড্রাইভার ছুটিতে, আব্বু আরেকজনকে জোগাড় করলেন। গোঙাতে গোঙাতে আধমরা হয়ে হাসপাতালে পৌঁছলাম। সাথে সাথে ঐ ডাক্তার আন্টি আমাকে ওটিতে নিয়ে গেলেন, ভয়াবহ ব্লিডিং হচ্ছে তখন আমার।
আমাকে অপারেশন বেডে ওঠানো হল। আ্যনেসথেশিয়া দিয়ে পুরোপুরি বেহুঁশ করা হল। এরপর যখন হুঁশ ফিরল, আমি তখন পোষ্ট অপারেটিভ রুমে। আমার সব শেষ। প্রচন্ড কষ্টে আমার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। আমি কাঁদতে পারছিলামনা। এতো আদরের বেবি যাকে আমি এতোদিন পেটে ধারন করেছি, সে নেই।
জানিনা আপনাদের কী মনে হচ্ছে....এমনও দেখেছি আমাদের দূরসম্পর্কের আত্নীয়া দুইজনকে যাদের একেবারে বেবি হওয়ার সময় সমস্যা হল, তারপর বেবি মারা গেল। এই ঘটনা আরো অনেক বেশী বেদনাদায়ক।
আমি সেটা বুঝতে পারি, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে যা হল, তার নীল বেদনা এখনো আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। আমি আজো কোনমতেই ভুলতে পারিনা........সারাক্ষণ আমার মনে হয় আমাদের একটা বেবি ছিল, যে তার মাতৃগর্ভে যাত্রা শেষ করার আগেই চলে গেছে। নিজের ভেতর কী রকম যে ফাঁকা ফাঁকা লাগে সেটা কাউকে বোঝাতে পারবোনা কখ্খোনো না কোনদিনও না।
আমার স্বামী প্রতিদিন অফিসে যায়, প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেও দুঃখ ভুলানোর জন্য আমাকে পর্যাপ্ত সময় দেয়। কিন্তু আমি যখন বাসায় একলা থাকি তখন আপনা থেকেই চোখ ভিজে আসে। কীরকম একা এবং নিজের ভেতর খালি খালি যে লাগে।
কী করবো বলেন আপনারাই.........আমার সময় কাটতে চায়না কিছুতেই। সারাটাদিন মন খারাপ থাকে.....কোনকিছুতেই মন বসেনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




