somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জীবনের সবচাইতে বেদনাদায়ক ঘটনা,যা আজো আমাকে কাঁদায়।

২৮ শে অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ে হল দেড় বছর। অনেক চেষ্টার পর ১২ মাসের মাথায় আল্লাহ আমার গর্ভে সন্তান দিলেন। আমাদের আনন্দ তখন দেখে কে? প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত আমার তখন প্রবল ঘোরে কাটে।
কিছু শারীরিক অসুবিধা ছিল তখন আমার। কিন্তু বুঝিনি সেটা কি রকম মারাত্নক হতে পারে। যাই হোক প্রথম তিন মাস ভালোভাবেই কাটলো। এরপর প্রথম সনোগ্রাম করার পর ডাক্তার সেটা দেখেই যা বলল,তাতে আমার আর আমার স্বামীর মাথায় বাজ পরল। উনি বললেন তোমার বেবি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে, অ্যাবোরশন করে ফেলতে হবে। আমি বললাম, কোন কারণ ছাড়াই নষ্ট হয়ে গেল? কী বলছেন আপনি? তখন উনি বললেন যে তুমি আবার সনোগ্রাম কর, দেখ কী হয়........তবে আমার মনে হয় কোন লাভ হবেনা।
আমার মাথা তখন প্রবল ঘুরছে, মনে হচ্ছে এক্ষুণি পরে যাব। এসব কী শুনলাম? এটা কি সম্ভব?
আমি ঐ ডাক্তারের কথা বিশ্বাসই করতে পারছিলামনা, আমাদের বেবি নষ্ট হয়ে গেছে? ও পৃথিবীতে আসতে পারবেনা? আমরা ওকে দেখতে পারবোনা? আমাদের দুজনের রঙিন স্বপ্নের জাল বোনা যার জন্য, মধুর ডাক শোনা ইত্যাদি কল্পনা করা যার জন্য সে আসবেনা?
পরের দিনই আবার সনোগ্রাম করতে যেতাম,কিন্তু হায়!!! একী হল? সন্ধ্যার পর থেকেই আমার ব্লিডিং শুরু হল। সাথে তলপেটে চাপ। আম্মু তাড়াতাড়ি করে অনেক পুরনো এবং বিশ্বস্ত এক ডাক্তারের সাথে এ্যাপয়েনমেন্ট করলেন। আমি প্রথমেই এই ডাক্তারের কাছে যেতে পারিনি কারণ উনার চেম্বার অনেক দূরে, কারও সময়সুযোগই হয়নি আমাকে ওখানে নিয়ে যাওয়ার, আর আগেই বলেছি আমার তেমন কোন সমস্যা ছিলোনা।
যাই হোক উনিও বললেন বেবি নষ্ট হয়ে গেছে.........কালকে দুপুরে আস, ওর অ্যাবোরশন করতে হবে। সারারাত আতঙ্ক আর ভয়ের মধ্যে কাটলো। ভোর থেকে প্রচন্ড পেইন উঠলো, আমার বেবি আমার উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করতে লাগলো বের হয়ে যাবার জন্য। ব্লিডিং ও বেড়ে গেল। আমি তখন ব্যাথায় পাগল, আমার কান্নায় সবার দিশেহারা অবস্হা। আমাদের ড্রাইভার ছুটিতে, আব্বু আরেকজনকে জোগাড় করলেন। গোঙাতে গোঙাতে আধমরা হয়ে হাসপাতালে পৌঁছলাম। সাথে সাথে ঐ ডাক্তার আন্টি আমাকে ওটিতে নিয়ে গেলেন, ভয়াবহ ব্লিডিং হচ্ছে তখন আমার।
আমাকে অপারেশন বেডে ওঠানো হল। আ্যনেসথেশিয়া দিয়ে পুরোপুরি বেহুঁশ করা হল। এরপর যখন হুঁশ ফিরল, আমি তখন পোষ্ট অপারেটিভ রুমে। আমার সব শেষ। প্রচন্ড কষ্টে আমার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। আমি কাঁদতে পারছিলামনা। এতো আদরের বেবি যাকে আমি এতোদিন পেটে ধারন করেছি, সে নেই।
জানিনা আপনাদের কী মনে হচ্ছে....এমনও দেখেছি আমাদের দূরসম্পর্কের আত্নীয়া দুইজনকে যাদের একেবারে বেবি হওয়ার সময় সমস্যা হল, তারপর বেবি মারা গেল। এই ঘটনা আরো অনেক বেশী বেদনাদায়ক।
আমি সেটা বুঝতে পারি, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে যা হল, তার নীল বেদনা এখনো আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। আমি আজো কোনমতেই ভুলতে পারিনা........সারাক্ষণ আমার মনে হয় আমাদের একটা বেবি ছিল, যে তার মাতৃগর্ভে যাত্রা শেষ করার আগেই চলে গেছে। নিজের ভেতর কী রকম যে ফাঁকা ফাঁকা লাগে সেটা কাউকে বোঝাতে পারবোনা কখ্‌খোনো না কোনদিনও না।
আমার স্বামী প্রতিদিন অফিসে যায়, প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেও দুঃখ ভুলানোর জন্য আমাকে পর্যাপ্ত সময় দেয়। কিন্তু আমি যখন বাসায় একলা থাকি তখন আপনা থেকেই চোখ ভিজে আসে। কীরকম একা এবং নিজের ভেতর খালি খালি যে লাগে।
কী করবো বলেন আপনারাই.........আমার সময় কাটতে চায়না কিছুতেই। সারাটাদিন মন খারাপ থাকে.....কোনকিছুতেই মন বসেনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৪৪
৩৯টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×