রেডিও যুগের গান
আমি গান শুনতে পছন্দ করি। আগে একসময় রেডিওতে শুনতাম, পরে ক্যাসেট, সিডি এখন ইউটিউব এবং বিভিন্ন গানের ওয়েবসাইট। রেডিও যুগে যা শোনাতো তা ই শুনতে হতো। সেখানে ব্যান্ডের গানগুলো শোনানো হতো না, তবে আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত চলতো। লালনগীতি, বিজয়গীতি এগুলোও শোনানো হতো। তখন সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লাদের গান আর বাংলা সিনেমার গান সবচেয়ে বেশী দর্শকপ্রিয় ছিল। গান ছাড়া ক্রিকেট-ফুটবল খেলার সময় চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাতের কন্ঠে মধুর ধারাভাষ্য আমাকে বিনোদিত করতো।
ক্যাসেট- সিডি যুগের গানঃ
এই যুগে বিভিন্ন শিল্পীদের একক গান আর ব্যান্ডের গান বাংলাদেশে প্রচন্ড জনপ্রিয় হতে থাকে। কোন শিল্পীর গান হিট হলে বা, ভাইরাল হলে তার জনপ্রিয়তা হয়ে যেতো আকাশছোয়া- হ্যা ভাইরাল শব্দটা এখনকার মত ব্যবহৃত না হলেও তখনও শিল্পীদের গান ভাইরাল হতো। আমার দেখা সবচেয়ে ভাইরাল শিল্পী আসিফ। তার ও প্রিয়া ও প্রিয়া দিয়ে তো পুরোই হিট হয়ে গেলো, এখনো তার গান চলছে। সিনেমার গানে তখনো সেরা এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিনরা। জেমসের প্রথম ক্যাসেট নাকি ফ্লপ ছিলো, শুনলে এখনো হাসি পায়। ইত্যাদির মাধ্যমে উঠে এসেছিলেন শুভ্র দেব। পরে গান গেয়ে তিনি নাকি প্রচুর টাকা কামিয়েছেন। প্রচুর নতুন শিল্পী এই যুগে এসেছেন- তাদের অনেকে এখনো আছেন, অনেকে নেই।
ট্রানজিশন যুগের গান
এই যুগে আমাদের মতো শ্রোতারা কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে গান নিয়ে আসতো- ১৫ টাকায় ফুল মেমোরি ১ জিবি। আবার যাদের আমাদের মতো সুযোগ ছিলো তারা অন্যদের কম্পিউটার থেকে এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে গান ডাউনলোড করে বিশাল কালেকশন বানিয়ে রাখতো। Blank সিডি বাজারে কিনতে পাওয়া যেত, এখনো যায়। সেইসব সিডিতে আমরা গান কপি করে বিশাল কালেকশন বানিয়ে রেখে দিতাম, শুনতাম ইচ্ছামত। এই যুগ ছিল শিল্পীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ যুগ, এই সময় তারা টাকা পেত না। পাইরেসির কারণে কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহারে অজ্ঞ একটা সিস্টেমের কারণে শিল্পীদের ভুগতে হয়েছে। ইউটিউব তখন গুগল কিনে নেয়নি, যে যা খুশী আপলোড করতো- copyright এর বালাই ছিলো না। এই যুগ নিয়ে আর বেশী কিছু বলবো না।
বর্তমান যুগের গান
এই যুগ শিল্পী এবং আমাদের মত শ্রোতা সবার জন্যই ভালো। প্রযুক্তি এগিয়েছে, আমরা ব্যবহার করছি। গান এখন আর সিডি/ক্যাসেটে শুনি না, কম্পিউটারে বিশাল কালেকশন রেখে জায়গা নষ্ট করার প্রয়োজন পড়ে না। ব্রডব্যান্ড এসেছে, ইন্টারনেটের দাম কিছুটা হলেও কমেছে, স্পিড বেড়েছে এখন গান শুনতে সমস্যা নেই। ইউটিউব বা, বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে আমরা গান শুনি। রেডিও, ক্যাসেট, সিডি এবং ইউটিউব সব যুগের গানই এখন পাওয়া যায় এবং copyright এর যথাযথ প্রয়োগের ফলে শিল্পীরা লাভবান হোন। ভবিষ্যতে এই ব্যাপারটা আরো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রন করা যাবে আমি নিশ্চিত।
আমার প্রিয় কিছু গান যা আমি শুনিঃ
কয়েকটা ভাগে ভাগ করেছি- পুরনো দিনের গান, রবীন্দ্রনাথের গান, নজরুলের গান, ব্যান্ডের গান এবং নতুন মিউজিক ভিডিও।
পুরনো দিনের গানঃ Seylon Music Lounge এর ইউটিউব চ্যানেলে কিছু পুরনো গানের নতুন ভার্সন দেখা যায়, তাছাড়া মাহতিম সাকিব কিছু পুরনো গান নতুন করে গায়, আরো অনেকেই গায়। নতুন করে গাওয়া গানগুলো ভালো লাগে কারণ, প্রযুক্তি এখন এগিয়ে(রেকর্ডিং সহ সবকিছু উন্নত)। পুরনো দিনের শিল্পীরা বেশী আবেগ দিয়ে এবং বেশী ভালো মাণের গান গাইলেও নতুনগুলো ভালো লাগবে। এরকম কিছু গান হচ্ছে-
হয়তো তোমার জন্য- মিফতাহ জামান
কে প্রথম কাছে এসেছি কে প্রথম ভালবেসেছি
এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়- সালমার কন্ঠে গীতা দত্তের গান
তখন তোমার একুশ বছর – নিশিতা বড়ুয়া
আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাবো
রবীন্দ্রনাথের গানঃ আমার All Time Favorite হচ্ছে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, এছাড়া TagorsCover নামে ইউটিউবে একটা চ্যানেল আছে, ওদের গান খুবই ভালো লাগে।
ভালোবেসে সখি নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো
এ জীবন পূর্ণ করো দহন দানে
আনন্দধারা বহিছে ভূবনে
মন মোর মেঘের ও সঙ্গী উড়ে চলে দিক দিগন্তেরও পানে
Tagore And The West Medley
করবারো ভেবেছিনু- তাপস ফিচারিং রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
নজরুলের গানঃ আমার এখনো ফিরোজা বেগমের কন্ঠে গাওয়া গান ভালো লাগে। ফিরোজা বেগমের ছেলে শাফিন আহমেদের গাওয়া গানগুলোও অনবদ্য। এছাড়া ফেরদৌস আরা, অনুরাধা পাড়োয়াল আরো অনেকের গাওয়াই ভালো লাগে।
আমি বনফুল গো নজরুল গীতি- ফেরদৌস আরা
মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম- ফেরদৌস আরা
প্রিয় এমনো রাত যেন জায়না বৃথাই- নজরুল
এই রাঙ্গা মাটির পথে লো মাদল বাজে বাজে বাঁশের বাঁশি
চমকে চমকে ধীর ভীরু পায়- অনুরাধা পাড়োয়াল
হলুদ গাঁদার ফুল এনে দে নইলে বাধবো না চুল- অনুরাধা পাড়োয়াল
এলো এলো রে বৈশাখি ঝড় ফিরোজা বেগম
ব্যান্ডের গানঃ GaanBangla টিভি এবং ইউটিউব চ্যানেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছি না। জেমস, আইয়ুব বাচ্চু সহ আরো অনেক ভালো ভালো শিল্পীকে এনে তাদের জনপ্রিয় গানগুলোর ভেতর থেকে একটা দুইটা তাদের স্টুডিওতে এনে গাইয়েছেন, এবং অসাধারণ হয়েছে। এছাড়া মূল যে রেকর্ড ছিলো সেটা তো প্রমাণিত ভালো গান, সেগুলোতো আমাকে টানেই।
মাইলস এর ফিরিয়ে দাও গান
অনিকেত প্রান্তর- আর্টসেল এর গান
শিরোনামহীন ব্যান্ডের গান রোমন্থন
আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো তুমি আমার- জেমস
আইয়ুব বাচ্চুর গান গতকাল রাতে
মাইলস এর গান স্বপ্নভঙ্গ
মাইলসের গান ধিকি ধিকি আগুন জলে
সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে – আইয়ুব বাচ্চু
মিউজিক ভিডিও বা, বিভিন্ন ধরণের জনপ্রিয় বাংলা গানঃ হাবিবের ভালোবাসবো রে কিংবা, বালামের লুকোচুরি, পান্থ কানাইয়ের সামনের মাসে তোমায় একটা নৌকা কিনে দেবো। এগুলো evergreen , ভালো গান সবসময়ই শুনতে ভালো লাগে।
ভালোবাসবো বাসবো রে তোমায় যতনে- হাবিব ওয়াহিদ
বেহায়া মন আমার- চিশতি বাউল
মরেই যাবো রে চিরকুট এর গান- সুমি আপা
বালামের গান লুকোচুরি
সামনের মাসে তোমায় একটা নৌকা কিনে দেবো- পান্থ কানাই
আমার প্রিয় এই গানগুলো হয়তো আপনাদেরও অনেকের প্রিয়। ইচ্ছা হলো নিজের ভালো লাগা গানগুলো সবার সাথে শেয়ার করি, তাই সবার সাথে আজকে আমার ভালো লাগা গানগুলো শেয়ার করলাম। যুগ যুগ ধরে চলতে থাকুক বাঙ্গালীর গান শোনা, প্রযুক্তির পটপরিবর্তন ঘটবেই। আমারাও এগুবো প্রযুক্তির সাথে, গান ও বেচে থাকবে আজীবন।
This content was published before at tutorialsbangla.com
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৫