somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের কোলে রোদ(১০ পর্ব একসাথে)-জানি কেউ পড়বে না,তবু দিলাম

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রফিকদের বাড়ির সামনে দুটো কুকুর ঝগড়া করছে। মেজফুপু
বলে, ভাদর-আশিনের কুকুর বাঘের চেয়ে মারাত্মক।
হায়দার থামলো। তাকে থামতে দেখে বিরক্ত হলো রোমিলা। বলল,
কি হলো ভয় পেলেন নাকি?
--- হ্যাঁ, পেয়েছি। তবে কুকুরের কামড়ের চেয়ে ইনজেকশনের ভয়
বেশী। বলে মৃদু হাসলো হায়দার।
রোমিলা বিরক্ত হয়ে বলল,নিন, সরুন,আমাকে যেতে দিন, আমার
দশা এখন কুকুর-বেড়ালের চেয়ে খারাপ। আমি আগে যাই,কামড়ায়
তো আমাকেই কামড়াক।
এতক্ষণ ঝগড়া করছিল দুটি মাত্র কুকুর। এখন তাদের ডাক শুনে
ছুটে এসেছে আরো কয়েকটি। তারা বিভিন্ন ভাবে হম্বিতম্বি করে
জানান দিচ্ছে, আমরা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পিছপা নই।
হায়দার অবাক হয়ে দেখল, রোমিলা নামের মেয়েটি বেশ
সাহস ভরে তাদের পাশ কাটিয়ে গেল।
রফিকদের বাড়ির সামনের রাস্তাটা বেশ ছোট। গলিপথ বলাই ভাল।
সেখানে কুকুরদের বিক্রম জাহির হচ্ছে অনেকখানি জায়গা জুড়ে।
দাঁত,নখ ও তর্জন-গর্জনের মাধ্যমে কে কার ঘাড়ে পড়ে জায়গা
বদল করছে বোঝা মুশকিল।
হায়দারের হতভম্ব দশা দেখে রোমিলা হাসছে। তার হাসি দেখে
মনে মনে যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছে হায়দার। মনে হচ্ছে, ওই মেয়েটির
কুৎসিত হাসি দেখার চেয়ে কুকুরের কামড় খাওয়া শ্রেয়।
মন্ত্রমুগ্ধের মত যুদ্ধরত কুকুরদের অতিক্রম করে গেল হায়দার।
তার আগে অবশ্য বেশ কয়েকবার দোয়া-দরুদ পড়ে নিয়েছে
সে । স্বল্প পরিচিত মেয়েটির হাসিটা তার একেবারে সহ্য হচ্ছিল না।
---দেখলেন তো, ভয় করলে আরো অনেক ভয় আপনাকে আঁকড়ে
ধরবে।
---হুম। বলে চুপ মেরে গেল হায়দার। মনে মনে বলল, তুমি যে খুব
সাহসী মেয়ে, সে তো তোমার চালচলন দেখে বুঝেছি। এখন তোমাকে
ঘাড় থেকে নামাতে পারলে বাঁচি।
--- আর কত হাঁটতে হবে বলুন তো, বাবারে পা দুটো বোধয় খসে
পড়বে এবার।
--- এই তো এসে গেছি, শিবমন্দিরের পাশে তপতীদের বাড়ি। সোজা
চলে যান, এই রাস্তা ধরে।
--- বাহরে আপনি যাবেন না?
বিস্মিত স্বরে বলল রোমিলা।
--- আমি, আমি গিয়ে কি করব ?
--- আপনি কিছুই করবেন না, আমি কি করছি সেটা দেখবেন, এক কাপ
চা খাবেন।
আল্হাদী সুরে বলল রোমিলা।
--- বাস থেকে নামার সময় এমন কোন কথা ছিল না। তাই আমি আপনার
সঙ্গে যাচ্ছি না। আর চায়ের কথা বলছেন, আপনার ভাগ্যে চা আছে কিনা
দেখুন, কনজুস হিসেবে তপতীর বাবার এলাকা জুড়ে নামডাক আছে।
--- বেশ যান তাহলে।
--- হ্যাঁ, যাই। বলতে গিয়ে বুকে হালকা ব্যথা অনুভব করল হায়দার।
ডানদিকের গলিপথ ধরে ধীর পায়ে হেঁটে চলল সে। একটু আগে অব্দি যে
মেয়েকে তার অসহ্য মনে হচ্ছিল, এখন তার সঙ্গ ছাড়তে কেন এমন কষ্ট
হচ্ছে বুঝতে পারছে না হায়দার।
সে পেছন ফিরে দেখল না, রোমিলা তার ডাগর দুটি চোখ মেলে তার দিকে
চেয়ে আছে অপলক।
***

সকাল থেকে বাম চোখটা কিরকির করছে। লক্ষণ ভাল না।হারাধন
জ্যোতিষী বলেছিল,উনপঞ্চাশ বছর বয়সটা একটু সামলে সুমলে চলো
শিবু, কোষ্ঠী অনুযায়ী ওই বছরটায় তোমার জীবনে অনেক ঘটনা ঘটবে।
--- মরেটরে যাব নাকি ঠাকুর?
---বালাইষাট মরবে কেন,জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, তিন বিধাতা নিয়ে, এ বিষয়ে কোন
ভবিষ্যৎবানী খাটে না।তবে আমার বিচারে সংকটগুলো মৃত্যু-সংক্রান্ত নয়, ওই
বয়সে তোমার এমন কিছু পরিবর্তন হবে, যা দেখে তোমার মনে হবে,এই শিবু
কি সেই শিবু?
বাবার লেখা ডাইরীতে উল্লেখ আছে আশ্বিনের তের তারিখে শিবনাথ মন্ডল
ওরফে শিবুর জন্ম। আজ সেই দিন। বাড়ির কেউ জানে না। কৃপণ হিসেবে খ্যাত
শিবু মন্ডল আজ উনপঞ্চাশ বছর বয়সে পা দিয়েছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শিবনাথ অবাক হয়েছে। অন্যদিন হলে সে বলতো,
আমি কি সাহেব হয়ে গেছি যে, খালিপেটে বেড-টি খাব!
সদ্য-স্নাত তপতীকে দেখে মন কেমন ভাল হয়ে গেল শিবুর। চায়ের কাপটা
হাতে নিয়ে বলল, এত সকালে চা কেন মা?
---আজ আমার খুব আনন্দের দিন বাবা। স্বপ্ন দেখলাম আমার এক বন্ধু
আসছে। খুব ভাল স্বপ্ন।রোজ তো গুড়-জল খাও,আজ না হয় আমার খুশিতে
একটু চা খেলে।
--- বন্ধুটি কি কলেজের?
--- হোস্টেলে আমার রুমমেট ছিল। খুব ভাল মেয়ে। বহুদিন দেখা নাই।
--- স্বপ্ন তো সবসময় সত্যি হয় না মা। এই আমার কথায় ধর না, তোর
জন্যে কতদিন ধরে ভাল পাত্রের সন্ধান করছি, একটাও পেলাম কি, পেলাম
না।যারা আসছে তারা সব কসাই।এদিকে অল্প বয়সে তোর বিয়ে দেব বলে,
এম-এ টাও পড়তে দিলাম না। আজ আপশোষ হচ্ছে।
বলতে বলতে সত্যিই হতাশ হলো শিবু। সকালবেলা অনেক গুলো মিথ্যে কথা
বলে ফেলেছে সে। প্রথম মিথ্যে,মেয়েকে সে এম-এ পড়তে পাঠায়নি পয়সা
খরচের ভয়ে,খরচা করে পড়ানোর পরে মেয়ের জন্যে আরো দামী পাত্র খুঁজতে
হবে।দ্বিতীয় মিথ্যে, তপতীর বিয়ে যে সব সমন্ধ এসেছিল, তার অধিকাংশ বাতিল
হয়েছে শিবুর নিজের ইচ্ছায়, বেশী খরচ করে মেয়ের বিয়ে দিতে একদম নারাজ
সে।
---তাতে কি হয়েছে বাবা, তুমি যা ভাল বুঝেছো, করেছো। আমি আমার স্কুল নিয়ে
বেশ আছি।
---এই তো আমার লক্ষী-মা, তোর স্কুলটা এবার চালাঘর করে দেব। গাছতলায়
ছেলে পড়াস আমার খুব খারাপ লাগে।
বলতে-বলতে বেশ মুষড়ে পড়ল শিবু। তপতীর স্কুল নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত সে।
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কোন মানে হয় না। গরীব-গুর্বোদের
ছেলেরা লেখাপড়া শেখার সুযোগ পাচ্ছে বলে দেশে রাখাল-বাগালের আকাল
পড়ে গেছে।এতদিন এমনই বলে এসেছে শিবু। আজ নিজের মুখে উল্টো সুর
শুনে সে হতচকিত।বিমর্ষ।হারা-গুনীনের কথা কি ফলতে শুরু করল নাকি?
---আমার স্কুলের চালা পরে হলেও হবে, তুমি একটু খাসির মাংস আনো তো
বাবা।
--- তোর কি সত্যিই বিশ্বাস, তোর বন্ধু আসবে?
টাকা-পয়সা খরচের আশঙ্কায় পুরোন শিবু জেগে উঠছে মনের ভেতর।
--- নাই-বা এল, আমরা খাব। কতদিন মাংস খাইনি বলো তো।
---ঠিক কতদিন বল তো?
---গত বছর কালীপুজোয়, মন্দির থেকে এসেছিল।
---ঠিকই বলেছিস, আসলে আমি সাংঘাতিক রকমের কেপ্পন হয়ে গেছি
বুঝলি, তবে আজ আমি কেপ্পন খেতাবটা ত্যাগ করতে চললাম। এক্ষুনি
বাজারে যাব, দু-কেজি মাংস কিনব, ভাল মাছ পেলে নেব।মিষ্টিও আনবো।
শুধুমাত্র তোর খাতিরে।
তপতী হাসিমুখে বলল, যা তোমার খুশি।তবে যাবার আগে একটু মিষ্টিমুখ
করে যাও। মা পায়েস তৈরী করেছে। আমি নিয়ে আসছি।
হাসিমুখে বাড়ি থেকে বের হলো শিবু। পকেট-ভর্তি টাকা।বুক-ভর্তি বাতাস।
টাকাগুলো আজ অন্যদের পকেটে ঢুকে যাবে,ভাবতে খারাপ লাগছে না।শিবুর
নাম হয়তো এবার কৃপণদের তালিকা থেকে বাদ পড়বে,পড়ুক।
সদর দরজায় পা দিয়ে হোঁচট খেল শিবু।
পাঁচ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে যেতে হবে বাজারে,প্রথমেই বাধা।
জিনসের প্যান্ট আর টাইট গেঞ্জী পরা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনে।
বলছে, কাকাবাবু ভাল আছেন?
নিজের ছেলেকে গোবর-গনেশ মনে করে শিবু। এই মেয়েটা তার খোঁজে
আসেনি তো? মুখ কুঁচকে বলল,হ্যাঁ, কিন্তু তোমাকে তো চিনলাম না?
---আমি রোমিলা, তপতীর বন্ধু।
--- ওহ, তপতীর বন্ধু, তাই বলো, আমি ভেবেছিলাম আমার ছেলের,যাক
গে সে-কথা,তুমি বাড়ির ভেতরে ঢুকে যাও মা। আমি তোমার জন্যে মাংস
আনতে যাচ্ছি।
---আমার জন্যে মাংস!
--- হ্যাঁ, তোমার জন্যে, তপতী আজ ভোরে স্বপ্ন দেখেছে তুমি আসবে, তাই
আমাকে বাজারে পাঠালো, যাও মা, যাও, ভেতরে যাও।
রোমিলাকে অবাক করে দিয়ে সাইকেলে চড়ে বসল শিবু।
***
সকাল থেকে ঝাঁটা হাতে বাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাবেয়া।মুখে বলছে, একবার বাড়ি ফিরুক সে হারামজাদা,
ওকে যদি ঝেঁটিয়ে বিদেয় না করি তবে আমি হাফেজ-সাহেবের বিটিই লয়।
সকালবেলা প্রতিবেশীরা এসেছে। বৃত্তান্ত শুনেছে। বলেছে, অমন অলক্ষুনে ছেলেকে বিদেয় করা
সমুচিত কাজ।
রাবেয়ার গলার ঝাঁজ তাতে আরো বেড়েছে, অলক্ষুণে বলে অলক্ষুণে জন্মের আগে বাপকে খেয়েছে।
জন্ম দিতে গিয়ে মা মলো। আমি যদি-বা মায়া করে নিয়ে এলাম, কোলেপিঠে করে মানুষ করব বলে,
আমার মানুষটা মরে গেল।আমি সব সহ্য করেছি, কিন্তু আর সহ্য করব না।
পড়শীরা সায় দিয়েছে, তা-তো বটেই, তা-তো বটেই, অমন ছেলের মুখ দেখাও পাপ, খালা কত
কষ্ট করে লেখাপড়া শেখাল।কোথায় চাকরী-বাকরীর চেষ্টা করবে তা নয়,কার অসুখ, কার বিসুখ
এই নিয়েই পড়ে আছে।
রাবেয়া তাতে আরো উৎসাহিত হয়। বলে, ওসব তো আমি কত সহ্য করি, আমার বাক্স খুলে টাকা
নিয়ে পালায়, সেই টাকায় লোককে হাসপাতালে ভর্তি করে, ওষুধ কিনে দেয়, আমি টের পায় না
ভেবেছো,সব টের পায় কিন্তু কিচ্ছু বলি না, হাজার হোক মা-মরা ছেলে, আমাকেই তো মা জানে!
কিন্তু আজ যা স্বপ্নে দেখলাম তা যদি সত্যি হয় তবে আমি ওকে তেজ্যপুত্তুর করবই করব। তা যদি
না করি তবে আমি হাফেজ সাহেবের বিটিই লয়!
পড়শীরা মহা উৎসাহে বলে, তা-তো বটেই, তা-তো বটেই, এমন অন্যায় সহ্য করা যায়, মানুষ
কত সহ্য করে, কেনই বা এত সহ্য করবে?
রাবেয়া তাতে খুব একটা কান দেয় না। বলে, কতদিন ধরে বলছি, এবার একটা বিয়ে কর বাপধন,
নতি-পোতার মুখ দেখে বুক জুড়ায়, শান্তিতে মরি। বাপধনের আমার গরজ। বলে কিনা, আমার মত
বেকারকে কে মেয়ে দেবে মা? হলিই-বা বেকার, ভিখারী তো আর নোস, আল্লার রহমতে আমার
এখনও কিছু জমিজমা আছে, সোনাদানা এককণাও ভাঙিনি, সে-সব কি কবরে নিয়ে যাব?
--- তা-তো বটেই, তা-তো বটেই, সোনাদানা নিয়ে কে আর কবরে যায়, কখনও কি গেছে?
--- যায় না মানে, আলবৎ যায়, মিশরের রাজারাণীরা মরার পরে কবরে সোনাদানা সহ গেছে।
--- হুঁ, হুঁ, তা-ও ঠিক, আপনেও তাহলে তেমন কিছু করেন।
--- হুম, তাই করব ভাবছি। তবে তার আগে হারামজাদাকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করব। ভোরবেলা স্বপ্নে
দেখি কিনা, বাপধন আমার বাড়ি ফিরেছেন, সঙ্গে একটা ভিন্-জাতের মেয়ে!
পড়শীরা বৃত্তান্ত শুনে নানা রকম শলা-পরামর্শ দিয়ে নিজের নিজের বাড়ি ফিরে গেছে। তারা কান
খাড়া করে থাকছে, কখন রাবেয়ার আর্ত-চিৎকার শোনা যায়। যদি শোনা যায় তবে বুঝতে হবে
ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়।
বেলা গড়িয়ে যায় রাবেয়ার গলার স্বর খাদে নেমে আসে। শেষমেষ সে কাঁদতে শুরু করে, ও বাপধন
কোথা গেলি তুই, তাড়াতাড়ি ফিরে আয়, মাকে ছেড়ে সাত-সাতদিন বিদেশ-বিভুঁইয়ে পড়ে থাকতে
তোর কি মায়া হয় না।
কাঁদতে-কাঁদতে রাবেয়া একসময় শুনল, কি হলো মা, অমন করে কাঁদছো কেন, স্বপ্ন দেখলে বুঝি
আমি মরে গেছি?
বোনপোর কথায় সম্বিত ফিরল রাবেয়ার। প্রথমে সে চোখের জল মুছে হতচকিত হয়ে এদিক-সেদিক
তাকাল, দেখল, সে সত্যিই জেগে আছে কিনা। নিশ্চিত হয়ে সে বলল, আয় বাপধন আমার বুকে
আয়, তা আমার সে মা লক্ষী কই?
--- মা লক্ষী, কে মা লক্ষী?
--- কেন, আমি যাকে স্বপ্নে দেখলাম, জিনসের প্যান্ট,গেঞ্জী পরে তোর সাথে-সাথে আসছিল।
--- তুমি দেখেছো?
--- হ্যাঁ, দেখেছিই তো,কুকুরের ঝগড়া অব্দি দেখেছি, তুই ভয় পেয়ে কেমন সিঁটিয়ে গেলি আর
মেয়েটা কেমন সাহস ভরে হেঁটে গেল।
--- তারপর?
---তারপর তো আর মনে পড়ছে না বাপধন, আসলে বয়স হয়েছে তো, দিনের কথায় সব মনে
থাকে না, তা এ -তো রাতের স্বপ্ন।
রাবেয়ার কথায় হায়দার অবাক। তার ধারণা পাড়ার কোন ফাজিল ছেলে তাকে আর রোমিলাকে
কুকুরের ঝগড়া পার হতে দেখেছে। সেই এসে খালাকে রাঙিয়ে-রাঙিয়ে বলেছে। খালা যেটা এখন
স্বপ্ন বলে চালাতে চায়ছে।
মৃদু হেসে হায়দার বলে, মা, তোমার আব্বা হাফেজ ছিল, জ্বিন নামাতে পারতো, সে-ই এসে
এসব বৃত্তান্ত দিয়ে যায় তোমাকে, তা-ই না? তা তোমার সেই জিন-চাচার কাছে দরবার কর,
ওই বদ-মেয়েটি কেন আমার সাথে শেষ পর্যন্ত এল না, কোথায় গেল।
--- এই দেখ, বাপধনের আমার রাগ হয়ে গেল, আমি কি আমার জিন-চাচার কথা বলেছি?
আমি তো শুধু ভোরের স্বপ্নের কথা বলি, রাগ করিস না বাপধন, চল, হাতমুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে
নিবি, মুখচোখ একেবারে শুকনো হয়ে গেছে।
কলতলায় হাত-পা ধুতে-ধুতে হায়দারের মনে হলো, খালা হয়তো মিথ্যে বলছে না, এর আগেও
অনেকবার খালা ভোরে স্বপ্ন দেখেছে, হায়দার তার বাক্স থেকে কিভাবে, কখন, কত টাকা সরিয়েছে
সব বলে দিতে পারে খালা। কি-ভাবে পারে কে জানে।
*
রোমিলা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, তারমানে তুই বলছিস স্বপ্নটপ্ন সব মিছে কথা?
অতসী হেসে বলল, হ্যাঁ, ওটা স্বপ্ন নয়, বানানো গল্প।
----তবে যে তোর বাবা বললেন, তুই আমাকে স্বপ্নে দেখেছিস,তাই তিনি মাংস আনতে যাচ্ছেন?
---উনি আমার কাছে যেমন শুনেছেন, তেমন বলেছেন।
--- তার মানে?
--- এই তো শুরু হল তোর গোয়েন্দাগিরি,স্বভাব দেখছি মলেও যাবে না। শোন তবে আসল গল্প,
আজ আমার বাবার জন্মদিন। আমি দাদুর ডাইরী পড়ে জেনেছি। বাবা হচ্ছেন এই এলাকার
ডাকসাইটে কৃপণ। তিনি ছেলেমেয়ের জন্মদিনে এক পয়সা খরচ করেন না। নিজের জন্মদিনের কথা
তাই কাউকে ভুলেও বলেন না। এদিকে আমার মাথায় ভূত চাপল, বাবার জন্মদিনে আনন্দ করব।
ভাইকে দিয়ে গাছ থেকে নারকেল পাড়ালাম। নিজে গরুর দুধ দুইলাম।মাকে পায়েস তৈরী করতে
দিয়ে চা নিয়ে চললাম বাবার বৈঠকখানায়। সেখানে তাকে বললাম,বন্ধুকে স্বপ্ন দেখেছি, সে আসছে।
বাবা বিশ্বাস করলেন। থলে নিয়ে বাজারে ছুটলেন।
--- সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু আমি হঠাৎ হাজির হলাম কেন। আমার তো দার্জিলিং অব্দি রিজার্ভেশন
ছিল, আমি কি তোর বানানো গল্পের টানেই নেমে পড়লাম?
--- হবে হয়তো। টেলিপ্যাথী বলে একটা কথা বইয়ে পড়ছি,শয়তানকা নাম লিয়া আর শয়তান হাজির।
দুই বন্ধু হাসতে শুরু করল। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল বাগানে। তাদের হাসির শব্দে বাগানের গাছগুলি
পাতা নড়িয়ে দুলে উঠল। ডানার ঝাপটা মেরে পাখি উড়ল। ফুলের হাসি প্রতিভাত হল সুর্যের আলোক রেখায়।
তপতী একসময় অবাক হয়ে দেখল, ঘাসের উপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে রোমিলা। অদ্ভুত মেয়ে। খেয়ালী।
ঘুমিয়ে আছে যেন ছোট্ট শিশুটি।
#

অতসী এক সময় অবাক হয়ে দেখল, বাগানের ওপাশে উঁকি মেরে কেউ তাদের
দেখছে। হাসল সে। বলল, অত লজ্জা করার কিছু নাই, আমার বন্ধুকে দেখবি
যদি এখানে আয়।
গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল গনেশ। বিব্রত মুখে দাঁড়াল অতসীর সামনে।
অতসী হাসতে-হাসতে বলল, কি-রে আমার বন্ধুকে পছন্দ হয়েছে?
--- ধেৎ, কি যে তুমি বল না দিদি!
---পছন্দ হয়েছে কিনা বল, তোর ওই গানের মেয়ের চেয়ে তো ঢের সুন্দর কি
বলিস?
ধপাস করে ঘাসের উপর বসে পড়ল গনেশ। বলল, আমি কিন্তু পালাব এবার।
---কোথায় যাবি, তোর সেই গান-সুন্দরীর কাছে?
--- ওর কাছে তো হায়দারদা গেছে।
বুকের মধ্যে তীর বিঁধলে হরিণী যেমন তাকায় তেমন দৃষ্টিতে গনেশের দিকে
তাকাল তপতী।বলল, কি বললি?
যা জানি তাই বললাম। স্কুলের ফান্ডের জন্য আবার যাত্রাপালা হবে।নাটকের
নাম ‘পলাশীর যুদ্ধ’।তাই হায়দারদা বায়না করতে শহরে গেছে।
--- পলাশীর যুদ্ধ হোক, আর বক্সারের যুদ্ধ হোক, তুই যেন আবার ওই
মেয়েটার খপ্পরে পড়িস না, নইলে বাবা কিন্তু আবার কুরুক্ষেত্র বাঁধাবে।
---দিদি, তুমি না, আমাকে শুধু লজ্জা দাও, কতবার বলেছি শিউলীকে
আমি ভুলে গেছি। তাছাড়া হায়দারদা তো বলেছে, অন্য কোন মেয়েকে
আনবে এবার।
--- তোদের দাদা এবার কি রোল করবে?
--- সিরাজের রোলে দাদা ছাড়া কাউকে মানায় নাকি।
---বাপরে আমার দাদা-ভক্ত হনুমান,পলাশডাঙার শচীন রায় কি খারাপ
অভিনয় করে নাকি, কত জায়গায় সোনার মেডেল পেয়েছে, তাকে
আনলে কি ক্ষতি হত শুনি?
---দাদা তো তাই বলছে, শচীনবাবুকে আনবো, লোকে ভিড় করবে, ভিন
গ্রাম থেকে চাঁদা পাব বেশী।কিন্তু আমাদের ইয়াং স্টার ক্লাবের ছেলেরা
শুনছে না। বলছে, সে পালার আসরে যা হয় হবে, তুমি এখন রিহ্যাসাল
চালাও।
--- আর তোদের দাদা রিহ্যাসেল করছে রেগুলার?
--- করছেই তো, দাদা না থাকলে রিহ্যাসালই হয় না, এই তো তিনদিন হল
শহরে গেছে, রিহ্যাসালও বন্ধ।
কথা বলতে বলতেই বাগানের ওপাশ থেকে কেউ একজন হাঁক দিল,গনেশ,
ও গনশা।
---হ্যাঁ, বল।
---শুনেছিস, দাদা ফিরেছে?
---তাই নাকি, তুই দাঁড়া আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।
বলে উঠে দাঁড়াল গনেশ। তারপর ছুটে গেল যেন বাগান পেরিয়ে রাস্তার দিকে। তার
চলে যাওয়া দেখতে দেখতে তপতী বলল, দাদা ভক্ত গোবর গনেশ!
তখনই সে দেখল তার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রোমিলা। বলল, কি-রে
তোর ঘুম ভেঙে গেল?
--- হুঁ, ভাঙল। ভাঙল বলেই তো জানতে পারলাম, দাদার প্রতি ভাইয়ের যা ভক্তি,
তারচেয়ে বেশী ভক্তি ভাইয়ের দিদির।
--- এই, কি যে তুই বলিস না,চল ভেতরে গিয়ে দেখি মা রান্নার কি কতদূর করল।
---রান্না আমি আধসেদ্ধ হলেও খেতে পারি, কিন্তু কৌতুহল হলে সেটাকে চেপে রাখতে
পারিনা। ঘটনা কি সত্যি করে বল।
তপতী ম্লানমুখে বলল, ঘটনা কিছুই নয় রে, সবই মনের কল্পনা,ছেলেটার আজ অব্দি
আমাদের বাড়ির চৌকাঠ মাড়ায়নি।
--- কেন বল তো?
--- রাতদিন লোকের উপকার করে বেড়ায়, তাই এদিকে তাকানোর ফুরসৎ নাই।
--- আমি কি কাকুকে কথাটা জানাবো?
---কোন লাভ হবে না।
---কেন?
---ছেলেটা মুসলমান।



*
হামিদ মিঞার বারান্দার এক পাশে চুপ করে বসে আছেন
শিবু।চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। শিবু এদিক-ওদিক তাকিয়ে
পাঞ্জাবির হাতা তা মুচছেন।
প্রবাদ আছে, কৃপণের অশ্রু পয়সা ছাড়া ঝরে না।
এই এলাকার প্রবাদ প্রতিম কৃপণ শিবু মন্ডলকে দেখলে
এই প্রবাদ যারা আওড়ায় তাদের ভুল ভাঙতো।
হামিদ মিঞা সহপাঠী ছিলেন শিবুর। আজ সকালে
ইন্তেকাল করেছেন।খবরটা পেয়ে বুক ধড়াস করে উঠেছিল
শিবুর, এত তাড়াতাড়ি চলে গেল হামিদ?
গতকাল শিবু যখন বাজারে যাচ্ছিলেন তখনই দেখা হামিদের
সঙ্গে, সাইকেলে বাজার থেকে ফিরছিল।
সাইকেল থামিয়ে দুজনে একটু হাঁফ নিয়েছেন। বট গাছের নিচে
বসে দু-দন্ড জিরিয়ে নিয়েছেন। শিবুর দিকে সিগারেট এগিয়ে দিতে
দিতে বলেছেন,এতদিন যা করলাম সবই ভুল মনে হচ্ছে-রে।
হামিদের সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দেওয়া দেখে চমকে উঠে
ছিলেন শিবু।এখন কথা শুনে তিনি নিশ্চিত হলেন,পরিবর্তন এলে
সবার মনেই আসে।বললেন,কেন ভুল কেন?
---ছেলেগুলো দেখছি ভাল রকম বিগড়ে গেছে,হাট-বাজারও আসতে
চায়ছে না। এতদিন তো আমিই করলাম, আজ একটু গা-হাত-পা
ম্যাজম্যাজ করছে,বললাম,তোরা কেউ যা। বড় বলে,মেজ যাক,মেজ
বলে,মাথায় লাগছে সেজ যাক।সবারই নিজের নিজের অজুহাত। তাই
নিজেই চলে এলাম।
---তা ভাল করেছিস,কি আনলি বাজার থেকে?
---দু-কেজি খাসির মাংস,আলু,কফি-টমাটো।ছেলেদের কথা ভেবে
অনেক কিপটেমি করেছি,এবার ভাবছি যা খেতে ইচ্ছে হয় খাব।
---ঠিকই তো, তোর ছেলেরা তো ব্যবসা-পাতি করছে,এখন তো
তোর আয়েশের সময়।
তখন শিবু কল্পনাও করেননি, একদিনেই আরাম-আয়েশ শেষ হয়ে
যাবে হামিদের।
হামিদের নাকি স্ট্রোক হয়েছিল।ছেলেরা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা
নাকি চিন্তাও করেনি।পড়শীরা বলাবলি করছে অনেক কথা। তার মধ্যে
কোনটা সত্যি,কোনটা মিথ্যে বোঝা মুশকিল। তবে সবই যে বানানো
নয় তা বোঝা যাচ্ছে, ছেলেদের বর্তমান আচরণে।
গাঁ-ভিন গাঁয়ের শ-পাঁচেক লোক জমা হয়েছে,তাদের এখনও এক
গ্লাস পানি খেতেও বলেনি কেউ।
ছেলেরা সাফাই গায়ছে,আব্বা তো কিছুই রেখে যাননি,আমাদের ব্যবসা
তো সব লসে চলছে,খরচপাতি করার কোন ক্ষমতা নাই।
বিরক্ত শিবু বলেছিলেন,কত খরচ হবে খানাখানিচায়,আমি দেব।
পাশ থেকে এক মৌলভী সাহেব বলে উঠলেন,হিন্দুর টাকায়
মুসলমানের খানাখানিচা না-জায়েজ।
শিবু তাই এসে বসেছেন নিরালায়।একাকী অশ্রু বিসর্জন
করছেন। বন্ধুর শেষদিনে এর বেশী কিছু করার অধিকার নাই
তাঁর।
---বাবা,বাড়ি চল,সকাল থেকে কিছু খাওনি তুমি।
অতসী তার বান্ধবীকে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে সামনে।শিবু বললেন,
যাব,কিন্তু এদিকের কি-সব ব্যবস্থা হলো বুঝতে পারছি না।
ঠিক তখনই তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল পাঞ্জাবিতে কাদামাখা
হায়দার। তার পেছনে জাল কাধেঁ কয়েকজন লোক।কয়েকজনের
মাথায় বড়-বড় হাঁড়িতে মাছ। সে গুলো তখনও তড়পাচ্ছে বাঁচার
আশায়।
তপতী মৃদু হেসে বলল, আর চিন্তা নাই বাবা,সারা গ্রামের চিন্তার
ঠিকেদারী যিনি নিয়েছেন,তিনি ময়দানে হাজির।
তপতীর কটাক্ষ-বাক্য শুনেও শুনলেন না শিবু। তিনি উঠে
দাঁড়ালেন হায়দারের সামনে। বললেন, কোথা থেকে আনলে
এসব?
--- কোন রকমে ব্যবস্থা করলাম। বলে লাজুক হাসল হায়দার।
---অন্য সব ব্যবস্থা?
--- কিচ্ছু ভাববেন না কাকু,সব ঠিক হয়ে যাবে।এই তোরা
মাছগুলো এখানে রেখে,চা-পানির ব্যবস্থা কর।
তপতী কথাগুলো শুনলো।বিড়বিড় করল,উনি শুধু গ্রামের লোকের
ভালমন্দ চিন্তা করবেন,নিজের কথা ভাববেন না কোনদিন।
তপতীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোমিলা এতক্ষণ অবাক চোখে
হায়দারকে লক্ষ্য করছিল। তপতীর কথায় সম্বিত ফিরল যেন
তার। বলল,কি বলছিস?
---কি আর বলবো,এই সেই লোক, যে কিনা কার মেয়ের বিয়ে
হয় না,কার অসুখ এসব নিয়েই মেতে থাকেন,নিজের কথা
চিন্তাও করেন না।
---কে বলল নিজের কথা চিন্তা করে না,যে লোক কুকুরের ভয়ে
পথ হাঁটে না,সে নিজের কথাই সবচেয়ে বেশী ভাবে।
তপতী অবাক হয়ে বলল,তার মানে?
---এই ছেলেটার সাথেই আমি সেদিন এসেছি,ভীষণ ভীতু আর
চরম অহঙ্কারী একজন।
--- সে আর বলতে, আমাদের দিকে একবার তাকিয়েও দেখল না,
বল?
দুই বান্ধবী পরস্পরের দিকে চেয়ে রইল কৌতুহল নিয়ে।
*

সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে গনেশ। সে এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
বাড়ির সকলের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা মধুর নয়। বাবা তার চেহারা
দেখলেই ক্ষেপে ওঠে। মায়েরও খুব একটা মায়া নাই। থাকেই বা কি করে।
বাবা-মায়ের বিরক্ত হওয়ার মত কাজ করেছিল গনেশ।
মেয়েটির নাম শিউলি। যাত্রাপালা করে।শান্ত আর ভদ্র।যাত্রাপালার
যারা এসেছিল তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব পড়েছিল গনেশের উপর।
হয়ত বাড়াবাড়ি রকমের দেখভাল করেছিল গনেশ, যা নিন্দুকদের চোখে
দৃষ্টিকটু। তাদের কেউ খবরটা তুলে দিয়েছিল বাবার কানে।
সকালে গনেশ ঘুম থেকে উঠতে পারেনি। সারারাত জেগে থাকার
ধকল।পাছায় লাথি খেয়ে চিৎকার করে উঠেছিল, কে-কে, কোন শালা
রে।
পটাপট আরো চারটে লাথি, সেই সাথে গালমন্দ,আমি তোর বাপ,
তোর মামারা আমার শালা হয়।
হতচকিত গনেশ কি বলবে আর কি করবে ভেবে উঠতে পারেনি।
কোনরকমে বলেছিল, আমি কি দোষ করলাম?
--- ওই বেবুশ্যে মেয়েটার সাথে তোর অত মাখামাখি কিসের?
শিউলিকে অমন ভাষায় সম্বোধন আশা করেনি গনেশ। তার
মাথায় রক্ত চড়ে গেল। বলল, খবরদার ওর সমন্ধে খারাপ কথা
বলবে না, ওকে আমি ভালবাসি।
শুরু হয়ে গেছিল বাবা-ছেলের তর্কযুদ্ধ। কেউ নিজের জেদ থেকে
একচুল সরতে নারাজ। তখনই কে যেন খবরটা পৌঁছে দিয়েছে
দাদার কানে। দাদা এল। দরজার বাইরে থেকে ডাকল, কাকাবাবু
একবার বাইরে আসেন।
সাপের মাথায় জড়ি পড়লে নাকি ফণা নামিয়ে পালায়। বাবারও
তেমন অবস্থা। ধীরপায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
দাদার মধ্যস্থতায় মিটমাট হল সমস্যার কিন্তু আগুন এখনও জ্বলে।
বাবা সুযোগ পেলেই কথার বাণ মারে। মা পোড়া রুটি-তরকারী তার
জন্যে বেছে তুলে রাখে।
ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে গনেশের। পারে না। দাদার মুখ
মনে পড়ে। দাদাকে ছেড়ে একদিন থাকতে কষ্ট হয়, তাই সে বাড়ি
থেকে পালানোর ভাবনাটা স্থগিত রাখে। তবে দিদি যখন কথার
খোঁচা দেয়, তখন মনে হয়, চলে যাব শিউলীর কাছে।
এবারের পালায় অন্য মেয়ে আসছে। তাতে মনে কোন
দুঃখ নাই গনেশের।তবু শিউলীর কথা ভেবে কষ্ট হয়।জানতে
ইচ্ছে করে,কেমন আছে সে। জানার কোন উপায় নাই। সেই
মেয়ের ঠিকানা জানে না গনেশ। মোবাইল নাম্বারও নেওয়া
হয়নি। দাদা জানে ।তাকে এসব বলা যায় না।
দাদার কথা ভেবে সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে গনেশ। রাত
বেশ গভীর।হাঁকডাক করলে হয়ত দরজা খুলবে,কিন্তু গালমন্দ
করবে। তারচেয়ে পাঁচিল টপকানো ভাল।
পাঁচিল টপকে বাড়ি ঢুকে ধরা পড়ে গেল গনেশ। অতসী
জেগে ছিল। সে দোতলার বারান্দা থেকে টর্চের আলো ফেলে
বলে উঠল, কে,কে ওখানে?
--- আমি দিদি।
---ও গনশা, তা তুই পাঁচিল টপকালি কেন? আমাকে ডাকলেই
তো দরজা খুলে দিতাম।
পাঁচিল টপকাতে গিয়ে হাত-পা ছড়ে গেছে গনেশের। সেখানে
হাত বুলোতে বুলোতে সে বলল, আমি ভেবেছিলাম তোমরা
বোধহয় ঘুমিয়ে গেছো।
--- যুগ্গি পুত্তুর সমাজসেবা করে ফিরবেন বলে কি বাবা-মাকে
জেগে বসে থাকতে হবে।
নিরুপায় গনেশ এবার ঠোঁটে আঙুল রেখে চাপা স্বরে বলল,
চুপ, দাদা আছে বাইরে।
তাড়াতাড়ি সিঁড়ি টপকে নিচে নেমে এল অতসী। বলল, মানুষটাকে
বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস!
--- কি করব, দাদা যে ভিতরে আসতে চায় না,আমি তাই বাড়ি
ঢুকলাম দুটো মুড়ি পেয়াঁজ নিয়ে চলে যাব বলে।
--- কই কোথায় তিনি, চল আমি দেখি, এতরাতে পরের বাড়ির
মুড়ি চুরি করে খাবেন, ভারি ভদ্রলোক।
--- তোর পায়ে পড়ি দিদি, দাদাকে অপমান করিস না।
গনেশের কথা শুনেও শুনল না অতসী। সদর দরজা খুলে বেরিয়ে
এল বাইরে। অন্ধকারে দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে দেখল আশেপাশে গনেশের
‘দাদা’ আছে কিনা।
*
ঘুম ভেঙে গেছে রোমিলার। বেশ বিরক্তি বোধ করছে সে।
ভাবতে পারছে না,তপতীর রুচি এত নিম্নগামী।শিক্ষিত
মেয়ের ভাবনা হবে উন্নত স্তরের। কিন্তু তপতীর এখনকার
আচরণ দেখে রোমিলা নিশ্চিত যে,লেখপড়া শিখলেও তপতী এখনও গাঁইয়া হয়েই আছে।
হায়দার নামের ছেলেটি ভাল নাম ওয়াশিম হায়দার। নামটি এমনকিছু
আহামরি নয়।চেহারাও সাধারণ।রোগা-পাতলা গড়ন। গায়ের রং শ্যামবর্ণ।
থ্যাবলা নাক।মুখে বসন্তের দাগ। চোখ দুটো বেশ।
এই ছেলের মধ্যে কি এমন দেখছে তপতী যে, কথায় কথায় অত উতলা
হয়ে উঠছে!
গনেশ একটু বোকাসোকা টাইপের। সে না হয় ‘দাদা’ কে ভক্তি করতে
পারে। কিন্তু তপতী কেন হয়?
ছেলেটার প্লাস পয়েন্ট কি-কি হতে পারে তপতীর চোখে?
নম্বর এক, ছেলেটা পরোপকারী।
নম্বর দুই, ছেলেটার বাবা-মা নাই।
নম্বর তিন, ছেলেটা একটা স্কুল অর্গানাইজ করছে। মাস্টার ডিগ্রী
থাকা স্বত্তেও সে নিজে কোন পদ দখল করে বসে নাই।
কারণগুলি সবই একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত। ছেলেটার
বাবা-মা নাই সেই সুবাদে পেয়েছে অবাধ স্বাধিনতার ছাড়পত্র।
অবিভাবক থাকলে নিশ্চয় ওকে চাকরী-বাকরী করার জন্য
নিয়মিত চাপ দিত। নিদেনপক্ষে একটা বিয়ে দিতো।কাঁধে
জোয়াল পড়লে ছেলের মাথার পরোপকারের ভূত নামতো।
বড়লোক মাসী থাকার সুবাদে ছেলেটা পয়সার অভাব
টের পায় না।তাই পরের পয়সায় সমাজসেবা করে নাম কুড়োয়।
স্কুলের ব্যপারটিও ওই নামের লোভের ফসল।
সময়-সুযোগ মত তপতীকে বুঝিয়ে বলতে হবে এসব। তপতী
বুদ্ধিমতী,নিশ্চয় তার ভুল ভাঙবে।
নিজের বিছানায় শুতে গেল রোমিলা। তখনই তার চোখে ভেসে
উঠল একটি মুখ, কত সুন্দর। কথাবার্তাও ওই ছেলেটার মত
কর্কশ নয়।সে ছেলেকে মন দেয়া যায়।মরা-বাড়িতে একটুখানি
পরিচয়, তাতেই মনে হচ্ছে,কাল তার সাথে দেখা হবে তো?
হিল্লি-দিল্লি ঘোরা মেয়ে রোমিলা কি শেষে এই গন্ডগ্রামে মন
হারাবে?
জানে না রোমিলা। কাল সকালেই তপতীকে ওই ছেলটির বিষয়ে
বলতে হবে। জানতে হবে তার কথা।এখন তপতী গেছে সেই
‘কুকুরভীতু’ পরোপকারীর সন্ধানে,কখন ফিরবে কে জানে।
ততক্ষণ জেগে থাকার কোন মানেই হয় না।
ভাবতে-ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল রোমিলা। তার স্বপ্নে এল সেই
সুদর্শন তরুণ। হাত ধরে বলল,কেমন আছো রোমিলা।
*
আজ সারাদিন খুব ধকল গেছে ওয়াশিমের।মাথায়ও যন্ত্রণা
হচ্ছে।জ্বর আসার পূর্ব-লক্ষণ। এখন একটু ঘুমিয়ে নিলে
হয়ত শরীরটা চাঙ্গা হবে।কিন্তু বাড়ি ফেরার উপায় নাই।
খালা খুব রেগে আছে। যাকে দেখছে তাকেই ঝাঁটাপেটা
করছে।
লোকে বলে খালার নাকি মাঝেমধ্যে ভর ওঠে। তখন কি
যে করে তার ঠিক নাই। গালিগালাজ,শাপ-শাপান্ত,হাতে
কাছে যা থাকে তাই ছুঁড়ে সামনের জনকে মারা।বাদ যায়
না হায়দারও। তবে সে এটাকে ‘ভর-ওঠা’ ভাবতে নারাজ।
এটা নিশ্চয় কোন অসুখ। বড় কোন ডাক্তার দেখালে সেরে
উঠবে কিন্তু খালা কিছুতেই ডাক্তারের কাছে যাবে না।
হায়দারের প্রতিটি সকাল শুরু হয়,খালা গালমন্দ শুনে।
রোজ সকালে কোন না কোন লোক আসে তার খোঁজে।
সদর দরজায় হাঁক ছাড়ে, মিঞাভাই আছেন নাকি?
হায়দার বিছানায় শুয়ে-শুয়েই শুনতে পায়, না-গো
তোমাদের মিয়াভাই কাল রাতে মরে গেছে,পরে এসো
খানা খাবে।শুয়োরের বাচ্চারা ছেলেটাকে শান্তিতে ঘুমাতেও
দেয় না গো!
তড়িঘড়ি বিছানা ছেড়ে উঠতে হয় হায়দারকে। খালাকে মৃদু
ধমক মারে,আপনি অমন করেন কেন বলেন তো? ওরা আমার
কাছে আসে বিপদে-আপদে সাহায্যের আশায়,ওদের কেন শাপ-
শাপান্ত করেন।
---মর তুই, মর হারামজাদা,বাপ খেলি,মা খেলি,এবার আমাকে
খা । না হয় নিজেকে খা। আমার জান জুড়োক।
খালার শাপ-শাপান্ত পেছনে রেখে যে এসেছে তার কাছে যেতে
হয় হায়দারকে। হাসিমুখে শুনতে হয় তাদের সুবিধা-অসুবিধার
কথা।
খালার ভাষায় নবাব পুত্তুরের দরবার।
সেই দরবারে ফ্লাক্স-ভর্তি চা,বড় পেয়ালা ভর্তি ডিমসেদ্ধ নিয়ে
হাজির হন খালা।বলে,সবকিছুতে বিষ দিয়ে রেখেছি,খেয়ে মর
হারামজাদা।
হাসিমুখে তা খায় হায়দার। সাথে যারা থাকে তাদেরও দেয়,বলে,
ভয় নাই,আমার খালা বিষ দেয়নি,আপনারা নিশ্চিন্তে খান।
আজ সকালে তেমনই এক অবসরে খালা বলে উঠল,সারা
জীবন কিপটামী করলি,এবার যা কবরে,ফাঁকা হাতে।
হায়দার চা খেতে খেতে বলল,আজ আমি মরব নাকি খালা,কিন্তু
আমি কিপটামী করিনি কোনদিন।
--- বালাই ষাট তুই মরবি কেন,আজ হামিদের দিন।আমি জানি
ওর ছেলেরা এক পয়সাও খরচ করবে না,তোকেই আংটি-বোতাম
বেচতে হবে। তুই যদি আজ মরা-বাড়ি যাস,তবে আমার মাথা খাস।
দরবারে বসে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে হায়দার বলল,আজ
কি কেউ মারা গেছে।
---না, তো।
---তবে যে খালা বলছে! হামিদ মিঞা কি অসুস্থ?
--- না,না, এই তো সকালবেলা তাকে পুকুরপাড়ে দাঁতন করতে দেখলাম।
বলল কলিমুদ্দিন। হামিদ মিঞার বাড়ির লাগোয়া পুকুরপাড়ের বাসিন্দা সে।
মেয়ের বিয়ে স্থির হয়েছে তার।সাহায্যের জন্য আগাম দরবার করে রাখছে
সে।
---কিন্তু খালা যা বলে তা কেমন করে জানি ঠিক মিলে যায়।
---দাঁড়ান বড়ভাই, আমি এক্ষুণি খবর নিয়ে আসছি। বলে উঠে দাঁড়াল
সফি।
একটু পরে হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকল সে। বলল, হামিদ মিঞা,চা
খাচ্ছে গো। তারসাথে এক কাপ চা খেলাম। সিগারেটও দিতে
চায়ছিল,আমি খাই না,তাই একটা নিয়ে এলাম।নেন,কে খাবেন
খান।
সকালের দরবার শেষ হয়েছিল হাসি-আমোদে। কিন্তু দশটা নাগাদ
হায়দার যখন নাস্তা করছিল,তখনই সফি এসে খবর দিল,একটা
খারাপ খবর আছে ভাইজান,হামিদ মিঞা এখনই ইন্তেকাল করলেন।
দুঃসংবাদ। মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলেও হায়দার ভেবেছিল,খালা যা
বলে,তা সব হয়ত পাগলের প্রলাপ নয়।
*
গনেশদের দরজা থেকে সরে এসেছে ওয়াশিম। সে তপতীর কথা
শুনতে পেয়েছে। তার খুব খারাপ লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে পালাতে।
পালাবে ওয়াশিম,এই গ্রাম থেকে পালাবে । কে আছে এই গ্রামে
তার? কেউ নাই।
খালার আচরণে বিরক্ত ওয়াশিম। কখনও যেন মায়ের মত। কখনও
শত্রু।
খালা যখন স্বাভাবিক থাকে তখন ওয়াশিমের জন্য সবকিছু করতে
পারে। কিন্তু যখন তার ‘ভর’ ওঠে তখন সে ভয়ঙ্কর। দিনের পর দিন
খালার এই ভয়ঙ্কর ভাবটা বাড়ছে।
আজ সকাল থেকেই খালার অস্থির ভাবটা জেগে উঠেছিল। আবার
সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে ভেবে হামিদ মিঞার গোরখানার ব্যবস্থা করতে
ছুটেছিল। তার সম্বল বাবার সোনার চেন আর আংটি। মহাজনের কাছে
বন্ধক রেখে টাকা নিয়েছে।
আগেও এমন বহুবার হয়েছে। তবু আশ্চর্যজনক ভাবে বন্ধক দেয়া জিনিষ
গুলো ফের ফিরে এসেছে ওয়াশিমের স্যুটকেশে।
খানাখানিচার ব্যবস্থা করতে গিয়ে সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। মাঝেমধ্যে
এমন হয় ওয়াশিমের। রাতে যখন বাড়ি ফিরল,তখন খালা অপ্রকৃতিস্থ।
ঝাঁটা,খুন্তি,নোড়া যা পেল তাই ছুঁড়ে মারল। এদিক-সেদিক ছুটে সেসব
থেকে নিজেকে রক্ষা করলেও, ভোলা তাকে ছাড়ল না।
ভোলা খালার পোষা কুকুর। খালার যখন মাথা গোলমাল করে ভোলাও
ক্ষেপে যায়। আঁচড়ে-কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়,সামনে যাকে পায়
তাকে।
বিপর্যস্ত ওয়াশিম বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখা পেয়েছিল গনেশের। বলেছিল,
গনেশ দুটো মুড়ি-টুড়ির ব্যবস্থা কর।
---চলুন দাদা আমাদের বাড়ি।
---তোর বাড়িতে কেমন খাতির তা জানি। যেখান থেকে হোক দুটো মুড়ি
কিনে আন।
--এত রাতে কারো দরজা খোলা পাব না, আমি নিজের বাড়ি থেকেই আনছি।
আপনি দূরে দাঁড়িয়ে থাকুন।
এখন আর দূরে থেকে লাভ নাই। গনেশ ধরা পড়ে গেছে।
হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেল ওয়াশিম। পায়ে খুব ব্যথা। কোনরকমে উঠে দাঁড়াল,
কেউ একজন তার হাতধরে বলল,এমন করে চোরের মত পালিয়ে বেড়াতে
আছে,আসুন আমার সাথে।
কন্ঠটি পরিচিত ওয়াশিমের।বলল,তুমি?
---হ্যাঁ, আমি,রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাটক করার দরকার নাই,আসুন আমার সাথে।
সে বিনা বাক্যব্যয়ে অনুসরণ করল সেই তরুণীর।
(আগামী পর্বে চমক)





সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×