কথা যখন উঠলোই একটু আগে বাড়াই।
বাল্যকালে আমার ঈদ মানেই ছিল অপরিসীম আনন্দ। কারণ এক রোজার সময় একমাস ছুটি। সেহরী খেয়ে সবাই ঘুম থেকে উঠতো দেরীতে , আমি সেই সুযোগের সদ্্বব্যবহার করে ভোরবেলা চলে যেতাম বনবিভাগের পাহাড়ে, না হয় ডি. সি হিল। কোন পাখির ডিম দিয়েছে, কোথায় কোন ফলের গাছ হচ্ছে, আর কয়দিন আমগুলোর বয়স হবে পেড়ে আনার মত । আমার এই ধরণের নানাবিধ গুরুত্বপর্ূণ কাজের জন্য সময় পাওয়া যেত এই মাসে। আমার সংগী ছিল আমার দোস্ত তানসেন। দুপুরে ছাদের ট্যাংকের ছায়ায় বসে যাবতীয় লৌকিক এবং অলৌকিক রহস্য নিয়ে আলাপ করতাম আমরা। অফুরন্ত সময় আনন্দঘন। বিকালে ফুটবল।
এই রমজান মাসে আমি এত বেশী দৌড়-ঝাঁপ করেছি যে গরমে আমার জ্বর হত ঠিক ঈদের দিন। আমার বেশ কয়েকটা ঈদ গেছে জ্বরে কোঁকাতে কোঁকাতে।
রমজানের অনেক বিচিত্র মরতবার মধ্যে ছিল বরফ কিনে আনা। আমাদের বাসায় ফ্রিজ ছিলোনা। ইফতারীতে ঠান্ডা পানির জন্য বরফ কিনে আনতে হতো রাস্তা থেকে। এক টুকরা 2/3 টাকা, কাঠের গুড়ায় মুড়িয়ে পাটের রশি দিয়ে বেঁধে দিত। বাসায় আনার পথে বরফটা গলে যাচ্ছে। দ্্রুত হাঁটতে হবে এবং সাবধানে যাতে বরফ পড়ে না যায়।
রমজানের সবচেয়ে আনন্দের বিষয় নতুন জামা। এটা আমি আমার আশে পাশে সবার মধ্যেই দেখেছি। তবে পরে পরে এই আনন্দ অনেকখানি ফিকে হয়ে গেলো।
গতবার তিরিশটা হয়েছে, এবার উনত্রিশটা হবে। এই আশা নিয়ে ইফতারীর পর ঘন্টাভর আকাশের দিকে চেয়ে ছিলাম, চাঁদ উঠলো কি না। ভীষণ আগ্রহে পানি ঢেলে দিয়ে চাঁদ না উঠলে সে রাতটা যেত খুব বাজে। রাগ উঠত খুব , কেন চাঁদ উঠল না।
ঈদের দিন ওঠা হতো খুব ভোরে। বাসায় বাথরুম একটা, মানুষ তার চেয়ে অনেক বেশী, সবাই গোসল করবে সকালে। বড়ভাই বোমা মারলেও উঠবেনা , উনি উঠবে নামাজে যাওয়ার দশমিনিট আগে। সুতরাং ছোটদের কাজ ছিল ভোরে উঠে গোসল করে তৈরি হয়ে যাওয়া। এরপর বড় ভাইয়ের হাত ধরে লালদিঘীর ময়দানে নামাজ পড়তে যাওয়া।
ঈদের সেই আনন্দ অনেক বছর হলো পাই না।
এখন ঈদ মানেই অন্য সব দিনের মত একটা দিন,
ঈদ মানে পুরোনো অনুভব নতুন ভাবে বোধের দিন।
........................................................................................
বাংলাদেশে ঈদের চাঁদ নিয়ে তেমন বড় মাপের ফ্যাকড়া কখনোই ছিলো না। চাঁদপুর , কাঞ্চনগর এরকম কিছু জায়গায় একদল সৌদি আরবের সাথে তাল রেখে ঈদ করত। যার যা শখ। তবে এখন আস্ত আস্ত ফ্যাকড়া শুরু হয়েছে । শহর দূষিত হচ্ছে , আমাদের দৃষ্টিসীমা পুরোটাই ঢেকে থাকে ধোঁয়া আর ধূলায়। ক্ষীণকায়া চাঁদ দেখা যায়না বড় শহর গুলোতে , অনেক ছোট শহরে দেখা যায়। এই নিয়ে শুরু হয়েছে হল্লাবাজি।
(সম্ভবত ) 1999/2000 সালের ঈদে লাগলো ফ্যাকড়া। রাত দশটা র্পযন্ত জানলাম কাল ঈদ হবে না। ঠিক দশটার খবরের সময় বলল চাঁদ দেখা গেছে।
কি ভয়াবহ সংবাদ ?
লোকজন অফিসে যেতে লেট করে , আজকাল চাঁদ ওকি তিন ঘন্টা লেট করে ডিউটিতে আসা শুরু করল না কি ? এই বিভীষণের কোন উত্তর নেই। আমাদের চাঁদ দেখা কমিটি নামক মর্ূখ-মাতালদের হাতে সর্ূয পশ্চিমেও উঠতে পারে।
গতকাল পড়লাম পৃথিবী থেকে হাজার আলোকর্বষ দূরে নতুন স্টেলার সিস্টেম আবিষ্কার হয়েছে। আমাদের বাসায় ফ্রিজ থেকে বার করে লোকজন জুস খাচ্ছে। আমার চুল পেকে বুড়ো হতে চললাম । আর আমাদের চাঁদ দেখা কমিটি , আমার শৈশবের চাঁদের বুড়ির যুগে রয়ে গেছে।
........................................................................................
দেশের বাইরে এসে দেখছি সপ্তকান্ডে রামায়ণ শেষ হয়নি, আমরা বাংলাদেশীরা অষ্টম, নবম এবং দশম খন্ড বের করেছি। সাথে যোগ দিয়েছে আমাদের ব্রাদার হুড পাকিস্তানী, এবং মধ্যেপ্রাচ্যের লোকজন।
নিউর্ইয়কে ঈদ হয় দুদিন, লস এনজেলসেও দু দিন, মোটে মিলে বোধ করি এই মুলুকে তিন দিন। লে হালুয়া লেঠা সামলাও।
আমার সাথে লস এনজেলসের সময়ের ব্যবধান তিন ঘন্টা, কিন্ত ঈদ করি দুটো ভিন্ন দিনে। আমার এখানে ঈদ হয় মিশরিয়ান ইমামের কথামত। তবে এখানেও এখন দুদিন ধরে ঈদ শুরু হয়েছে, কারণ পাকিস্তানিরা আলাদা হয়ে গিয়েছে এই বেদুঈন দের থেকে । বিশাল ক্যাঁচ নতুন মসজিদ হয়েছে, এ ওর মসজিদে নামাজ পড়ে না। মাঝখানে বাংলাদেশী মাগনা খাওয়ার দল নিজের মত করে মাঝামাঝি ঝুলে আছে।
.......................................................................................
এখন কোন ইমাম কে জিজ্ঞাসা করুন যে আযান বাংলায় দিলে কি সমস্যা। সে হয়তো জিভ কেটে আস্তাগফিরুল্লাহ্ বলবে। ইন্টেগ্রিটি অফ মুসলিম ব্রাদারহুডের দোহাই দিয়ে
বলবে সম্ভব না। আরবীতেই পড়তে হবে। কিন্তু
একই টাইম জোনে দুদিন/তিনদিন ঈদ করলে ব্রাদারহুড যে বদারহুডে পরিণত হয় সে হুঁশ থাকে না।
যাই হোক যে কোন একদিন করতে পারলেই হয় আমার, দুদিন হলে আরো ভালো । দুদিন ধরে হালুয়া খাওয়ার মজাই আলাদা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



