somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

বিচিত্র পেশাঃ ১৩ (জাহিদ ভাইয়ের ঘটি গরম চানাচুর)

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি মাঝে মাঝে নয়াপল্টন থেকে রামপুরা হেঁটে বাসায় ফিরে যাই, এটা বিশেষ করে রাতে দিকেই হয়, বড় রাস্তা ধরে। রিক্সা বা বাসে চড়তে ইচ্ছা না হলে এই কাজ করি, তবে সেটা খুব একটা বেশী নয়, মাসে কয়েকদিন। এইপথে চলতেই গিয়ে আমি মাঝে মাঝে থেমে মানুষের কান্ড কারখানা দেখি, কে কি করছে তা দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। সাধারন মেহনতি মানুষের আয়ের জন্য কে কি করে তা দেখে হিসাব মিলাই। বেঁচে থাকার জন্য কত মানুষ কত কি করে যাচ্ছে!

যাই হোক, এই চলার পথেই আমার সাথে পরিচয় হয় বিচিত্র পেশার মানুষ জাহিদ ভাইয়ের সাথে। তার এই পেশা কেবিচিত্র বলার কারন, এই পেশা একটা প্রচলিত পেশা হলেও তিনি এই পেশায় একটু টুইষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন। হ্যাঁ, আমি জাহিদ ভাইয়ের ঘটি গরম চানাচুরের কথাই বলছি! একটা ঘটিতে কয়লা পুড়িয়ে আগুন করা হয় এবং সেই আগুনের চার পাশে থাকে চানাচুর। কাষ্টমার এলে সেই গরম চানাচুর বানিয়ে পরিবেশন করা হয়, খেতে অসাধারন। আমি খেয়েই বলছি!


জাহিদ ভাইয়ের গ্রামের বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জ, খুব ছোট বেলায় বাবা মা মারা যাবার পর চাচার সংসারে বড় হয়েছেন এবং একটা সময়ে তিনি আর সেখানে থাকতে পারেন নাই, লেখা পড়া তেমন শিখতেও পারেন নাই, চলে আসেন এই রহস্যময় আদুরে ঢাকা শহরে, যে শহর সবাইকে কিছু না দিক অন্তত কোলে তুলে নেয়!

ঢাকা এসে সাধারন শ্রমিকের মত জীবন শুরু করেন, যথারীতি এক সিলেটি ভাইয়ের যোগাড় করে দেয়া হোটেলের বয় হিসাবে। কিন্তু এই কাজে মন বসে না, কিছু দিন হোটেলে কাজ করে বিরক্ত হয়ে টঙ্গীতে এক লোকের দেখা পান, সেই লোকের পরামর্শে তিনি তার সাথে কাজ শুরু করেন। হ্যাঁ, তিনিই এই রকম ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করতেন। প্রথম প্রথম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেন এবং কিছু দিনের মধ্যে যাবতীয় কাজ শিখে নেন, নিজেই স্বীকার করেন, এটা তেমন কঠিন কাজ নয় তবে ঘটিতে কয়লা দীর্ঘক্ষন জালিয়ে রাখায় একটু কৌশল আছে।

বছর দুয়েক ধরে এই ব্যবসা এখন আর ভাল চলছে না, আগে লাভ হত বেশী এবং অনেক কমেছে। আগে চিকন চানাচুরের কেজি ছিল ৪০ টাকা, এখন প্রায় ১২০টাকা। এই টাকা দিয়ে কিনে এনে অন্যান্ন মাল মশলা দিয়ে চানাচুর বিক্রী করে লাভ আর আগের মত হচ্ছে না, তা ছাড়া আগের মত কাষ্টমার এখন আর নেই। আগে সারাক্ষন ভীড় লেগে থাকত, এখন সবাই প্রায় নিরব! দোকান খুলে আগে কাজ শুরু করলে শেষ হত না, এখন প্রায় সময়েই হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

জীবনের সেরা দুঃখের কথা জানতে চাইলে বলেন, ছোট বেলায় বাবা মা মারা যাওয়াই সেরা দুঃখের ঘটনা। আর সেরা মজাদার ঘটনা কি জানতে চাইলে, জাহিদ ভাইকে চিন্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। হেসে বলি, কখনো কি আপনার স্ত্রীকে এই চানাচুর বানিয়ে খাইয়েছেন। এবার হেসে বললেন, শুধু চানাচুর না অনেক কিছুই রান্না করে খাওয়াই। এতে আমার আগ্রহ বেড়ে যায়, জানতে পারি জাহিদ ভাই, প্রায় সব রান্নাই করতে পারেন এবং কাজ শেষে বাসায় ফিরে গিয়ে নিজেই রান্না করেন। তিন ছেলে মেয়ের পিতা জাহিদ ভাইয়ের এই কথা শুনে আমার মন ভাল হয়ে যায়, আমি নিজেও রান্না করতে ভালবাসি, নিজে হাতে রান্না করে প্রিয়জনদের খাবারের আনন্দে আপনাদের বলে বুঝাতে পারবো না! হা হা হা।।

যাই হোক, জাহিদ ভাইয়ের জন্য ভালবাসা থাকল। বাংলাদেশের মানুষের প্রায় সবারই অনেক কষ্টের গল্প। হয়ত এমন কষ্টের গল্প শুনে আমাদের চোখের কোনায় পানি জমে যায়!

জাহিদ ভাইয়ের ব্যবসা এগিয়ে চলুক। জাহিদ ভাইয়ের চানাচুরের রেসিপি আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন, আমি একদিন বানাবো বাসায়, তবে কথা বলতে বলতে কখন ১৫টাকার চানাচুর খেয়ে ফেলেছি, তা কে বলবে।

বিল দিয়ে আমি রাস্তায় নামি, যে কোন পেশায় একটু বিচিত্র না থাকলে কি চলে।

বিচিত্র পেশাঃ ১২
http://www.somewhereinblog.net/blog/udraji/30005510
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×