বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্রতার সীমা পার করতে পারেন নাই, এটা বুঝতে হলে বিজ্ঞানী হতে হবে না, শুধু আপনাকে কষ্ট করে যে কোন ছোট/বড় রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়াতে হবে, তার পর শুধু আপনার সামনে দিয়ে হেটে যাওয়া পুরুষ নারী শিশুদের চেহারা দেখুন! আর্থিক নিশ্চয়তা থাকলে মানুষের এই চেহারা হয় না, আর্থিক নিশ্চয়তা, খাদ্যের নিয়মিত যোগান থাকলে মানুষের চেহারা শরীর বা ত্বকের মলিনতা হয় না, ত্বক তেল তেলে ভাবে দেখা যায়! আমি খুব কম মানুষের চেহারা ত্বকে এই লাবন্যতা দেখি, এই না দেখা মানেই তিনি বা সে আর্থিক দৈনত্যায় আছেন! আজ ও গতকালের দুটো ঘটনায় যাই, চলুন!
আজ জুম্মার নামাজ পড়তে লুঙ্গীর গিটে ১৫০ টাকা নিয়ে বের হই, উদ্দেশ্য ৫০ টাকা মসজিদে, ৭০ টাকার দেড় লিটার কোক (ছোট ছেলের আবদার) এবং বাকী টাকা মসজিদের সামনে বসা দরিদ্রদের দিয়ে আসবো। কোন এক অজানা কারনে আজ মসজিদের কালেকশন ব্যাগ আমার সামনে আসে নাই বা আমার বসার আগেই হয়ত নিয়ে গেছে, ফলে মসজিদে টাকা দেয়া হয় নাই, গিটে টাকা রেখেই নামাজ পড়ে বের হয়ে এত এতে দরিদ্র মানুষ দেখলাম যে এই টাকা বের করতেই সাহস হচ্ছিলো না বা লজ্জা পাচ্ছিলাম! যাই হোক, ১০ টাকা করে ৫ জনকে দিয়ে রাস্তায় বের হয়ে দেখি শসা বিক্রি করছে ৩০ টাকা কেজি, ফলে এক কেজি শসা কিনে হাতে ৭০টাকা নিয়ে বাসার কাছে এলাম, কোক কিনতে স্থানীয় একটা কালো পর্দার চাউনীর চা দোকানে প্রবেশ করে দেখি বহু মানুষ এই ভর দুপুরে কলা বিস্কুট চা খাচ্ছে, দুই একজন সিগারেটও টানছে! আহ! ফাঁকে দোকানীর কাছে আমিও কোকের কথা বললাম, এই সময়ে দুটো পথশিশু (মালিবাগ শান্তিনগর ফ্লাইওভারের নীচে এরা জন্মে আবার এখানেই এরা বড় হয়, আমি এদের দেখি আর কান্না করি, শতশত) প্রবেশ করে আমার কাছে কিছু খেতে দেয়ার টাকা চাইলো, আমি কি খাবে জিজ্ঞেস করাতে বলল, একটা করে বনরুটি ও এককাপ চা। আমি চা দোকানীকে ওদের দিতে বলি {(১০+৫)*২}, ফলে ৩০ টাকা চলে যায়, হাতে তবুও থাকে ৪০ টাকা, এই টাকায় ছোট একটা কোক কিনে বাসায় ফিরি! ঘটনাটা বলার উদেশ্য আপনাদের সহানুভুতি নেয়া হয়, বলতে চাইছি, রাস্তায় হাঁটতে থাকলেও এমন কত কত অভাবী হাত চোখের সামনে পড়ে। এই শহরে এক কিলো হাঁটলে অন্তত ১০জন দরিদ্র মানুষ আপনার কাছে হাত পাতবেই! এই ঘটনা আমরা ছোট বেলায় দেখি নাই!
গতকালের ঘটনা বাজারে ফার্মের মুরগী কিনছিলাম, একজন বৃদ্ধ মহিলা এসে একটা মুরগী কিনে দিতে বললেন, কোন কথা না বলে একটা মুরগী কিনে দিয়ে তা পরিস্কার করে বৃদ্ধকে দিলে তিনি সে কি খুশি, গায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন। যাই হোক এটাও বলার মত ঘটনা না, আসলে আমার মুরগী কেনা এবং বৃদ্ধের জন্য মুরগী কেনায় অনেক সময় লেগেছিল এবং সেই দোকানের সামনে বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। এই ফাঁকে যা লক্ষ করলাম, মুরগী দোকানীর সামনে রাখা মুরগীর কলিজা গুর্দা পা (যারা এই গুলো নেয় তাদের এবং হোটেল সাপ্লাই থেকে বেছে যাওয়া গুলো জমিয়ে রাখে) বিক্রি করে এবং এর ক্রেতা কারা বুঝতে চাইছিলাম আড়চোখে! হ্যাঁ, বোরকা পরা বেশ কয়েকজন মহিলাকে কিনতে দেখলাম, জীর্ন শরীরের কয়েকজন পুরুষকেও (এদের অফিস বা কাজ ফেরত) কিনতে দেখলাম, এই মিক্স কলিজা গুর্দার কেজি ছিলো ৮০ টাকা! আর্থিক দারিদ্র মানুষ ছাড়া এই আইটেম কেহ কিনতে পারে বলে আমি মনে করি না। যাই হোক, এইসব আমাদের ছোট বেলায় দেখি নাই!
যাই হোক, আমার মনে হয়, আপনারা উন্নয়ন উন্নয়ন করছেন অথচ আমি দেখি দারিদ্রতা, আর দরিদ্র মানুষ বাড়ছেই! দোহাই মিথ্যা না বলে খোলা চোখে দেখুন! আপনাদের এই জ্ঞানে এই সমস্যার সমাধান নেই জানি, তবে অন্তত স্বীকার করুন, অন্তত এতেও বুঝবো আপনারা কিছু মানবিক!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৬