হিন্দিতে কিছু শব্দ আছে - আনপড় (অশিক্ষিত), নালায়েক (বেকুব), নিকর্মা (কাজের না), বেরোজগার (আয় করে না) ইত্যাদি ইত্যাদি। এই শব্দ গুলো গালি না হলেও গালির মত শোনায় এবং হিন্দিতে কেহ প্রাথমিকভাবে মনোকষ্ট পেলে এই কথা গুলো বলে। হিন্দি সিনেমা 'পাঠান' অবশেষে মুক্তি পেল এবং এই ছবির মুক্তির পরে যারা এই ছবির বিরোধ বা বয়কটের কথা বলেছিল তাদের এই শব্দ গুলো বলা হচ্ছে! পাঠান তাদের বিরোধের জন্য সারা দুনিয়াতে আরো প্রচার পেল এবং সেরা অর্থ উপার্জনকারী সিনেমা হিসাবে ইন্ডিয়া সহ সারা বিশ্বে নাম কামিয়ে নিল!
যাই হোক, কথা হচ্ছে কেন এই সিনেমা আনপড় (অশিক্ষিত), নালায়েক (বেকুব), নিকর্মা (কাজের না), বেরোজগার (আয় করে না) লোকেরা বয়কটের ডাক দিলো? নেটে অনেক খুজে যা পেলাম তা হচ্ছে, দীপিকার গেরুয়া বিকিনি পরা এবং এটা গেরুয়া রঙ নাকি তাদের ধর্মে অনুভুতিতে আঘাত করছে! এই আনপড় (অশিক্ষিত), নালায়েক (বেকুব), নিকর্মা (কাজের না), বেরোজগার (আয় করে না) লোকেরা এর বেশী কিছু বলে নাই কারন এর বাইরে কিছু বলার নেই তেমন। তবে কথা হচ্ছে পরছে দীপিকা কিন্তু কথা শুনছে শাহরুক! এটাও এরা বুঝতে পারে নাই। এই লোকেরা যদি কথা শুনাতো তবে তাদের মেয়েকেই শোনানো দরকার ছিলো, কি করে তাদের মেয়ে এই রঙ পরলো কিংবা এত সংক্ষিপ্ত পরে ফাকফুক দেখিয়ে দিল! এত কথায় দীপিকার কোন নামই নেই, সেই শাহরুকের সব দোষ, যদিও সে এই ছবির একজন অভিনেতা মাত্র, ছবির পরিচালক থেকে প্রায় সবাই হিন্দুধর্মী এবং তাদের কেন এই ব্যাপারটা বোধে আসলো না!
আসলে এই উপামহাদেশে আনপড় (অশিক্ষিত), নালায়েক (বেকুব), নিকর্মা (কাজের না), বেরোজগার (আয় করে না) লোক দ্বারাই পূর্ন, যারা তাদের টার্গেট বুঝে না, এদের টার্গেট একটাই ধর্ম এবং সেটা ইসলাম ধর্মই, ইসলাম ধর্মের অনেক দোষের(!) মধ্যে একটা হচ্ছে ইসলাম মুর্তি পুজা পছন্দ করে না এবং জীবন আচরনের নির্দেশনা দেয়, ইচ্ছামত চলাফেরা যায় না, যা এদের অপছন্দ (এই লোকদের দোষর হিসাবে মুসলমানদের মধ্যেও অনেকে আছে!), ফলে এরা নামধারী কোন মুসলমান পেলেও তার বিরোধিতা করে! অন্যদিকে শাহরুক খান যে জীবন যাপন করেন, তা পশ্চিম বঙ্গের ওলামারাও তাকে পছন্দ করে না কিন্তু ইন্ডিয়ান সিনেমায় তার অবদান তা অস্বীকার করার যো কারো নেই, এমন শাহরুক পয়দা হতে শত বছর লাগে এবং সেটা সহজ বিষয় না!
হিন্দি সিনেমা বা কোন দেশের সিনেমাই বাস্তব নয়, সব দেশের সিনেমার গরু গাছের ডালেই উঠে, নৌকা পাহাড়ের চুড়া দিয়ে চলে, সিনেমা বানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে কিছু সময়ের জন্য বিনোদন দেয়া এবং এই সিনেমা মেকিং করে নাম কেনা সাথে অর্থ উপার্জন করা। ইন্ডিয়ার সিনেমা গুলো সারা বিশ্ব থেকে এভাবেই অর্থ উপার্জন করে, নাচ গানে মানুষের মনে ভীড় করে, ভাষা না বুঝেও অনেকে এই সিনেমা গুলো দেখে, এর সাথের গান শুনে হাসে কাঁদে!
আনপড় (অশিক্ষিত), নালায়েক (বেকুব), নিকর্মা (কাজের না), বেরোজগার (আয় করে না) লোকেরা কবে বুঝবে যে এতে তারাই ক্ষতিতে যাচ্ছে, তাদের পরের জেনারেশন তাদের মতই আনপড় (অশিক্ষিত), নালায়েক (বেকুব), নিকর্মা (কাজের না), বেরোজগার (আয় করে না) হয়ে উঠবে! সব দেখে শুনে আফসোস লাগে!
দুঃখের বিষয় আমাদের দেশেও আজকাল এমন আনপড় (অশিক্ষিত), নালায়েক (বেকুব), নিকর্মা (কাজের না), বেরোজগার (আয় করে না) লোক অনেক দেখা যাচ্ছে, যারা পরিমনি, মাহি কিংবা আলমের পাদের খবর নিয়েও আয়োজন করে!
তবে চ্রম সত্য হচ্ছে, যে কোন দেশে 'সুশাসন' না থাকলেই এমন আনপড় (অশিক্ষিত), নালায়েক (বেকুব), নিকর্মা (কাজের না), বেরোজগার (আয় করে না) মানুষে পরিপূর্ন হয়, যারা নিজের ভাল বুঝে না, উপ্রন্ত অন্যের জীবন বিষিয়ে তুলে। নিজের পেটে ভাত নেই অথচ অন্যের তালে নাচে, এই যেন এক রাজনীতির খেলার ঘুটি!
(ছবিঃ নেট থেকে দ্যা ইকোনমিক টাইমস ইন্ডিয়া)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:২০