জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করে এসেছি । এমন বিপর্যস্ত সময় আর আসবেনা। আমি সব মেনে নিয়েছিলাম। এক রুমে ১৮/৮ জন থাকতে হবে, সিঙ্গেল বেডে ২ জন থাকতে হবে ৫/৬ বছর ধরে। এটা অনেক বড় আপু পছন্দ করত না। তাই তাদের সাথে মেয়ে নিতে চাইতনা। তারা ছোটদের সাথে বাজে ব্যবহার করত। আমার বেডমেট আপু আমাকে কখনো কিছু বলেনি। সে আমাকে লকারের ভাগ দিয়েছিল, যা অনেক আপু দেয়না। লকার, ডেস্ক, সেল্ফ সব কিছু তাদের একার জিনিস মনে করে।
একদিন দুপুরে আমি বিছানায় বসেছিলাম, আপু বাইরে থেকে এসে বল্ল সে ঘুমাবে, আমি যেন অন্য কোথাও বসি। আমি বুঝিনি আমি বসে থাকলে তার সমস্যা কিসে। আমি তার কথায় এত কষ্ট পেয়েছিলাম যে তারপর আর একদিনও তার সাথে থাকিনি। আমি ফ্লোরে থেকেছি অনেক দিন। অন্য কেঊ হয়ত এটাতে কিছু্ই মনে করতনা, কিন্তু আমি খুব শক্ত মেয়ে নই, অল্পতেই কাতর হই।
আমি ঐ রুমে নতুন উঠেছিলাম। সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল চলছিল। সারাদিন লাইব্রেরিতে থাকতাম। দুপুরে খাওয়ার পর আর রাতে ঘুমাতে যেতাম রুমে। পরে ঐ রুমেই আমি ভাল থাকার জায়গা পেয়েছিলাম। আমি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতাম, ভোরে জাগতাম। তাই তারা আমাকে বলত, গ্রাম থেকে এসেছি বলে আমার এ বাজে অভ্যাস।
আমি কখনো কাউকে বিরক্ত করতাম না। একা, চুপচাপ থাকতাম। এজন্য আমাকে বলত সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে । বাংলায় পড়তাম, তাই বলত, এসব বাজে সাবজেক্টে পড়ে কি করবা? মনে হচ্ছে ওদের কথা ঠিক ছিল, আমি প্রায় তিন মাস ধরে বেকার বসে আছি।
আমার রেজাল্ট কখনো তেমন ভাল হতনা। সেকেন্ড ক্লাস পেতাম। বাসা থেকে কিছু বলতনা, যদিও কেউ জানতনা আমি সবসময় কী বিপর্যস্ত থাকতাম। ক্যাম্পাসে আমার কোনো বন্ধু ছিলনা। আমি যখন কারো সাথে মিশতে যেতাম, তখন তার আচরণে কোনো অসঙ্গতি দেখতে পেতাম (যেমন: হয়ত সে মিথ্যা বলত), পরে আর তার সাথে মিশতে পারতামনা।
পাঁচ বছর হলে থেকেছি আমি। এর প্রতিটা দিন ছিল আমার কাছে যন্ত্রনাময়। আমি অনেক কিছুই বুঝতাম, জানতাম, কারণ আমি কলেজেও হোস্টেলে থেকেছি। এখন আমার নিজের একটা থাকার জায়গা হয়েছে। আমি আমার ইচ্ছামত সব কিছু করতে পারি এখানে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




