টু/থ্রী তে পড়ার সময় এক মামী বেড়াতে আসেন আমাদের বাসায়। তিনি আমাকে দেখেই বলেন, তুমি তো কলা গাছের মত লম্বা হয়ে গেছ। সেই থেকে শুরু। আরও অনেক পরে সবাই বলত, তুমি এত খাটো কেন? তোমাদের সবাই কি এমন? এইট এ নানার বাড়ির কাজের মেয়েটা বলেছিল, মামাত বোন আমার চেয়ে সুন্দর, ফরসা, তার চুল বেশি লম্বা। নাইন/টেনে সবাই আমাকে সব সময় বলত খালাত বোনের কথা, সে ঘরের সব কাজ করতে পারে, সেলাই করতে জানে, রান্না করতে পারে, পুডিং ও বানাতে, পায়েশ রাঁধতে জানে। এসব শুনে আম্মাও খুব আফসোস করত।
আমি ছাত্রী কেমন ছিলাম তা নিয়েও সবার মনে দ্বন্দ্ব ছিল, কারন স্কুলের হেডমাস্টার ছিল আব্বা। ভাল ছাত্রী ছিলাম না, তবুও যখন এইটে বৃত্তি পেলাম, সবাই হয়ত ভাবল কোন এক অজানা কারনে আমি পেয়েছি, এজন্য তারা কখনো আমাকে একটা ভাল কথাও বলেনি।
কলেজে পড়তাম ময়মনসিংহ। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে খালার বিয়েতে গিয়েছি, মামা জিজ্ঞেস করেন চান্স পাব কিনা। সেদিনই শুনেছিলাম সেকেন্ড হয়েছি। কলেজ হোস্টেলে আমার রুমমেট ছিল এক সুন্দরী। হোস্টেলসুপার তাকে বেশি পছন্দ করত, আমি বুঝতাম। সুন্দরী একদিন আমার নোট চুরি করেছিল। আমি ম্যাডাম কে বিচার দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি তাকে কিছুই বলেননি। আমি কেঁদেছিলাম, সুন্দরীকে কিছু না বলার জন্য নয়, নোট চুরির জন্য। নোটটা করে দিয়েছিল আব্বা।
পারিপার্শ্বিক সব অবস্থা থেকে আমাকে সবসময় বাঁচাতে চেষ্টা করত আব্বা, আমার একমাত্র আশ্রয়ের জায়গা। সবকিছু আমি তাঁকে বলতাম। আব্বা বলত, কে তোমাকে খাটো বলে? তুমি মোটেও তেমন না, ফরসা-কালোতে কি যায় আসে, টিভিতে বিজ্ঞাপনে যেমন চুল দেখি, তোমার চুল তেমন, এখন রান্নার সময় না, এক সময় রান্না করতেই হবে, তখন করবে, বাংলা অনেক ভাল সাবজেক্ট, তুমি চাইলে সবই করতে পারবে।
এত কিছুর পরও আমি ছিলাম নিস্পৃহ। আমি কতটা পারি, সেটা যাচাই করার সুযোগ আমি আমাকে কখনো দেইনি। চাইতাম ভাল কিছু করতে, কিন্তু স্পৃহা জাগতনা। আমি জানি, আমি আব্বার সাথে প্রতারণা করেছি। অনেক সুযোগ আমি পেয়েছি, কোনটা কাজে লাগাইনি। এখনো চাই কিছু করতে, অন্য রকম কিছু। সবাইকে চমকে দিতে চাই, কিন্তু এখনো স্পৃহা জাগেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




