- হ্যালো!
- কী ব্যাপার! চিনতেই পারছেন না মনে হচ্ছে!
- হা হা হা! তাই বুঝি? আমার তো মনে হচ্ছে উল্টোটা!
- না, আসলে আমি একটু লাজুক, নিজ থেকে দূরত্ব কমাতে পারি না।
- খিকয! আগে তো মনে হয় নি কখনো।
- আপনি কি বাস্তবে সব সময় এরকম ‘খিকয’ বা ‘হা হা হা’ বলে হাসেন? আজব তো! সুন্দর করে হাসতে পারেন না?
- না! পারি না!
তারপরেই একটি রিনরিনে মিষ্টি হাসির সুর ছড়িয়ে পড়ল, আর রাকিব বেশ কয়েকটা হৃদস্পন্দন হারাল।প্রায় ২০ গজ দূরত্বে থেকে অদিতির মুখের অভিব্যক্তি দেখতে না পেলেও হাসির দমকে ওর কেঁপে কেঁপে যাওয়া বুঝতে পারছে রাকিব।
- শুনুন নীল পরী, সব সময় এমন সুন্দর করে হাসবেন।
- ‘নীল পরী’ আসল কোত্থেকে আবার?
- ইশশশ! কিচ্ছু বোঝেন না, না? নীল শাড়ীতে আপনাকে নীল পরী লাগছে।
- হা হা হা! সবাই আমাকে ‘কালী’ ডাকে, কৃতজ্ঞতা যে আপনি আমাকে ‘নীলচে কালী’ ডাকেন নি!
- চুপ! একদম বাজে বকবেন না!
- আচ্ছা! ওই যে সবুজ শাড়ী পরা সুন্দর মেয়েটা যার সাথে খুব হেসে হেসে গল্প করছিলেন, তাকেও কি ‘সবুজ পরী’ বলে ডেকেছিলেন?
- আপনার কি ধারণা আমি সবাইকে ‘পরী’ ডাকি?
- আমি কীভাবে বলব! ডাকতেই পারেন।আচ্ছা, সবুজ পরীর সাথে কথা বলার সময় লজ্জা লাগছিল না?
- আপনি আর আমি এত কাছে অথচ দূরে- এই রহস্যময়্তাটা খুব ভালো লাগছে!
- তাই বুঝি?
আবারো একটা রিনরিনে হাসির সুর ছড়িয়ে পড়ল।দু’প্রান্তই চুপ। নীরবতা ভাঙ্গল রাকিব।
- নীল পরী! আমি কাছে আসতে চাই!
- হা হা হা!
- অমন হাসছেন কেন আবার?
- বা রে! একটু আগেই যে দূরে থাকতে চাইলেন!
- হুমম! কিন্তু আর পারছি না!
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলো। অদিতির গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত ‘আমি রূপে তোমায় ভোলাব না’ আর ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’ এবং রাকিবের স্বরচিত কবিতার আবৃত্তিও ছিল তাতে।ওর বন্ধুরা ওকে কবি-সাহিত্যিকদের সাথে মেলামেশা করতে যতই বারণ করুক আজ সমস্তটা সময় ধরে এক জোড়া চোখের ওকে বার বার খুঁজে ফেরা বিরক্তির বদলে কী যেন পুলকে ভরে দিচ্ছে ওর মন!
অনুষ্ঠান শেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিকশা না পেয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটছিল অদিতি। হঠাত করেই অন্ধকার ফুঁড়ে ওর সংগী হলো রাকিব। দুজনের কেউই কথা বলছিল না অথচ অদ্ভুত এক ভালো লাগায় অনুরণিত হচ্ছিল দুজনের হৃদয়।
পরিশিষ্টঃ বিদায় নেওয়ার আগে কথা বলল রাকিব
- পরী! আমি তোমাকে একটু ছুঁতে চাই, সত্যিই তুমি কোন মায়া নও তো!
অদিতি এই প্রথম কারো ছোঁয়া পাওয়ার জন্যে ওর হাত বাড়িয়ে দিল!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:১৪