আমার বয়স যখন ১০-১১ তখন বাসায় এক মহিলা কাজ করত। কথা বলতে পারতনা উনি। তাই নাম হয়ে গিয়েছিল "বুবি"!!
বুবি আমাকে অনেক আদর করত। কিন্তু আমি ভয়ংকর ভয় পেতাম ওনাকে! বড় আপু যেই জুজুবুড়ির গল্প শোনায়ে ভাত খাওয়াত, ওনাকে দেখলে সেই জুজুবুড়ির মত মনে হত!
একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখি বাসা খালি, কেউ নাই। ভয়ে ভয়ে ভেতরের রুমে যাওয়ামাত্র পেছন থেকে বুবি আমাকে জাপটে ধরল। আমি আল্লাহ গো বলে চিৎকার দিয়ে ঝাপটাঝাপটি করতে লাগলাম আর সমানে কিল-ঘুষি চালাতে লাগলাম! বুবিও গোঁ গোঁ করে শব্দ করছিল, আমি আরও বেশি ভয় পেয়ে আরও জোরে ঘুষি দিতে লাগলাম!
হঠাৎ বুবি মুখে হাত দিয়ে বসে পড়ল। দেখি বুবির হাতে আর মুখে রক্ত! রক্ত দেখে আমি ভাবলাম বুবি মনে হয় আমার কান খেয়ে ফেলেছে!! আমি জোরে একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে পাশের বাসায় চলে গেলাম।
এরপর আম্মু এল। আমাকে যতই বুঝায় যে বুবি আদর করে আমাকে চমকে দিতে খেলাচ্ছলে জাপটে ধরেছিল, আমিতো বিশ্বাসই করিনা। হঠাৎ বুবি নিজেই এল আমাকে স্বাভাবিক করতে। তাকে দেখেতো আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়!! বুবি এসে আমার হাতের উপর হাত বুলিয়ে কিছু একটা বলতে চাইল। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে বুবির গায়ে দুটো লাত্থি দিয়ে বসলাম!!
পরে দেখি বুবি কষ্টে মাটিতে বসে ভেউ ভেউ করে কাঁদছে আর আম্মু চটাশ করে দুটো চড় লাগাল আমাকে। এরপর বলল আর কোনোদিন কারও গায়ে হাত তুললে ওনাকে যেন আর "মা" না ডাকি!
কালের পরিক্রমায় বুবি হারিয়ে গেছে। কিন্তু বুবির স্মৃতি এখনো আমাকে তাড়া করে। কখনো কোনা বোবা মানুষ দেখলেই আমার মাথা লজ্জায় নত হয়ে যায়।
কুল ড্যুড প্রজন্মের "KARMA"য় আমার চরম অবিশ্বাস,কিন্তু কখনো পায়ে ব্যাথা পেলেই বুবির কান্নামাখা চেহারাটা ভেসে উঠে আমার চোখের সামনে। কষ্ট লুকিয়ে মুচকি হেসে পায়ের দিকে তাকিয়ে বলি "ব্যাথাটা তোর প্রাপ্য ছিল"...............
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:০৮