প্রিয় ব্লগারবৃন্দ, আমার এই ব্লগের শিরোনাম দেখে শুরুতেই আমার ব্যাপারে নেগেটিভ কিছু (I mean Anti Government) না ভাবার জন্য আহবান জানাচ্ছি। আমি কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কোন প্রচারণা চালাচ্ছি না। যেহেতু আমি এই দেশের ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে ১ জন, এবং এই ১৫ কোটির রাষ্ট্রিয় এবং সামাজিক সুখ-দুঃক্ষের কারন ও মোটামুটি এক-ই, এবং সর্বোপরি আমার মনের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে যে খচখচানি ও বিগত ১ সপ্তাহ যাবৎ বিদ্যুত বিষয়ক যে অভিজ্ঞতা, মূলত তাতেই আমি এই বিষয়ে লিখতে বাধ্য হয়েছি।
বেশ কিছুদিন আগে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি ক্যাবিনেটে নাকি আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি এবং আরো অনেক পদের বেতন বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওনারা যে বেতন এতদিন ধরে পেয়ে আসছিলেন তাতে নাকি ওনাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। বিগত জোট সরকারও একই অজুহাতে বেতন বাড়িয়েছিল।
এখন আমার যেটা প্রশ্ন, সেটা হলঃ ওনারা তো একচান্সে ওনাদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নিয়েছেন কিন্তু আমরা কি পেলাম? হ্যা ভাই, পেয়েছি, পাওয়ার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। আমরা পেয়েছি ক্ষমতাসীন দলের ও তাদের অঙ্গ-সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ডে-লাইট সেভিং এর নামে সমাজের সর্বস্তরের ভোগান্তি ( আল্লাহ বাচাঁইসে আমাদের আর ডে- লাইট সেভ করতে হবেনা!!!), মন্ত্রী-এমপি দের শুল্ক-মুক্ত গাড়ী আমদানীর পুনঃ অনুমোদন, গণহারে গাড়ি ওয়ালাদের সংখ্যা বৃদ্ধি( ১টি গাড়ী ১টি প্যাসেঞ্জার প্রকল্পের সাফল্যের ঊর্ধগতি, আমরা আমজনতা যখন ১টি মিনিবাসে এই প্রচন্ড গরমে গাদাগাদি করে, জীবনবাজী রেখে ঝুলন্ত অবস্থায় ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকতে বাধ্য হই, তখন মাঝেমাঝে গাড়িয়াল(!!) রা গাড়ীর ভেতর এসি চালিয়ে করুন চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন......চুক চুক চুক), দুঃসহ ট্রাফিক জ্যাম, লাগামহীন ঊর্ধ-মুখী বাজার তথা মূল্য স্ফিতি। একদিকে যে চাষী ফসল ফলাচ্ছে, সে লাভ তো দূরে থাক investment ই তুলতে পারছেনা (সিলেটে টমেটো চাষীরা টমেটো ফেলে দিয়ে এসেছেন DC’র কার্যালয়ে, যাতে ওনাকে আর বাজার থেকে বেশী দাম দিয়ে টমেটো কিনতে না হয় !!!! আর আলু? হায়! আমার দেশে এত আলু, এত আলু......... কি আর বলব!!!) যেসব ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে সেগুলোকে রাখার মত কোল্ডস্টরেজ ও নির্মাণ হয়নি (হবে কি করে? কোল্ডস্টরেজ কে কোল্ড রাখতে তো বিদ্যুত লাগে......যেগুলো বর্তমাণে আছে, সেগুলোই তো বিদ্যুত পায়না ঠিকমত)। আবাসিক এলাকায় গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ এর Continuous Distribution Failure তথা Production Failure আরো Specifically যদি বলি তাহলে বলতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাব (Failure)। এই সংশ্লিষ্টদের ভেতরে আদৌ দেশপ্রেম বলে কোন attribute আছে কিনা সেটা প্রশ্ন না করলেও চলে, কারন এর উত্তরঃ “না”। এরা ব্যস্ত পাওয়ার প্লান্ট গুলো বেশী দরে চায়নার কোন ধ্বজভঙ্গ কোম্পানি কে দেবে নাকি ভারতের কোনো দেউলিয়া কোম্পানি কে দেবে, আর পার্সেন্টেজ এর রেট টা কি ডলারে হবে নাকি পাউন্ডে, আর ফ্রীতে ফুল-ফ্যামিলি সহ বিদেশ ভ্রমন, 5Star Hotel এ থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে বেনামে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, মার্সিডিজ, BMW কোনটা পাওয়া যাবে সে হিসাবে (হায় মাবুদ!! এইসব লোক যুগের পর যুগ এই অভাগা জাতির ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভুতের মত চেপে আছে। তোমার ভান্ডারে এত ঠাডা......২/১টা ঠাডা এদের উপর ফেললে কি এমন ক্ষতি!!!!)। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খবর নাই, এর মধ্যে কেউ কেউ ব্যস্ত খাম্বা (খুঁটি) কেনায়। তা ও ১,২,৫,১০,১০০ টা না গুনে গুনে ৫১,০০০!!! হায়রে খাম্বা!!!! ঐ খাম্বার কাস্টোমার ভাই-সাব রে জিগাই, কমিশন টা কি ডলারে হইসে? না কুয়েতি দিনারে?
ভাই আরো যদি লিখতে যাই, মনে হয় আরো অনেক কিছুই লেখা যাবে.........কিন্তু আমি যে উদ্দেশ্যে এত কথা বললাম তা হল আমাদের রাজনীতিবিদেরা এতটা নিষ্ঠুর, নৈতিক জ্ঞানশূন্য কেন? সবকিছু বাদ দিয়ে যদি বিদ্যুতের কথাই ধরি, চাহিদা যেখানে ৬০০০ মে.ওয়াট এর উপর সেখানে সাপ্লাই তার অর্ধেক (বা হয়ত কিছু বেশী), এই বিদ্যুতের জন্য প্রতিটা সেক্টর স্থবির হয়ে আছে, আর ওনারা খালি পাব্লিক কে ছেলেভুলানো গল্প শোনাচ্ছেন “২০২১”। আমি বলছিনা ২০২১ এর স্বপ্ন, আজীবন স্বপ্নই থাকবে। স্বপ্ন কে বাস্তবায়ন করতে হলে যে উদ্যোগ নেয়া দরকার, তা কি আদৌ নেয়া হয়েছে? বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হতে পারলে কি “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়া যাবে? যেসব গবেষক বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায় কিংবা প্রজেক্টে পাথরকুচি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেখান (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক) কিংবা recycling process এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন তাদের কে কেন পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়না? অথবা তারা যদি ধাপ্পাবাজী করে থাকে সেটাও কেন আমরা জানতে পারিনা? হয়তোবা তারা ডলার/পাউন্ডে কমিশন দিতে পারবেন না, তাই তারা সমস্যা সমাধান করতে পারলে ও ডিসকোয়ালিফাইড। পাবলিক কে সর্বদিক থেকে বঞ্চিত করে রাজনীতিবিদ এবং এই আমলাগং কিন্তু সুখেই থাকেন।
একদিকে বিদ্যুতের উৎপাদন নাই, তার ওপর এই লোড-শেডিং এর হাত থেকে জনগণ কে রক্ষার নামে কত কিছুই তো হল, এখন চলছে টানা ২ ঘন্টা ধরে লোড-শেডিং প্রকল্প! হায় রে কপাল!!! মানুষ কে এতটা ভোগান্তির মধ্যে রেখে এরা (মন্ত্রী-এমপি) কিভাবেপ্রতিটি পজিসনে প্রায় ২০,০০০ টাকা (ক্ষেত্র বিশেষে তার ও বেশী) করে বেতন বাড়িয়ে নেয়?
আমার প্রশ্নঃ টাকা গুলো আসবে কোথা থেকে? কারা দেবে? উত্তর হলঃ টাকা গুলো জনগণের ট্যাক্সের টাকা। আচ্ছা! জনগণের ট্যাক্সের টাকায় মন্ত্রী-এমপিদের বেতন বাড়াতে পারলে, বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোর কেন গতি হয়না? গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ এখনো কেন শুরু হতে পারেনা? অর্থমন্ত্রীর পদে যারা থাকেন তারা প্রায়ই ট্যাক্স প্রদানে সক্ষমদের ট্যাক্স দেয়ার জন্য ওয়াজ-নসিহত করেন(নিজেরা দেন কি-দেন না সেটা জনগনের জানার কোন দরকার নেই), মাঝখানে মন্ত্রী-এমপিরা টার্ম বাই টার্ম আসবে আর “সংসার চলছেনা” এই অজুহাতে বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নেবে। এদের হাব-ভাব দেখলে মনে হয় জনগণ ট্যাক্স দেবে শুধু ওনাদের বেতন-ভাতা বাড়াতে। ওনারা সরকারী বাড়িতে থাকবেন, ফাও খাবেন, আর বৌ যদি ৮/১০ টাও থাকে, নো প্রব্লেম, সংসদের ক্যফেটেরিয়া আছে না? ঐ খানে সবে ফাও বরাদ্দ দেয়া হয়। ওনারা সব সুবিধা পেয়ে যাবেন আর যাবতীয় দূর্ভোগ? কেন আমরা আছি না?
এই লেখাটা শেষ করতে আমাকে অসংখ্যবার লোডশেডিং এর মধ্যে পড়তে হয়েছে এবং প্রতি বার ২ ঘন্টা করে। এবং গত ১ সপ্তাহ ধরে এভাবেই চলছে। ৮-৯ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছিনা। মাঝেমাঝে ভাবি, আমাদের হাসিনা মা-জননীর এতগুলি ডক্টরেট ডিগ্রী, এতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় তারে ডিগ্রী দিলো, ওগুলির মধ্যে নৈতিকতার ওপর কোন ডিগ্রী কি ছিল? না, ঐটা বাদে মনেহয় সবগুলি ডিগ্রীই দেয়া হইসে। ঐ ডিগ্রী টা থাকলে আমাদের এত কষ্টের মধ্যে ফেলে উনি সদলবলে বেতন-ভাতা বাড়াতেন না।
আর বর্তমান সরকারের মূল যে চেতনা, আমি তার বিরোধী নই, তাই বলে আমি তাদের সকল কাজের অন্ধ সমর্থক ও নই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




