somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উৎস-ব

২১ শে অক্টোবর, ২০০৬ ভোর ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দলবদ্ধভাবে আমরা যেসব কাজে অংশ নেই যেমন প্রার্থনা, যুদ্ধ , শিকার এসব ছাপিয়ে উৎসব বোধ হয় সবচেয়ে জনপ্রিয়। লোকে যখন শৈশবের স্মৃতিচারন করে তখন সুখ স্মৃতিগুলোর মধ্যে প্রায়ই মেলা, ঈদ , পুজা, পার্বন চলে আসে। আমার মনে পড়ে যখন আমি নিজেও একজন শিশু ছিলাম, দিনক্ষন ঠিক করে যে সব উৎসব হতো, সেসব ক্ষেত্রে উৎসবের দিন ছাড়াও, অমুক দিনে উৎসব হবে এই আগ্রহের build up টাও খুব উপভোগ্য থাকতো। আমি অনেক সময় দাবি করতাম ঈদের চেয়ে ঈদের আগের দিন সন্ধ্যার মজা বেশী। চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ এই নিয়ে তখন আমরা যত উল্লাস করতাম শেষমেশ ঈদের দিন দেখা যেত আশানুরুপ মজার কিছু হতো না। শৈশব শেষ করে একসময় যখন বাল+ষ্ণক হলাম, তখন ঈদের স্বাভাবিক আনন্দের সাথে যোগ হলো টিনএজ ডেটিং গেম। অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঈদে ডেটিং করা তুলনামুলক ভাবে সহজ ছিল, বাবা মা বড় ভাইয়ের চোখ রাঙানীও একটু শিথিল থাকতো ঐ দিনের জন্য। ছেলেদের দলে এক দুইজন সৌভাগ্যবানের সত্যিকার বান্ধবী ছিল, বাকীদেরকে সখা হয়েই কাটাতে হতো, তাতে কি, গন্ধ শুকলেও অর্ধেক খাওয়া হয়। যৌনতা জড়ালে স্বভাবতই থ্রীলের মাত্রা বেড়ে যায়, বোধ করি এজন্যই সেরা ঈদের দিন গুলো জীবনের ঐ অংশেই সীমাবদ্ধ।

ইন্টেনসিটি চিন্তা করলে ঈদ/পুজার সমমানের বা একটুবেশী গাঢ় উৎসব বোধ হয় "বিয়ে"। যখন ছোট ছিলাম পর পর কয়েক বছর অনেকগুলো খালা, ফুপু এবং চাচার বিয়ে হলো। বিয়ের অনুষ্ঠানের সুবিধা হচ্ছে উৎসব বেশ কয়েকদিন ধরে চলে, ঠিক একদিনেই ফুরিয়ে যায় না। আর বিয়ের মধ্যে যৌনতার অভাব বোধ হয় কমই আছে। গ্রামের দিকের বিয়েগুলোতে আড়ালে আবডালে এমন সব সুযোগ পাওয়া যায়, যেগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় বড়দের চোখ এড়ানো মুস্কিল । বিয়ের হুল্লোড়ের মাঝেও চেনা অচেনা কিশোর কিশোরীদের মাঝে একরকম অদৃশ্য টানাপোড়ন চলতে থাকে ।ঢাকায় আমার ধারনা ঈদ, পুজা এসব ধর্মীয় উৎসব ছাড়া, আর সত্যিকার উল্লেখযোগ্য উৎসব বলতে নববর্ষ এবং একুশের বইমেলা । নববর্ষ আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসব। কয়েকটা রাষ্ট্রীয় উৎসবও আছে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস। সরকারী খরচে প্যারেড, আর কিছু টুকটাক অনুষ্ঠান ছাড়া এসব উৎসবের প্রভাব ভীষন সীমিতই বলতে হয়।

উৎসব অবশ্য কোনভাবেই বাঙালীর একার সম্পত্তি নয়। সবদেশে, সব জাতির মধ্যেই নানা রকম উৎসব আছে। আধুনিক ধমর্ ,রাষ্ট্র, সংস্কৃতি গুলোর আবির্ভাবেরও হাজার হাজার বছর আগে থেকে মানব সমাজে উৎসব আছে। যেসব আদিমতম সমাজ এখনও টিকে আছে তাদের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের উৎসব প্রচলিত। প্রশ্ন হচ্ছে উৎসবের এত ছড়াছড়ি কেন? ধর্ম, দেশ এদের উৎসব নিয়ে এত মাথা ব্যাথা কেন? একদম সব ধর্মেই আর কিছু না থাকুক উৎসবের ব্যাবস্থা আছে। এসব উত্তরের জন্য পুরো ব্যপারটা উলটো দিক থেকে দেখা যাক।

যদি কেউ আমাকে বলে এমন একটা সংস্কৃতি ডিজাইন করতে যেটা বহু বছর টিকে থাকবে, তাহলে আমি কি কি উপাদান এর মধ্যে যোগ করবো? [লিংক=যঃঃঢ়://িি.িংড়সবযিবৎবরহনষড়ম.হবঃ/ঁঃংধনষড়ম/ঢ়ড়ংঃ/5065]মিম[/লিংক] নিয়ে আমার একটা লেখা ছিল, হাতে সময় থাকলে পড়ে নিতে পারেন। ধর্ম , সংস্কৃতি প্রত্যেকেই এক ধরনের মিম বলা যেতে পারে। জিন বা ভাইরাসের মতো এদের সাফল্য নির্ভর করে হোস্টকে কতখানি সফলভাবে exploit করতে পারছে তার ওপর। হোস্টের দুর্বল দিকগুলোর ওপর ভিত্তি করে এরা বিস্তার লাভ করে। যেহেতু উৎসবের দিকে মানুষ হিসেবে আমাদের আকর্ষন আছে, সুতরাং একটা সফল সংস্কৃতি মিম নিশ্চিতভাবে মানুষের এ দুর্বলতাকে (আরো অন্যান্য দুর্বলতা সহ) কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। সংস্কৃতি যেটা করে উৎসবকে রিচুয়ালের রুপ দেয়, পুজা, ক্রিসমাস, ঈদ প্রত্যেক উৎসবের সাথেই খেয়াল করলে দেখবেন বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতাও জড়িয়ে দেয়া আছে। যেসব সংস্কৃতি উৎসবকে কাজে লাগাতে পারে না, তাদের অনেকের ভিত্তিই ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়, ঠিক যেমন আমাদের 26শে মার্চ আর 16ই ডিসেম্বরের অবস্থা। 30 বছরেই পাত্তা না পাওয়ার মত অবস্থা। কয়জন শিশু কিশোর আছে যারা 16ই ডিসেম্বরের জন্য ঈদের মত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে?

আমার ধারনা এটা আমাদের একটা পরিকল্পনার ভুল। আরও অন্যান্য মিম যেমন থার্টি ফার্স্ট নাইট বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে কিন্তু গত এক দশকেই ভালো রকম বাসা বেধেছে বাংলাদেশে, অথচ বিজয় দিবস পারল না। থার্টি ফার্স্ট বা ভালোবাসা দিবস দুটোই যৌনতাকে চমৎকার ভাবে ব্যবহার (exploit?) করেছে। 16ই ডিসেম্বর বা 26শে মার্চ নিয়ে এরকম মেমেটিক কোন প্ল্যান করা যায়? যেমন হতে পারে ঐ দিন গুলোতে আমরা [লিংক=যঃঃঢ়://বহ.রিশরঢ়বফরধ.ড়ৎম/রিশর/ঐধষষড়বিবহ]Halloween[/লিংক] এর আদলে একটা থিম বেজড কিছু করব, যেখানে কিশোর কিশোরীরা অংশগ্রহন করবে? অথবা পাবলিক কনসার্ট এবং শেষে আতশবাজি পোড়ানো? উৎসবগুলোর মধ্যে মানবীয় আকর্ষক উপাদান থাকতে হবে। একদমই সরকারী রাস্তায় ফেলে রাখলে জাতীয় দিবসগুলো অচিরেই আরো মুল্যহীন হয়ে পড়বে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×