অবকাশ যাপনের ফুসরতে প্রিয় বন্ধুর অনুরোধে
ঘুরে এলাম ঘানা’র কেপ কোস্ট।
পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত এই স্থানে প্রসিদ্ধ
এখানকার কেপ কোস্ট ক্যাসেল।
দাস প্রথাকে ঘৃনা জানিয়ে
এখানে নির্মিত হয়েছে যাদুঘর।
সংস্কার করা হয়েছে প্রাসাদের ঘর-দোর।
ট্যুর গাইডের ৪৫ মিনিটের একঘেয়েমী মার্কা বক্তৃতা
আমাকে বিন্দুমাত্র বিরক্ত করতে পারল না।
মোহাবিষ্ট মাতালের ঘোর লাগা বিবেক নিয়ে
ঘুরে ঘুরে দেখে নিলাম -
পুরুষ দাসের কক্ষ,
নারী দাসীদের কক্ষ ,
শিকল-বেড়ী, নির্যাতনের যন্ত্রপাতি,
পেইন্টিং, মূর্তি, দাস প্রথার ইতিহাস।
পানির কূপ, শ হীদ বৃটিশ সৈনিকের সমাধি,
ডোর অফ রিটার্ণ আর ডোর অফ নো রিটার্ণ।
প্রাসাদ রক্ষার জন্য কামানের সারি, গোলার স্তুপ।
আঁধার কুঠুরির উঁচুতে চৌকোনা ফুটো – আলো বাতাসের পথ ।
প্রভুকে অনুযোগ করবার জন্য আদি আফ্রিকান উপাসনালায়।
মৃত্যুর প্রহরের অপেক্ষায় অবাধ্য দাসদের জন্য উপযুক্ত শাস্তি প্রকোষ্ঠ;
পিপাসা কাতর কেউ কিংবা আশু মৃত্যুকামনায় বিভোর কোন বন্দীর
মেঝেতে আর দেয়ালে আপ্রাণ আঁচরের দাগ !
সাদা কালো হলদে তামাটে… কত পদের লোক পয়সা কেটে
অপার বিস্ময়ে দেখে নিচ্ছে মানব সভ্যতার কলঙ্কিত অধ্যায়।
ছকে বাধা ট্যুর শেষে গাইড কষ্টের হাসি হেসে জানালো-
‘আমার নাম ইমান্যুয়েল। এসো সকলে মিলে শপথ নিই-
অতীতের কালিমা মুছে আমরা আগামীতে মানবতার গান গাইবো।‘
আমি ভীড় ঠেলে কাছে এগিয়ে,
গাইডের সাথে হাত মিলিয়ে- বিদেশী ভাষায় ধন্যবাদ জানালাম।
আর ওকে একান্তে প্রশ্ন করলাম;
‘ দাসত্ব থেকে কি আজও আমরা মুক্তি পেয়েছি, বন্ধু ?’
এই অনাকাঙ্খিত প্রশ্নে ইমান্যুয়েল হকচকিয়ে গেল।
আমি ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললাম-
একদিন সময় আসবে, যখন পৃথিবীর
প্রতিটি ঘরে ঘরে দাসত্বের যাদুঘর নির্মিত হবে।
আপাতত মাটির বুকে আমরা সকলেই আঁচড় কেটে চলেছি…!
ট্যুর গাইডের হা হয়ে থাকা মুখটিকে পিছনে ফেলে
আমি ধীর পায়ে প্রাসাদ ছেড়ে রাস্তার দিকে পা বাড়ালাম ।।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৮