আম্মু দেখ দেখ পাগলটা তার প্যান্টে শি শি করে দিয়েছে । এখন আবার ওই শি শি র উপরেই বসে আছে । ছি... ছি ... কি নোংরা পাগলটা দেখ আম্মু ।
এফ ডি সির মোড়ের সিগন্যালে তিথিদের গাড়ি দাড়িয়ে আছে । তিথি বসে আছে পেছনের ছিটে । গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে দেখতে কথাগুলি বলল নাজমাকে । ওরা যাবে মগবাজার। সোনারগাঁয়ে ডিনার শেষে ওরা বাসায় ফিরছে। নাজমার স্বামী নাবিল কে অফিস এর বিভিন্ন পার্টি তে থাকতে হয় । নাবিল পার্টিতে আজ তিথি ও নাজমাকে নিয়ে গিয়েছিল ।
তিথি জানালা থেকে চোখ সরাতে পারছেনা ।
নাজমার বিরক্ত লাগতে লাগলো। কি বিশ্রী ভাবে পাগলটা পেশাবের ওপর বসে আছে । এদের কাণ্ডজ্ঞান বলতে কিছু নেই ।
>বাবা , পাগলটা শি শি র উপরে বসে আছে কেন ? ওর কি ঘিন্না লাগছেনা ?
>নাবিল নাজমাকে লক্ষ্য করে বলল, রাবিশ । এই নোংরা লোকগুলোই ছিটিটাকে নষ্ট করে ফেলছে। এদেরকে ধরে ধরে চাবকানো দরকার ।
নাবিল তিথির কাণ্ড দেখে মজা পাচ্ছে । অবশ্য এটা পার্টি তে ড্রিংক করার কারনেও হতে পারে । আজ রাতে প্রচুর পরিমানে রেড ওয়াইন খেয়েছে নাবিল। ওর কেমন যেন নেশা নেশা লাগছে।
নাবিল আস্তে করে পাশে বসা নাজমার উরুতে চাপ দিল।তার নেশা ভালোমতোই হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। অন্য সময় হলে নাজমার জন্য শারীরিক আকর্ষণ বোধ করাটা ওর কাছে হাস্যকর লাগতো ।
নাজমা এক ঝটকায় নাবিলের হাতটি সরিয়ে দেয়। মুখে বলে, ডোন্ট ট্রাই টু ক্রিয়েট এ সিন। নাজমার কথায় নাবিলের কোন ভাবান্তর হল না। তবে খুব সূক্ষ্ম ভাবে মনে হল ও একটা দীর্ঘশ্বাস লুকালো।
নাজমা একবার বিষ দৃষ্টিতে নাবিলের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েই আবার ওর আই ফোনে টুইটিং এ মন দিল।
আমার নাম নসু । আমি এফ ডি সির মোড়ের সিগন্যালে থাকি । আমার বয়স যে ঠিক কতো আমি জানিনা । দশ বছর আগে গেরামের লোকজন আমারে আমার গেরাম থেইকা ধইরা আইনা এফ ডি সির মোড়ে ছাইরা দিয়া গেছে । কারন বলতে একটাই । আমার নাকি মাথায় গণ্ডগোল । আমার অবশ্যি তা মনে হয় না । গেরামের কথা আমার ঠিক স্মরণে আসে না। শুধু জরিনার জইন্নে মন কান্দে। জরিনা আমার পরিবারের নাম ।
মাথার সমস্যা আমারে খুব একটা টেনশন দেয়না । বরঞ্চ একদিক দিয়ে মাথাখারাপের একটা সুবিধাই আছে। সবাই আমারে দেখলে রাস্তা ছাইড়া দেয় । নিজেরে তখন মন্ত্রী মিনিস্টারের মতো লাগে। মাথা যখন আউলা হয়ে যায় তখন আমার গায়ে কাপড় রাখতে ইচ্ছা করে না। কাপর সইলে থাকলে শরীর কুটকুট করে। কাপড় খুলে ফেললে তখন আরাম আরাম লাগতে থাকে । কিন্তু আশেপাশের লোকজনের সেটা মনে হয় ভালো লাগে না । সার্জেন্ট লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে । আমাকে তখন দৌড় দিতে হয় এফ ডি সির পাশের রেল লাইন এর দিকে । ওখানে গেলেও বিপদ আছে । বাচ্চা পুলাপাইন গুলা বড়ই তাক্ত বিরক্ত করে । হাতের কাছে ইটা-পাথর যাই পায় আমারে নিশানা কইরা ডেলা মারে ।
চান্দের মতন মাইয়াডা আমার দিকে চায়া আছে । কি সুন্দর পরির মতন মাইয়া। আহারে! তিথির দিকে তাকিয়ে নসু মনে মনে কথাগুলি বলল ।
নসু তার মেয়ের কথা মনে করার চেষ্টা করল। ওর চোখে লাল ফ্রক পরা শ্যামলা গায়ের একটি বাচ্চা মেয়ের ছবি ভেসে উঠলো । যার সারাদিন কাজ ছিল মাটির ময়না পাখিটা নিয়ে খেলা করা। ওর মনে পড়ে হাট থেকে দশ টাকা দিয়ে ময়নাটা ওর মেয়েকে ও কিনে দিয়েছিল । ময়না পেয়ে মেয়ের খুশি দেখে কে । সারাদিন ময়নাটারে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াত ।
হ্যাঁ , গাড়িতে বসা ওই মেয়েটার বয়সীই ত ছিল ওর মেয়েটা । হটাৎ তিন দিনের জ্বরে চুপচাপ মরে গেল মেয়েটা। নসু আর কিছু ভাবতে পারে না। ওর মাথাটা আবার কেমন যেন আউলা লাগতে থাকে।
এফ ডি সির সিগন্যালের কাছে বিশাল একটা জটলা। একটা ট্রাক কিছুক্ষন আগে একজনকে চাপা দিয়ে চলে গেছে। লোকজন বলাবলি করছে দোষ ড্রাইভারের না। লোকটির। আচমকাই সে নাকি ট্রাকের সামনে এসে দাড়ায়।
সবাই বলাবলি করতে থাকে লোকটির মাথায় নাকি সমস্যা ছিল। সিগন্যালেই নাকি সে থাকত। জটলা একসময় পাতলা হয়। বিশেষ কোন মানুষ মারা যায়নি শুনে সকলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
সোনারগাঁয়ে পার্টি শেষে তারা তিনজন বাসায় যাচ্ছে। আজ নাবিলের পাশে তার মেয়ে তিথি বসে আছে। তিথি আজ লাল রঙের একটা ফ্রক পরেছে। তাকে দেখাচ্ছে অনেকটাই নসুর মেয়েটার মতো। সিগন্যালে গাড়ি থামতেই তিথির চোখ খুজতে লাগলো নসুকে।রাত বেশি হওয়ার কারনে খুব দ্রুত সিগন্যাল ছেড়ে দিল। তিথিদের গাড়ি সবগুলো গাড়িকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে চলল।