somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিরোনামহীনঃ ১ (গল্প)

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুটা বিরক্তি আর অসস্তি নিয়ে লেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে মবিন। নিজেকে ঠিক কি বলে প্রবোধ দেবে বুঝতে পারছেনা। গোটা গোটা হাতে লেখা একটি চিঠি হাতে নিয়ে মবিন চেয়ারে বসে আছে। ঘরের আলো অনেকক্ষণ হলো কমে গিয়েছে। উঠে গিয়ে যে বাতি জ্বালাবে সেই ইচ্ছেটাও ওর করছেনা।
আচমকা কলিং বেলের শব্দে তার সম্বতি ফিরে এলো । এই সন্ধ্যে বেলায় কে আসতে পারে আমার কাছে?
নিজেই নিজেকে প্রশ্নটা করে চেয়ার ছেড়ে উঠলো মবিন।
দরজা খুলে দেখতে পেল পাশের ফ্লাটের মেয়েটা হাতে এক বিশাল ট্রে নিয়ে দরজা জুড়ে দাড়িয়ে আছে।
মবিন কে দেখেই হাসিমুখে বলল , ভাইয়া ঘর অন্ধকার করে রেখেছেন কেন? লাইট জ্বালান।
মবিন তাড়াতাড়ি লাইট জ্বাললো।
>> আপনি আজ অফিসে যাননি দেখে আম্মা এগুলো আপনার জন্য পাঠিয়েছেন। খাবারগুলো কোথায় রাখবো?
মবিনের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এই মহিলা চায় কি? দুদিন অন্তর অন্তর এটা সেটা পাঠাচ্ছে। সেদিন আবার রাতের খাবার তাদের বাসায় খেতে বললেন। না করাতে নিজেই খাবার নিয়ে এসে সামনে বসে থেকে খাওয়ালেন।
যতই মবিন বলে সামনে কেউ বসে থাকলে আমি খেতে পারিনা ততই তিনি হাসি হাসি মুখ করে মবিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
মবিনের একবার মনে হল মেয়েটাকে বলে, আমি এক্ষুনি বেরুচ্ছি এগুলো নিয়ে যাও। তারপরই আবার কি মনে করে বলল, চেয়ারটার ওপরে রাখো।
মনে মনে নিজের ওপরে যথেষ্টই বিরক্ত হল সে। ইদানিং এই এক রোগ হয়েছে ওর । আর্থিক অস্বচ্ছলতা যে একটা মানুষকে কতখানি মেরুদণ্ডহীন করে তোলে সেটা সে বেশ কিছুদিন যাবত টের পাচ্ছে।

গত মাসে চাকরিটা চলে যাওয়ার পর থেকে এটা হয়েছে। সরাসরি কাউকেই না করতে পারছেনা।
মেয়েটা খাবারটা রেখে দাড়িয়ে আছে। মবিন কি বলবে ভেবে পেল না। এই মেয়ের নামটা মনে থাকেনা ওর। অথচ খুবই সহজ একটা নাম । ফুলের নামে নাম এটাই শুধু ওর মনে আছে। কি ফুল এখন আর মনে করতে পারছেনা। কি বলবে বুঝে উঠতে না পেরে সে মাথা চুলকাতে লাগলো। একজন খাবার নিয়ে এসেছে তাকে তো আর সাথে সাথেই চলে যেতে বলা যায়না।
আমতা আমতা করে মবিন বলল, তারপর তোমার লেখাপড়ার কি খবর?
>> কোন খবর নেই। আমাকে আর কলেজে যেতে দিবেনা বাসা থেকে।
> কেন?
>> ছোটমামা আমার জন্য ছেলে দেখছেন। আমি আর পড়াশুনা করি তা মামারা পছন্দ করছেন না।
> কেন? তুমিতো এখনো ইন্টারটাও পাস করনি। তোমার নিজের কি পড়াশুনা করতে ভালো লাগেনা?
>> নাহ। পড়াশুনা করে আর কি হবে। বিয়ের পর তো সেই রান্নাঘরেই জীবন পার করে দিতে হবে। আমি ঠিক করেছি একটা রান্না শেখার ক্লাসে ভর্তি হয়ে যাবো। বিয়ের পর শ্বশুর শাশুড়িকে মজার মজার রান্না করে খাওয়াবো।

মবিন মেয়েটার কথাবলার ভঙ্গি দেখে মজা পেল। এতো বাচ্চা একটা মেয়ে অথচ কি ফরফর করে কথাগুলো বলে যাচ্ছে ।
>> ভাইয়া আমি এখন যাই। পরে এসে বাটিগুলো নিয়ে যাবো। মবিনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেয়েটি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
দরজা লাগিয়ে দিয়ে সে খাটে এসে বসলো। চিঠির ব্যাপারটা আবার মনে পড়ে গেল।
গতকাল রাত্রিকালীন হাঁটাহাঁটি শেষ করে ঘরে ঢুকে মবিন দেখতে পায় মেঝেতে একটা খাম পড়ে আছে। হাতে নিতেই মিষ্টি একটা গন্ধ পেল সে। হাঁটাহাঁটি করে এসে যথেষ্টই ক্লান্ত লাগছিল ওর তাই আর খাম খুলে পড়তে ইচ্ছে করেনি। আজ বিকেলে খাম খুলে দেখে ভেতরে লেখা………
“তোমার হৃদয় আজ ঘাস
বাতাসের ওপারে বাতাস-
আকাশের ওপারে আকাশ।’’
তিন লাইনের চিঠি । এই লেখার মানে কি? কোন নাম ঠিকানাও লেখা নেই খামের ওপর। কে লিখতে পারে এই চিঠি? মিতু কখনই এতো কাব্য করবেনা। ওর মধ্যে একটা পাথর পাথর ভাব আছে। পুতু পুতু প্রেমের চিঠি ও কখনই লিখবেনা। অথচ চিঠি লেখার মতো আর কেউ নেই। আর ওর বয়সটাও এমন না যে কেউ ওকে এমন চিঠি লিখবে।
বিরক্তি নিয়ে সে বালিশের নিচ থেকে সিগারেট আর লাইটারটা বের করলো। চাকরি যাওয়ার পর থেকে সিগারেট খাওয়াটা কমিয়ে দিতে হয়েছে। আগে যেখানে এক প্যাকেট একদিনে শেষ হতো এখন টেনেটুনে সেটাকে দুইদিন চালাতে হয়। তবে মাঝে মধ্যে যখন মিতু আসে তখন কথা আলাদা। মিতু যখনি আসে এক প্যাকেট সিগারেট সঙ্গে করে নিয়ে আসে। সাথে থাকে একটা নতুন লাইটার । ওর ঘরে এখন বর্তমানে ১৭ টা লাইটার জমেছে। কেন জানি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সেগুলি ফেলতে ইচ্ছে করেনি ওর।
চলবে …
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৩
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×