somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল বাংলাদেশের শ্লোগান দেওয়া সরকার কি বিসিএস পরীক্ষাটাকে ডিজিটাল করবেন?

০৬ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সকল সমস্যার মূলে এবং সমাধানের প্রথম ধাপেই দেখা যায় একটা সুস্থ , জবাব্দিহিমূলক এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রয়োজন। শিক্ষিত পলিসি মেকার এবং রাজনীতিবিদ প্রয়োজন। যে কোন সমস্যা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন, আলোচনা শেষ হইতে হইতে দেখা যাবে মূল সমস্যা হইলো রাজনীতি বা রাজনীতিবিদ। তারা ভালো পলিসি নেয় না অথবা ভালো পলিসির বাস্তবায়ন করে না। এখন মনে করুন, সরকারের উপরে নির্ভরশীল থাকবেন না চিন্তা করে নিজেরাই সমাধান বের করতে বসে গেলেন। এখন সেইটা শিক্ষা হোক, স্বাস্থ্য হোক, লেবার কিংবা ধর্ম হোক, ঘুরে ফিরে যত রকম টেকনিকাল সমাধানই বের করেন না কেন, প্রয়োগের সময় দেখা যায় যে সরকার তথা রাজনীতিবিদদের হাতেই সর্ব প্রকার প্রায়োগিক ক্ষমতা নিহিত। যেহেতু জনগণ শুধুমাত্র ভোটের মালিক কিন্তু নির্বাচিত সরকারের মাত্র ১ টাকা কোথায় কি ভাবে খরচ হবে, সেই সিদ্ধান্তও তারা নিতে পারে না, কিংবা দেশের স্বার্থে নতুন কোন পলিসি/সিদ্ধান্ত জনগণের সাথে আলোচনা করে নেওয়া হয় না ( ইদানিং অত্যন্ত স্বল্প আকারে শুরু হয়েছে কিন্তু কয়জন আর ওয়েবে গিয়ে মত দিতে পারে?) সুতরাং, দেশ পরিচালনার ক্ষমতা আসলে সরকারী দলের কয়েকজন ব্যক্তির হাতে এবং ভোটের কার্যকারিতা বাস্তবে শূন্য। ফলে ভোটের পরে সরকার যদি একেবারেই জনস্বার্থবিরোধী কিছু করে, পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণ কিছুই করতে পারে না। আবার জনগণ সরকারকে দিয়ে যা করিয়ে নিতে চায়, সেইটাও করাতে পারে না।

একটা মাত্র উদাহরণ দেই। এই সরকার ক্ষমতায় এসেছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপরেখা নিয়ে। অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিলো প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি করে চাকুরি। এখন চিন্তা করুন সরকারী চাকুরির বি সি এস পরীক্ষার কথা। এই প্রক্রিয়া তো নিজেই জটে পড়ে জটায়ু হয়ে বসে আছে। জি আর ই পরীক্ষার কথা জানেন? এইটে বহু আগেই ডিজিটাইজড করে ফেলা হয়েছে। ফলে আপনি যদি কম্পিউটার বেসড জি আর ই দেন , তাহলে সারা বছর জুড়ে যে কোন সময়ে দিতে পারবেন। ইন্টারএক্টিভ কম্পিউটার প্রোগ্রাম আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী পরীক্ষা নিয়ে সাথে সাথেই রিটেনের ফলাফল জানিয়ে দেবে। সময়ের সাথে সাথে ডিফিকাল্টি লেভেল বাড়িয়ে প্রশ্ন করে দেখবে সর্বোচ্চ কতটা কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনি সক্ষম। আবার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে ভুল করলে ডিফিকাল্টি লেভেল কমিয়ে পরের প্রশ্ন করবে। আপনার দেওয়া আগের উত্তরের উপরে নির্ভর করবে পরের প্রশ্ন কি হবে।

ফলে একজনের প্রশ্নের সাথে আরেকজনের প্রশ্ন মালা কখনোই মিলবে না। বিশাল প্রশ্ন ব্যাংকের কোন প্রশ্ন আপনাকে করা হবে আপনি কখনোই জানবেন না। ফলে এই পদ্ধতিতে নকল বা প্রশ্ন ফাঁস করার সম্ভব না। আপনার কম্পিটিটর আপনি নিজে। সবচেয়ে বড় কথা, এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে কম সময়ে কারো পক্ষে পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল নিয়ে নেওয়া সম্ভব।

এখন কথা হলো প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে, প্রশ্ন বানিয়ে, সেইটা ফাঁসের ঝামেলা সয়ে, রুটিন করে পরীক্ষা নিয়ে, ফলাফল দিতে দিতে ২-৩ বছর জীবন থেকে নষ্ট করার কোন দরকার আছে?

ডিজিটাল বাংলাদেশের বিশাল স্লোগান ধারী সরকার বি সি এস পরীক্ষাকে জি আর ঈ’র আদলে কেন ডিজিটাইজড করছে না? এতে করে,
১। যে যখন ব্যাচেলর পাশ করে, তার সাথে সাথেই নিজের সুবিধা অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে পারে। বছরের যে কোন সময়।
২। কম্পিউটারে পরীক্ষা দিতে হলে তাকে বাধ্য হয়েই কম্পিউটারের ন্যুনতম ব্যবহার শিখতেই হবে।
৩। এম সি কিউ ধরনের ফলাফল পরীক্ষা শেষের সাথে সাথেই পেয়ে যাবে। সর্বনিম্ন মার্কের মান দেওয়া থাকলে সাথে সাথেই জানা যাবে পরের ধাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে কি না।
৪। প্রতি পরীক্ষার্থীর জন্য আলাদা পার্সোনাল কম্পিউটারে আলাদা আলাদা রচনামূলক প্রশ্ন পত্র দেওয়া যেতে পারে। পরীক্ষার্থী ওয়ার্ডে উত্তর লিখে সাবমিট করে দিবে। ফলে সব ধরনের মনিটরিং ( কে কখন কোন প্রশ্নের উত্তর জমা দিলো বা দিলো না) করা যাবে। কেউ কারো কাছ থেকে নকল করতে পারবে না।
৫। কোন এক্সামিনার কার উত্তর কখন গ্রেডিং করলেন তাও মনিটর করা যাবে।
৬। সারা বছর জুড়ে পরীক্ষা হলে স্কুল কলেজ বন্ধ করে পরীক্ষা নেওয়া লাগবে না। এর জন্য প্রতি জেলায়, উপজেলায় কর্ম কমিশনের পরীক্ষা হল থাকলেই চলবে।
৭। প্রচুর মানুষের/ এক্সামিনারের কর্ম সংস্থান হবে ।
৮। সবাই সবার নিজ নিজ সময় মত সরকারী কাজে যোগদান করবেন। পরের বি সি এস কবে হবে, এই আশায় বসে বসে জীবন থেকে বছরের পর বছর হারাতে হবে না।
৯। বি সি এস এর ব্যবহারিক পরীক্ষা বা ভাইভা নেওয়ার সময় কম্পিউটার স্কিল পরীক্ষা করা যাবে।

বি সি এস পরীক্ষায় সরকারী চাকুরীর যোগ্যতা হিসেবে ড্রাইভিং, সাতার এবং কম্পিউটার স্কিল যুক্ত করুন
ড্রাইভিং এবং সাতার কেন জানা দরকার সেই আলোচনায় যাচ্ছি না। এইটা সকলেই বুঝবেন। কম্পিউটার ব্যবহারের স্কিল বা যোগ্যতা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করুন। এইটা কে না জানে, যে কোন দেশের কম্পিউটার রিলেটেড যে কোন ব্যবসা , শিল্পখাতের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হতে হয় সরকারকে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পায় না বলেই আজো বাংলাদেশে সফট ওয়ার শিল্প বড় আকারে গড়ে উঠে নাই। এই পৃষ্ঠপোষকতা তখনই দেওয়া সম্ভব যখন সরকারী কর্মকর্তারা নিজেরা কম্পিউটার ব্যবহার করতে শিখবেন, শিখতে বাধ্য হবেন। সংসদ সদস্যদের ই মেইলে চিঠি পত্র প্রেরণ একটা ভালো উদ্যোগ। এখন এই জিনিসটাই যদি ঢাকা থেকে সারা দেশ আর সারা দেশ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার অর্থাৎ রাজধানীতে তথ্য/ চিঠি/ সরকারী মেমো ইত্যাদি আদান প্রদানের কালচার চালু হয়, তাহলে কাজে কর্মে গতি আসবে অনেক বেশি।

এই ব্যাপারে মনে পড়ে। তখন সরকার থেকে ব্যাংক গুলোতে কম্পিউটার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এইটা বহু বছর আগের কথা। আমি অনেক ছোট্ট। আব্বুর সাথে একদিন ব্যাংক ম্যানেজারের রুমে গিয়ে দেখি ইয়া বিশাল কি যেন একটা চারকোনা জিনিস প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা। কথোপকথনে বুঝলাম জিনিসটা এমন একটা কিছু যেইটা ব্যবহার করাটা বাধ্যতামূলক বলে অফিসে আছে। ম্যানেজার ব্যবহার জানেন না, শিখবেনও না। তাই সুন্দর করে ঢেকে রেখেছেন। কাজ কর্ম সব কাগজেই করেন। জিনিসটা ছিলো কম্পিউটার। যেই সেই জিনিস না, রীতিমত ব্র্যান্ড কম্পিউটার।

কালকে সংবাদ পড়ে এই কথা মনে পড়ে গেলো। এনালগ মানে অশিক্ষিত সাংসদরা নিজেরাও কম্পিউটার শিখে এগুবেন না, দেশকেও এগিয়ে যেতে দেবেন না। ইনারা দলের নেতার জন্য নাকি জীবন দিয়ে দেবেন, সারা জীবন নাকি জনগণের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত, দেশের জন্য রক্ত দিতে প্রস্তুত কিন্তু একটা ই মেইল কি ভাবে করতে হয় সেইটা শিখার কষ্ট করতে রাজি না।

প্রিয় সরকার,
এই ভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ কি ভাবে হবে? প্রাইভেট সেক্টরের তরুণ প্রজন্ম নাসার জন্য রোবট বানায়। সারা দুনিয়াকে কম্পিউটার, মোবাইল, ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তারা নিজেদের মুঠোর মধ্যে নিয়ে এসেছে। আর এই দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারীরা এখনো একটা বি সি এস পরীক্ষা, কিংবা একটা চিঠি ডিজিটালি করতে পারে না?
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×