-বাব্বো, দেখো ফুরিং
-আমি মুগ্ধ চোখে রাইসির দিকে তাকিয়ে থাকি,মেয়েটা কখনো জোনাকী দেখেনি,গ্রামে এসে সন্ধ্যার অন্ধকারে জোনাকী দেখে মনে করেছে কোন ফড়িং হবে।
-আম্মু,এটা জোনাকী,ফড়িং না।
-জুনাকী?
-জোনাকী
-জুনাকী?
আমি মনে মনে হাসলাম,রাইসি কিছু কিছু শব্দে উ ব্যাপারটি লাগিয়ে দেয়।
-বাব্বো,দেখো, জোনাকীরা কিছু বলছে।
-আমি কান পেতে শুনলাম,ঝাউয়ের পাতা দুলছে,শনশন ঝনঝনে,এক ঝাক বাতাস যেন পাতায় পাতায় ঘষা খেয়ে কিছু একটা বলছে,ঝন ঝন শন শন।
-দেখসু বাব্বো? রাইসি বিজয়ীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।
-বাব্বো, আমি যদি জুনাকী হতাম ? আমার পেছনেও কি লাইট জ্বলতো?
আমি হেসে ফেললাম,কি অদ্ভুদ ব্যাপার,আমার মাথায় কল্পনা এসেছে রাইসি পেছনে লাইট নিয়ে উড়ছে।
-চলো, রাইসী ভেতরে যাই,তোমার মাম্মী অপেক্ষা করছে,আমি রাইসির হাত ধরে বাড়ীর ভেতরে আসলাম। রাইসি পুরো রাস্তা বু বু করে সাউন্ড করতে করতে আসলো যেন সে জোনাকী হয়ে গেছে,আসার আগে রাইসি হাত নেড়ে বললো,যাই জুনাকীরা,আমি আব্বার আসবু।
-তোমার আক্কেল বলতে কিছুই কি নেই? জানো মেয়েটার ঠান্ডা লাগে তারপরো এই ঠান্ডার ভেতর মেয়েটাকে বাইরে নিয়ে গেছো? আমার মেয়ের যদি কিছু হয়, নার্গিস গজ গজ করতে থাকল।
হঠাত আমার খেয়াল হলো, আমি বসে আছি অন্ধকারে, একটী ছোট কবরের সামনে,আমার ছোট্ট রাইসির কবরের সামনে,আমার রাইসি গ্রামে আসার পরদিন পুকুরে ডুবে মারা যায়,কি নিস্পাপ হয়ে দুপুরের ছায়া ছায়া পুকুর আমার রাইসির শরীর পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছিলো,নার্গিসকে আবার কাল রিলিজ দেবে ঢাকা মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে,আমি রাইসির কবরের সামনে বসে থাকি,অন্ধকার, চারপাশে পাতায় পাতায় জোছনা আর বাতাসের মায়া মায়া অদ্ভুতুড়ে গুঞ্জন,জোনাকী গুলো উড়ছে,কিছু আমার কাধে বসে আছে,বাতাসে বাতাসে জোনাকীদের অদ্ভুদ অভিমানী হাহাকার, রাইসি রাইসি,আমি দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে কি প্রার্থনা করবো খুজে পাইনা,আমার চারপাশের অন্ধকার আরো অন্ধকার হয়ে আসে,জোছনা খুব ধুসর হয়ে আসে,আমার গলার মাঝে কি যেন আটকে আটকে নামে,আমি যেন শুনতে পাই,কে যেন জোনাকীদের মাঝে আছে,গাঢ় অন্ধকারে গাছের পাতা কাপা জোছনা দেখে,একজন বিশাল মানুষ হাটু গেড়ে বসে থাকে, মানুষটার কাধে পিঠে এক পাল কোমল জোনাকী আর বাতাসে বাতাসে তুমুল ফিসিফিসে অন্ধকার ,বাব্বো বাব্বো.........
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০১