ঐ দিন রাইতেই ছাত্রদল সিদ্ধান্ত নিলো তারা নিজেগো নিরাপত্তার স্বার্থে এক হলে থাকবো। আর তাই ছাত্রদলের সব কর্মীরা আল বেরুনী মেইন বিলডিং-এ গিয়া উঠলো। জাবি-এর চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ প্রায় অনুপস্থিত ক্যাম্পাসে, যারা ছিলো তারাও অনেকে ভয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লো। আর আমরা গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্য ভূক্ত দুই সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আর বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা যে যার হলে। আমি থাকতাম মাওলানা ভাসানী হলে, ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আহসানও ছিলো। একই হলে দুই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক! ছেলেরা আগে কিছুটা প্রতিদ্্বন্দ্বিতার দেখা পাইতো।কিন্তু শিবির বিরোধী আন্দোলনে আমরা একদম একাট্টা। সব বিরোধ তুইলা রাখছিলাম শিকায়।
ইনফরমেশন ছিলো গেরুয়া গ্রামে শিবিরের ঘাটি। আওয়াল কন্ট্রাক্টরের বাড়িতে মিটিং কইরাই তারা ক্যাম্পাস আক্রমণের পরিকল্পণা করছিলো। ভাসানী হল ছিলো গেরুয়ার সবচেয়ে কাছে, গেরুয়া গ্রামের বট গাছের ছায়ায় দাঁড়াইয়া ভাসানী হলের ছাঁদে দাঁড়ানো যে কাউরে গুলি কইরা ফালাইয়া দেওন সম্ভব, এতো কাছে! আর তাই শিবির মুক্ত করার রাতেই আমাগো হলে ফিরা পাহারা দেওনের প্ল্যান করতে হইলো, হলের বিভিন্ন ব্লক কার দায়িত্বে থাকবো, ছাত্ররা কেমনে পালাক্রমে হল পাহারা দিবো, হলের ছাঁদে ইট উঠাইবো কারা, কখন। হলগেইটে আমরা বসলাম।আমি আর আহসান। আমদের কোন নির্দিষ্ট দায়িত্ব ছিলো না। আমরা সবখানেই। এক জুনিয়র ছেলে আমাগো নাম দিলো পাংখা! ব্লকের দায়িত্ব ছিলো যাগো তাগো নাম দিলাম কমান্ডার। অনেক থ্রিলিং লাগতেছিলো ব্যাপারটা। তারপর হল মু্যভ শুরু করলাম, কারন ভাসানী হলের বেশ কয়জন শিবির কর্মী ধরা পরছিলো আমাগো হাতে। তারমানে আরো অনেকেই হয়তো আছে...নিভৃতে। আমার ব্যাচমেট চৌহান ধরা পরছিলো, অর্থনীতিতে পড়তো। একেবারে হল কালচারের পোলা, নিয়ম কইরা ডাইনিং, কমনরুম আর টিভি দেখতে যাওয়া ছেলে। এমনকি হলে পর্নো ছবির আয়োজনেও চৌহানরে দেখছি সবসময় আগাইয়া থাকতে। সেই চৌহানের রুমমেট হাসান সারাদিনের কান্তির শেষে হলে ফিরা একটা চিরকূট পাইলো চৌহানের পড়ার টেবিলে, পরম সত্য পথের সন্ধান পেয়ে চললাম, বন্ধু কিছু মনে করিস না, একই পথে এলে দেখা হবে। চৌহানের সত্য পথ ছিলো ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েমের পথ। যার লেইগা হল দখল সংস্কৃতিও অনুমোদিত! ইউরোপিয়ান পিস্তল নিয়া, লোহার রড দিয়া সাধারণ ছাত্ররে পিটাইয়া প্যানিক তৈরী কইরা হল দখল হইলো চৌহানের পরম সত্য পথের যাত্রা কৌশল। এইটাই কি কোরান কণিকায় তোলা সেই জিহাদ?
যাই হোক আমরা ছাঁদে উঠার নিয়ম করলাম ছাত্রগো। খুবই কষ্টের রাত। শীতের শিশির মাথায় নিয়া একেবারেই না ঘুমাইয়া ছাঁদ পাহারা। ছেলে পেলেরা যেই পরিমাণ ইট তুইলা ফেললো দুই আড়াই ঘন্টার মধ্যে তাতে মনে হয় হলের আরেক তলা ঢালাই দেওন যাইতো। মহা উৎসাহ সবাইর...এই উৎসাহ কোথথেইকা আইছিলো? আজো প্রশ্ন করি নিজেরে...কোন উত্তর নাই।
আমরা হল মু্যভ করতে গিয়া পাইলাম আমার এক কমরেড বাবুলভাইয়ের রুমমেট শিবির কর্মী। বাবুল ভাই কইলো সে নাকি ঐ ছেলের সাথে সংগঠন নিয়া কথা কইতো, এই ছেলে নাকি আমাগো সংগঠনের সমর্থক এই সবই বলছিলো তারে। ভয়ঙ্কর! যদি শিবির হল দখল করার সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে না নিতো!? তাইলে কি এই ছেলে আমাগো সংগঠনের ছায়ায় ঢুইকা যাইতো? ভাবতেও গায়ে কাঁটা দিতেছে। পরে অবশ্য আরো ভয়াবহ ঘটনা ঘটছিলো। যাই হোক মাথায় শিশির আর টেনশন, শরীরে কান্তি নিয়া একটা নিঘর্ুম রাত কাটাইলাম। শুরু হইলো আমার অন্যরম অভিজ্ঞতা!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


