somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ও মধ্যপন্থা

২৬ শে জুন, ২০১০ সকাল ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সর্বশেষ ঐশী ধর্ম ইসলাম মানুষকে সুখ-শান্তি ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। ইসলামের গঠনমূলক ও পরিপূর্ণ শিক্ষা সময়ের গন্ডিতে আবদ্ধ নয় এবং সকল মানুষের জন্যেই কল্যাণ-নিশ্চিতকারী। ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো, মানুষকে সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। চরম পন্থা পরিহার করে মধ্যপন্থা অবলম্বনের নামই ভারসাম্যতা অর্থাৎ কোন ক্ষেত্রেই সীমা লংঘন করা যাবে না। মানুষের বিবেক ও প্রকৃতির সাথে এর কোন বিরোধ নেই বরং বিবেকবান ও চিন্তাশীল মানুষ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সব সময় ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, কখনোই সীমা লংঘন করে না। বাড়াবাড়িকে প্রশ্রয় দেয় না। যারা বিবেককে কাজে লাগায় না তারাই সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য নষ্ট করছে। আসলে তারা অজ্ঞ। আমিরুল মোমেনিন হযরত আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, অজ্ঞরাই চরমপন্থী।

সৃষ্টি জগতের সর্বত্রই ভারসাম্যতার নিদর্শন সুস্পষ্ট। কারণ আল্লাহতায়ালা তার সৃষ্টিতে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন এবং সমস্ত কিছুতেই ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। মহাবিশ্বের কোনো একটি জিনিসও বিশৃংখল ও অপরিমিতভাবে সৃষ্টি করা হয়নি। পবিত্র কোরআনের সুরা আর রহমানের ৭ ও ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদন্ড।যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তুলাদন্ডে।"

আল্লাহ যেমনিভাবে সৃষ্টিতে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন, তেমনি সব কিছুতেই ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা রেখেছেন। ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও দিকনির্দেশনাগুলোও ভারসাম্যতার উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামী শিক্ষায় বিবেক ও যুক্তিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং ভারসাম্য রক্ষা ও মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। কাছেই ইসলামে চরমপন্থার কোন স্থান নেই। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে সব ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন। রাসূল (সাঃ) একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে, যুদ্ধ ক্ষেত্রে, শান্তি প্রতিষ্ঠায়, এবাদত-বন্দেগীতে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছেন এবং কখনোই চরমপন্থা অবলম্বন বা বাড়াবাড়ি করেননি। রাসূলের আহলে বাইতের সদস্যরাও সর্বদা ভারসাম্য রক্ষা ও সীমা লংঘন না করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সূরা বাকারার ১৪৩ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, " এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি,যাতে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্য এবং রাসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।"

কাজেই আল্লাহতায়ালা মুসলমানদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ জাতি হিসেবে দেখতে চায়। কোরানের অপর এক সূরায় আমরা দেখতে পাই লোকমান (আঃ) তার পুত্রকে বলছেন, "ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ কর"। রাসূল (সাঃ) বিভিন্ন সময় মুসলমানদেরকে কথায়,কাজে ও আচরণে ভারসাম্য রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সব সময় মধ্যপন্থা অবলম্বনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আসলে ভারসাম্যতা ইসলামের একটি মৌলিক বিষয়। সীমালংঘন ও বাড়াবাড়িকে ইসলাম কখনোই প্রশ্রয় দেয় না,তা যদি এবাদতও হয়। যেমন ধরুন, ইসলাম ধর্মে আল্লাহর এবাদতের উপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারণ এবাদত হচ্ছে, আধ্যাত্মিক পূর্ণতা ও পরকালীন কল্যাণ লাভের মাধ্যম। কাজেই আল্লাহতায়ালা এবাদতের ক্ষেত্রে অলসতা ও গাফিলতি না করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি না করে ভারসাম্য রক্ষা করতে বলেছেন। এর অর্থ দাড়ালো, এবাদতের ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি করা যাবেনা। এবাদত করতে গিয়ে অন্যান্য দায়িত্ব ভুলে যাওয়া যাবেনা। সমাজে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষকে কাজ করতে হবে, আয়-উপার্জন করতে হবে। যারা সব কিছু ভুলে রাতদিন শুধু এবাদতে মশগুল থাকে,তাদের কাজও পুরোপুরি সমর্থনযোগ্য নয়। খেয়াল রাখতে হবে, এবাদত যাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, এবাদতকে বান্দাদের উপর বিরক্তিকর পন্থায় চাপিয়ে দিও না।

ইসলাম ধর্ম আধ্যাত্মিকতা ও পরকালীন জীবনের পাশাপাশি পৃথিবীর সুখ-শান্তি ও কল্যাণের উপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলাম এ ক্ষেত্রেও ভারসাম্যতার কথা বলে। এমনটি নয় যে, দুনিয়াতে সুখ-শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিতভাবেই আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি ও কল্যাণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে। ইসলামের দৃষ্টিতে, এ দুটি সাংঘর্ষিক কোন বিষয় নয় বরং যে কোন ভাবেই হোক এই দুইয়ের মাঝে অবশ্যই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সূরা আল কাস্সাসের ৭৭ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, "আল্লাহ্ তোমাকে যা দান করেছেন, তার মাধ্যমে পরকালের গৃহ ও কল্যাণ অনুসন্ধান কর এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভূলে যেও না।"
রাসূলের পবিত্র বংশধর ইমাম সাদেক (আঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, যারা পরকালের কারণে দুনিয়াকে পুরোপুরি ত্যাগ করেছে এবং দুনিয়ার স্বার্থের কারণে আখেরাতকে উপেক্ষা করেছে,তাদের কেউই আমাদের অনুসারী নয়।

বর্তমানে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে,যা সামাজিক সংকটের জন্ম করছে। পাশ্চাত্যে লাগামহীন যৌন সম্পর্ক চিন্তাশীল ও বিবেকবানদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। অতীতে পাশ্চাত্যে গীর্জার নিয়ন্ত্রকরা নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈধ যৌন সম্পর্ক বা বিবাহকেও গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচনা করতো। যে কারণে গীর্জার পাদ্রী ও নানরা বিবাহ করার অনুমতি পায় না। তাদের এই কাজটিও ছিল এক ধরনের চরমপন্থা। কিন্তু ইসলাম ধর্ম এক্ষেত্রে বাস্তব সম্মত ও ভারসাম্যপূণ্য দিক নির্দেশনা দিয়েছে এবং মধ্যপন্থা অনুসরনের কথা বলেছে। ইসলাম ধর্ম যৌন আকাংখাকে মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বলে মনে করে,যা মানব সমাজ টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য। তবে এই সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। নারী ও পুরুষের মধ্যে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে এই সম্পর্ক বৈধতা পায় এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসে। এ কারণে রাসূল (সাঃ) বিয়ে করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন,যাতে সমাজে অনাচার ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে না পড়ে।

বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মধ্যে সব সময় যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই ছিল এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের কোন কোন মতবাদে যুদ্ধ ও আধিপত্য বিস্তারকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। নাৎসীবাদ, ইহুদিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ এ ধরনের নীতিকে সমর্থন করে। এই নীতির কারণে এ পর্যন্ত বিশ্বে ব্যাপক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরেও অনেক ধর্ম ও মতবাদ শত্রু তথা আগ্রাসীদের মোকাবেলায় আপোষকামিতা ও নমনীয়তা প্রদর্শনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম এক্ষেত্রেও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা উপন্থাপন করেছে। ভারসাম্যপুর্ণ ধর্ম হিসেবে ইসলাম, মানুষকে পারস্পরিক বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে। পবিত্র কোরআনে সকল ঐশী ধর্মের অনুসারীদের প্রতি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমঝোতার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ইসলাম জুলুম ও অত্যারের ঘোর বিরোধী।

ইসলাম আগ্রাসী ও আধিপত্যকামী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানায়। যুদ্ধ-বিগ্রহ বেধে গেলে কী করতে হবে, সে ব্যাপারেও ইসলাম দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে সীমা-পরিসীমা ঠিক করে দিয়েছে যাতে হিংসা-বিদ্বেষ ও যুদ্ধ আরও বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে না পড়ে। কাজেই ইসলাম যুদ্ধের ময়দানেও ইনসাফ ও ভারসাম্যতা বজায় রাখার আহ্বান জানায়। সুরা বাকারার ১৯৪ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, "যারা তোমাদের উপর জবরদস্তি করেছে, তোমরা তাদের উপর জবরদস্তি কর, যেমন জবরদস্তি তারা করেছে তোমাদের উপর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার বা সংযমী, আল্লাহ্ তাদের সাথে রয়েছেন।"

ইসলাম সর্বক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করলেও পাশ্চাত্যের দেশগুলো এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উল্টো তথ্য পরিবেশন করছে। তারা ইসলাম ধর্মকে উগ্রতা ও চরমপন্থার উৎস হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রতিদিনই মুসলমানদেরকে হিংস্র ও পশ্চাৎপদ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। তারা এ ক্ষেত্রে আল কায়েদা ও তালেবানের মতো গোড়া ও সহিংসতাকামী গোষ্ঠীকে মুসলমানদের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব গোষ্ঠী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পাশ্চাত্য ও তাদের মিত্র দেশগুলোর মাধ্যমে সৃষ্ট ও প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া, অল্প সংখ্যক মুসলমানের অন্যায় আচরনের মাধ্যমে কোটি কোটি মুসলমানকে উগ্রবাদী হিসেবে তুলে ধরা কখনোই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। আসলে ইসলামের প্রকৃত বাণী উপলব্ধি করতে হলে এর মূলে যেতে হবে। বিপথগামীদের মাধ্যমে ইসলামের শিক্ষা ও মূল্যবোধকে উপলব্ধির চেষ্টা করা হলে এ ব্যাপারে ভুল বুঝার আশংকা শতভাগ।

ইসলামের দৃষ্টিতে শান্তি ও কল্যাণের সরল পথ হলো ভারসাম্যতা। চরমপন্থা সব সময় মানুষকে সঠিক পথকে বিচ্যুত করে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মুসলমানরা সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। ইসলামের সোনালী যুগে ফিরে যেতে হলে আমাদেরকে আবারও এ পথেই এগোতে হবে। আমাদেরকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক গোঁড়ামি, উগ্র মনোভাব, চরমপন্থা ও বাড়াবাড়ির মতো নেতিবাচক দিকগুলোকে পরিহার করতে হবে,কারণ ইসলাম ধর্ম এসবের ঘোর বিরোধী।

ইসলামী অর্থনীতিতে অপচয় ও অপব্যয় কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অপচয় বা অপব্যয় শুধু যে আর্থিক ক্ষতিই ডেকে আনে তা কিন্তু নয়। অপচয়ের কারণে আর্থিক ক্ষতির চেয়েও আরও অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে মানুষের। মানুষের আয়ু নির্দিষ্ট। একজন মানুষ সর্বোচ্চ ১২০ থেকে ১২২ বছর বেঁচে থাকে। আর মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বছর। কাজেই জীবনের প্রতিটি মুহুর্তই অতি মূল্যবান। কেউ যদি তার এই সময়টাকে সঠিক ভাবে কাজে না লাগিয়ে তা অবহেলায় কাটিয়ে দেয়, তাহলে এর চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছুই হতে পারে না। বর্তমানে আমরা নানাভাবে সময় অপচয় করছি। বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোর বড় বড় শহরের মানুষজনের এখন প্রতিদিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় কাটে ট্রাফিক জ্যামে পড়ে। এজন্য ব্যক্তির চেয়ে সরকারের অব্যবস্থাপনাই বেশি দায়ী। তবে জনগণের যেহেতু ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচনের অধিকার রয়েছে, সে কারণে কেউই এর দায় এড়াতে পারবে না। অনেককেই কম্পিউটার গেইম খেলে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং টেলিভিশন দেখে সময় কাটাতে দেখা যায়। অনেকে এক্ষেত্রে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রতিটি মানুষেরই বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই শুভকর নয়। আসলে মানুষের জীবনের একেকটি মুহুর্ত একেকটি সুযোগ। কারোরই উচিত নয় একটি মুহুর্তও অপচয় করা।

মানব সম্পদ ও শক্তিকে সঠিক উপায়ে ব্যবহার না করাও এক ধরনের অপচয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একজন ব্যক্তি যে কাজে অধিক পারদর্শী তাকে দিয়ে সে কাজ না করিয়ে অন্য কাজ করানো হচ্ছে অথবা অধিক পারদর্শী লোককে উপযুক্ত কাজে নিযুক্ত করা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে অপব্যয় ও অপচয় বেড়ে যাচ্ছে। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবে অনুপযুক্ত স্থানে চাকুরি পাওয়া ব্যক্তিরা অনিচ্ছাকৃত ভাবে সম্পদ অপচয় করছে। পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক না হবার কারণে প্রতি বছর ব্যাপক অপচয় হচ্ছে। এছাড়া, অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে প্রতিদিনই বহু খাদ্য ও জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে।

ধুমপানসহ সব ধরনের নেশাই মারাত্মক অপব্যয়। এর ফলে স্বয়ং ধুমপায়ী বা মাদকসেবীর পাশাপাশি তার আশেপাশের মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাভাবিক ভাবেই যা কিছু মানুষের জন্য ক্ষতিকর তার সবই অপচয় ও অপব্যয় হিসেবে গণ্য। রাসূল (সাঃ)-র পবিত্র বংশধর ইমাম সাদেক (আঃ) বলেছেন, যা আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং শরীরের ক্ষতি করে,তাই অপচয়।

অপচয় ও অপব্যয়ের নানাবিধ ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ইসলামে তা নিষিদ্ধ। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে বৈষয়িক ক্ষতির পাশাপাশি আত্বিক ক্ষতিও ঘটে। এর আগেও আমরা বলেছি, বেশি বেশি খাবার খেলে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, পেট হলো সকল রোগের বাসা এবং মাত্রাতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকাই হলো সর্বোত্তম ওষুধ। রাসূল (সাঃ) আরও বলেছেন, "অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, কারণ তা মানুষকে নিষ্ঠুর করে তোলে এবং দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গ আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অলস হয়ে পড়ে ও সদুপদেশ শ্রবণে অনীহা সৃষ্টি হয়।'

ভোগ-বিলাসিতা মানুষের দেহের চেয়ে আত্মার উপর বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে বরকতও হ্রাস পায়। এর ফলে মানুষের ধন-সম্পদ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। ইমাম সাদেক (আঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, অপচয় ও অপব্যয় বরকত কমিয়ে দেয়।

মানুষ আল্লাহর নেয়ামতের অবজ্ঞা ও অবহেলা করে নিজের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। পবিত্র কোরআনের সূরা মুমিনের ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'নিশ্চয় আল্লাহ্ অপচয়কারী ও মিথ্যাবাদীকে পথ প্রদর্শন করেন না।' ইমাম আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, ঐসব অপব্যয়কারীর উপর ভর্ৎসনা যারা অপব্যয়ের মাধ্যমে নিজেকে সংশোধনের পথ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। অপচয়কারীরা সৎ কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কারণ অপচয়ের মাধ্যমে সে ক্রমান্বয়ে ভালো কাজ করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এছাড়া, অপচয়কারীর দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। ইমাম সাদেক (আঃ)-র মতে চার শ্রেনীর মানুষের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না,ঐ শ্রেণীর একটি হলো, বিনা কারণে অর্থ অপচয়কারী ব্যক্তিবর্গ যারা অপচয়ের মাধ্যমে সব শেষ করে আল্লাহর কাছে জীবিকা প্রার্থনা করে। আল্লাহ এ ধরনের ব্যক্তিদের কাছে বিচার দিবসে কৈফিয়ত চাইবেন। আল্লাহতায়ালা বলবেন, আমি কি তোমাকে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলিনি ? আমি কি তোমাকে ব্যয়ের ধরনে সংশোধন আনতে বলিনি ?

অপচয় ও অপব্যয়ের চূড়ান্ত পরিণতি হলো দারিদ্র্য। এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) ও ইমামদের অনেক হাদিস রয়েছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ অপচয়কারীকে অভাবগ্রস্ত করেন। আসলে অপচয়কারী আল্লাহর দেয়া অনুগ্রহের ব্যাপারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে যেনতেন তা অপচয় করে এবং নিজেই নিজের করুণ পরিণতি ডেকে আনে। রাসূলের পবিত্র বংশধর ইমাম কাযেম (আঃ) বলেছেন, যারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে ও হিসাব-নিকাশ করে চলে, তাদের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ বিরাজমান থাকে, আর অপচয়কারীরা আল্লাহর অনুগ্রহ হাতছাড়া করে। আসলে অপচয় ও অপব্যয় সমাজে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকটতর করে। বাংলাভাষী একজন কবি এ সম্পর্কে বলেছেন-

যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি, আশুগৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি।

অর্থাৎ আজ যে অপচয়কারী ও বিলাসী, কাল সে ভিখারী ও পরমুখাপেক্ষী। এটা ব্যক্তি জীবনের মতো রাষ্ট্রীয় জীবনেও সত্য।
সব মিলিয়ে ইসলাম মানুষকে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার উপদেশ দেয় এবং ঐশী অনুগ্রহের ব্যাপারে কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন ও অর্থ-সম্পদের সদ্ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। মিতব্যয় মানুষের সম্পদকে বৃদ্ধি করে এবং অন্যকে সাহায্য করার পথ উন্মুক্ত রাখে। মিতব্যয়ীরা কখনোই নিঃস্ব হয় না। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে মানুষ ইহকাল ও পরকাল দুটোইকে হারায়। আমরা যদি রাসূল (সাঃ) সহ ইসলামের ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও মনীষীদের জীবন প্রণালী বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাব তাদের সবাই সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। তারা কখনোই ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়েননি। অর্থ-সম্পদ অপচয় ও অপব্যয় না করে মানুষকে বেশি বেশি দান করেছেন।

আরেকটি বিষয় এখানে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি আর তাহলো, মিতব্যয় আর কৃপণতা কিন্তু এক নয়। মিতব্যয় হচ্ছে যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ব্যয় করা ও সম্পদের অপচয় না করা। কিন্তু কৃপণতা হলো, যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যয় না করা। এ কারণে ইসলামে অপচয় ও অপব্যয়ের মতো কৃপণতাও নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরান ও হাদিসে ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, অভাবগ্রস্তকে সাহায্য প্রদান, অনাথ-ইয়াতীমদেরকে লালন-পালন, নিঃস্ব ব্যক্তিদের উপার্জনের ব্যবস্থা করা এবং বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করাকে মুসলমানদের কর্তব্য বলে ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু কৃপণরা তা করে না। এ কারণেই কৃপণতা মানুষকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরানের সূরা আল মুদ্দাস্‌সিরের ৪২,৪৩ ও ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "কি কারণে তোমাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তামনা এবং আমরা অভাবগ্রস্তদের আহার্য দিতাম না।"
আসলে কৃপণ ব্যক্তিরা এমন এক গাধার মতো যার পীঠে থাকে মনি-মানিক্কের বোঝা এবং পেটে থাকে শুধু শুকনো খড়।

ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং কল্যাণকামী ধর্ম হিসেবে মানুষকে সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ হবার আহ্বান জানায়। ইসলামে চরমপন্থা ও বাড়াবাড়ির কোন স্থান নেই। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যপন্থা অবলম্বনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও মানুষের বৈষয়িক ও আত্মিক উভয় চাহিদাকেই পূরণ করতে পারে। কিন্তু এ জন্যও মানুষকে ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। পবিত্র কোরান ও হাদিসে মানুষকে আয়-উপার্জন করে স্বাবলম্বী হতে বলা হয়েছে এবং অলসতা ও কর্ম-বিমুখতার বিরোধিতা করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষকে কর্মতৎপর ও সচেষ্ট হতে হবে। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বৈরাগ্যবাদ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘরকুনো ও অলস মানুষকে ইসলাম পছন্দ করে না। রাসূলের জীবদ্দশায় যারা ঘর-সংসার ও দৈনন্দিন কাজ-কর্ম ত্যাগ করে শুধু মাত্র এবাদতে মশগুল হয়েছিলেন, তিনি তাদেরকে ঐ পন্থা অবলম্বন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাসূল (সাঃ) তাদেরকে দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে এবং জীবনকে আনন্দঘন করে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্বনবী হালাল পথে উপার্জনকে আল্লাহর পথে জিহাদের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা সম্মানের সাথে হালাল উপার্জনের চেষ্টা করে,তাদের মর্যাদা শহীদদের সমতুল্য।

ইসলাম ধর্মে কর্মতৎপরতা ও হালাল পথে আয়-উপার্জনের উপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি এক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকে অর্থ উপার্জন ও তা পুঞ্জিভূত করাকেই জীবনের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত করে। এ কারণে তারা জীবনের অন্যান্য মৌলিক উপাদানকে উপেক্ষা করে। তারা তাদের সময় ও শক্তিকে শুধুমাত্র অর্থের পেছনে ব্যয় করে। আমিরুল মোমেনিন হযরত আলী (আঃ) এ ক্ষেত্রেও ভারসাম্যপূর্ণ হবার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "মুমিনরা রাত ও দিনের পুরো সময়টাকে তিন ভাগে বিভক্ত করে। এর এক ভাগ ব্যয় করে আল্লাহর কাছে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে, দ্বিতীয় অংশকে কাজে লাগায় আয়-উপার্জন ও সাংসারিক কাজ সম্পাদনের জন্য এবং তৃতীয় অংশ ব্যয় করে হালাল উপায়ে আনন্দ উপভোগের জন্য।"

এটা ঠিক যে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য যে পরিমাণ অর্থ-সম্পদ মানুষের প্রয়োজন তা জমা বা পুঞ্জিভূত করা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এরও একটি সীমা-পরিসীমা রয়েছে,যা কোন ভাবেই লংঘন করা উচিত নয়। সম্পদ যদি মানুষকে মোহগ্রস্ত করে ফেলে এবং মানবিকতা ও আধ্যত্বিকতা থেকে দূরে ঠেলে দেয়, তাহলে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সম্পদ থাকলেই তা বল্গাহীন ভাবে ব্যয় করতে হবে। ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় উভয়ই নিষিদ্ধ এবং তা বাড়াবাড়ি হিসেবে পরিগণিত। ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় ও অপব্যয় না করে তা মানব কল্যাণে ব্যয় করাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিনের কাজ। কৃপনতাও বাড়াবাড়ির মধ্যেই পড়ে। কাজেই সম্পদ উপার্জন ও ব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। আমিরুল মোমেনিন হযরত আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, উদার হও কিন্তু বল্গাহীনভাবে সম্পদ খরচ করো না। ভারসাম্যপূর্ণ হও, সংকীর্ণমনা ও কৃপণ হইও না। কুরআন মজীদের সূরা ফুরকানের ৬৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্‌ তা'আলা এ সম্পর্কে বলেছেন, "যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে।"

ইসলাম ধর্ম মানুষকে আল্লাহর নেয়ামত ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও ভারসাম্য রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। যেমন নিজের আনন্দ-ফুর্তি ও স্বার্থের জন্য পরিবেশ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করা ইসলাম সম্মত নয়। বর্তমানে বিশ্বের এক শ্রেনীর মানুষ ও দেশের বাড়াবাড়ির কারণে বিশ্বের নানা প্রান্তে পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। মানুষ পরিবেশ-প্রকৃতিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ হলে আজ এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আল্লাহতায়ালা মানুষকে অফুরন্ত নেয়ামত দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সেই নেয়ামত ব্যবহার করতে বলেছেন। কাজেই যারা আল্লাহর নেয়ামতগুলোকে একেবারেই কাজে লাগাচ্ছেনা তারাও কিন্তু সঠিক কাজ করছে না। সূরা আরাফের ৩২ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, "বান্দাদের জন্যে সৃষ্ট ঐশী সাজসজ্জা এবং পবিত্র খাদ্যবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে? আপনি বলুন: এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে।"
তবে আবার যারা এক্ষেত্রে আগ্রাসী হয়ে উঠছে,তারাও অন্যায় করছে।

ইসলামী অর্থনীতির একটি মৌলিক বিষয় হলো, ন্যায়পরায়নতা। এই নীতির আলোকেই সমাজে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। সম্পদের সুষম বন্টনের অভাবে সমাজের এক অংশ অতি দরিদ্র এবং অপর এক অংশ অতি সম্পদ শালীতে পরিণত করে। এ কারণে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্যেও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলাম ধর্ম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্য দূর করার জন্য বিভিন্ন দিক নিদের্শনা দিয়েছে। এর কোন কোনটি মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। ইসলাম সমাজের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ন্যায় ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য যাকাত ও খোমসকে বাধ্যতামূলক করেছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরানের বিভিন্ন আয়াতে নামায আদায়ের সাথে সাথে যাকাত প্রদানেরও নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "নামায কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান করো"। যাকাত কাদেরকে দিতে হবে কোরানে সে সম্পর্কেও দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরানের সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'যাকাত হল কেবল মাত্র ফকির, মিসকীন, যাকাত সংগ্রহকারী ও যাদের হৃদয়-মনকে আকৃষ্ট করা প্রয়োজন, তাদের অধিকার এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।'

ইসলাম সব সময় একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান এবং দান খয়রাতের জন্য মানুষকে উৎসাহিত করেছে। পবিত্র কোরানেও বারবারই গরীব-দু:খীদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে দান করার ক্ষেত্রেও ভারসাম্যপূর্ণ হতে বলা হয়েছে। সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে নি:স্ব হয়ে বসে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরানের সূরা বনী ইসরাইলের ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।' সমাজ যাতে দারিদ্রমুক্ত হয়, সে লক্ষ্যেই ইসলাম এ ধরনের নির্দেশ জারি করেছে। ইসলাম ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সুদ,মুনাফালোভ, মজুতদারি, নিম্নমানের জিনিস সরবরাহ ও বিক্রি এবং ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতারণাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ন্যায় প্রতিষ্ঠার উপরই ইসলামী অর্থনীতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ কারণে ইসলামী অর্থনীতি অনুসরণ করা হলে একটি সমাজে দারিদ্য্ম ও বৈষম্যের মাত্রা সব নিম্ন পর্যায়ে নেমে আসতে বাধ্য।

ইসলামে অর্থনৈতিক ব্যবস্হায় আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিগুলো এতটাই ভারসাম্যপূর্ণ যে, এগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত জীবন ব্যবস্থা অতি সহজেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আয়-উপার্জনের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষ যদি ভারসাম্য রক্ষা করে চলে তাহলে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে তার বিপদের সম্মুখীন হবার আশংকাও অনেক কমে যায়। হালাল-হারামের ক্ষেত্রে ইসলামের ভারসামপূর্ণ নীতি মেনে চললে মানুষ শারীরিক ও আত্মিক নানা সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×