স্মার্ট হবার বড়ই আগ্রহ আমার!!! আমি তখন ৮ম ক্লাশ ছাত্র্; বন্ধুদের কাছ থেকে জানলাম স্মার্ট হতে হলে সিগারেট খেতে হয়। সিগারেট পাই কোথায়??? আমার সাইজের কারনে দোকানদার মামা সিগারেট দিল না। স্বাধীন দেশ স্বাধীনতা নেই, এ কেমন অন্যায় আচরন !!! যাই হোক, আমাকে স্মার্ট হতেই হবে। শুরু হলো বাবার পকেট থেকে সিগারেট চুরি। একদিন, দুইদিন, তিনদিন..... বাবার আর বুঝতে বাকি থাকলোনা। আড়ী পেতে থাকা বাবার হাতে-নাতে ধরা খেয়ে, বাসার সাবাইকে বলিউডের ভিলেন style-এ পেলাম। এ মেরে ওকে দেয়, ও মেরে তাকে দেয়। আমি যেন FIFA-র বল। কোরআন ধরে শপথ করলাম, আর সিগারেট খাবনা।
কিন্তু স্মার্ট হবার আগ্রহ আমার কমলোনা। এই যুগে স্মার্ট না হয়ে উপায় আছে!!! স্মার্ট যে আমাকে হতেই হবে। ৯ম শ্রেনীতে উঠতে না উঠতে জানতে পারলাম প্রেম না করলে স্মার্ট হওয়া যায় না। তাই শাহরুখ হবার আগ্রহের আর শেষ থাকলোনা। আর পাশের বাসার লাইলি, পারুল, কমলা, চম্পা (আর বাকিদের নাম মনে নাই) কারও কোন নিস্তার থাকলোনা আমার কারনে। বন্ধুদের কাছ থেকে জানলাম, টিচ না করলে প্রেম হয়না। শুরু হল মেয়েদের টিচ করার পালা, চলল কিছুদিন ভালই। তারপর একদিন টিচ করে বসলাম শান্তাকে। শান্তা যে আমার ছোটবনের বান্ধুবী তা আমার জানা ছিলনা।বাসার সাবাইকে এবারও আবিস্কার করলাম হলিউডের ভিলেন হিসেবে। আমি যেন আবারও FIFA-র বল। কোরআন ধরে শপথ করলাম, আর কোনদিন মেয়েদের টিচ করবোনা। ততদিনে আমি ১০ শ্রেনীর ছাত্র, SSC পরীক্ষার কারনে কিছুদিন আমার স্মার্ট হবার আগ্রহ সাময়িক চাপা পরে থাকলো।
SSC পরীক্ষায় পাশ করে, এখন আমি কলেজের ছাত্র। স্মার্ট হবার আগ্রহ এখন আমার আগের চেয়ে অনেক বেশী, স্মার্ট যে আমাকে হতেই হবে। শার্ট, প্যান্ট সবকিছু আমার এযুগের হওয়া চাই। ফ্যাশান নিয়ে কত প্রতিযোগীতা। আর আমাদের হাসির ঘোরাক ছিল আমাদের এক সহপাঠী হাসান, শালা একদম সেকেলে। এই শালাদের কারনেই দেশটা স্মার্ট হতে পারছেনা। সারাদিনে এই শালায় পড়া-লেখা আর নামাজ ছাড়া কিছুই বুঝে না। বড় ভাইদের থেকে জানতে পারলাম আমাদের দেশ স্মার্ট হতে পারছেনা কেবল মাত্র এ মোল্লাদের কারনে, রাজাকার আর আল-বদররা আমাদের দেশটা শেষ করে দিচ্ছে। এদের বিচার চাই, বিচারের দাবিতে সচ্চার হলাম আমিও। শুরু হল বড় ভাইদের সাথে আমার ঘোরাফেরা। ভাল enjoy করলাম আমরা কিছুদিন। কোরআন ধরে শপথ করার কারনে আর সিগারেট খাও হয়নিবটে, তবে একটু enjoy করেছি বড় ভাইদের সাথে গাজাঁ আসড়ে।
রাজাকার বিরোধী সংগঠনে আমরা অনেক সক্রিয়। সেজন্য আমাদের Fund-র প্রয়োজন দেখা দিল, আর কতদিন বড় ভাইদের টাকায়। তাই আমরা পরিকল্পনা করলাম টেন্ডার ধরার। যেই কথা সেই কাজ। টেন্ডার পাবার জন্য বড় ভাইরা অনেক কিছুই করল, আসলে আমাদের কোন অস্ত্র ছিলনা। যাই হোক বড় ভাইদের Help আমরা ভুলে যাইনি, একটা বড় অংকের টাকা আমরা তাদের সাথে শেয়ার করলাম, আর তাছাড়া যে জন্য আমাদের সবকিছু সেই রাজাকার বিচার তো কেবল বড় ভাইরাই করতে পারে। যাই-হোক আমাদের টেন্ডার ব্যবসা ভালই চললো কিছুদিন, সেই সাথে বৃদ্ধি পাছে আমাদের রাজাকার বিরোধী সংগঠনে Fund।
একদিন সকালে আমাদের সবার মেজাজ খারাপ। যেই রফিক ভাই রাজাকার বিরোধী সংগঠনে Fund-র দায়িত্ব ছিল সে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে, আর রাজাকার বিরোধী সংগঠনে Fund-র সবটাকা সে মেরে দিয়েছে। না এটা অন্যায়, এটা মেনে নেওয়া যায়না। আমার বন্ধু তোহা গুলি বসিয়ে দিল রফিকের ভাই শামীমের বুকে, আমরা পালিয়ে গেলাম পড়া-লেখা শেষ না করেই।
অন্য দিনের মত আজও সেই একই কেইসের হাজিরা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম, দেখা হল আমাদের সহপাঠী হাসানের সাথে। জানতে পারলাম সে এখন Nokia-তে চাকরী করে, থাকে Helsinki-তে। কুশলাদি বিনিময় করে আমরা যে যার পথে রওনা হলাম। আর ভাবতে লাগলাম, সেই স্মার্ট নাকি আমি? মনকে বুঝ দিলাম, যে যাই বলুক আমি আসলে প্রকৃত স্মার্ট।
বি:দ্র: এটি একটি সত্য ঘটনা, যদিও নামগুলো ছদ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






