somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর

০৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, ইতিহাস উৎসাহীদের এবং বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে আগ্রহী যে কেউ অবশ্যই একটি দর্শনীয় স্থান। এই জাদুঘর দর্শকদের দেশটির সামরিক ইতিহাস এবং জাতি গঠনে এটি যে ভূমিকা পালন করেছে সে সম্পর্কে জানার সুযোগ দেয়।

জাদুঘরটি একটি পুরানো ঔপনিবেশিক ভবনে অবস্থিত যা মূলত ব্রিটিশরা তাদের ভারত শাসনের সময় ব্যারাক হিসাবে ব্যবহার করেছিল। দেশটির সামরিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ভবনটি পরে 1987 সালে একটি যাদুঘরে রূপান্তরিত হয়। জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে বিস্তৃত সামরিক নিদর্শন, অস্ত্র, সরঞ্জাম, ইউনিফর্ম এবং অন্যান্য আইটেম যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সামরিক ইতিহাসকে তুলে ধরে।
আপনি মিউজিয়ামে প্রবেশ করার সাথে সাথে, আপনাকে সম্পূর্ণ যুদ্ধের গিয়ারে একজন বাংলাদেশী সৈনিকের একটি বড় মূর্তি দেখে স্বাগত জানানো হয়, যা আপনাকে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেশের সৈন্যদের ত্যাগের কথা মনে করিয়ে দেয়। জাদুঘরটি কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত, যার প্রতিটি দেশের সামরিক ইতিহাসের একটি ভিন্ন দিক প্রদর্শন করে।

সবচেয়ে বিশিষ্ট প্রদর্শনীর মধ্যে একটি হল মুক্তিযুদ্ধের গ্যালারি, যা 1971 সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ববর্তী ঘটনা এবং পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা রক্ষায় দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার নথিভুক্ত করে। গ্যালারিটি যুদ্ধে যুদ্ধ করা সৈন্যদের ছবি, চিঠি এবং ব্যক্তিগত আইটেম সহ বিভিন্ন ধরনের নিদর্শন প্রদর্শন করে। প্রদর্শনীগুলি যুদ্ধের বিশদ বিবরণ, বাংলাদেশের জনগণের উপর এর প্রভাব এবং এতে যুদ্ধ করা সৈনিকদের বীরত্বপূর্ণ কর্মের বিবরণ প্রদান করে।
জাদুঘরের আরেকটি অংশ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসের জন্য নিবেদিত। এখানে, দর্শকরা সেনাবাহিনীর বিবর্তন, এর সাংগঠনিক কাঠামো এবং এটি বছরের পর বছর ধরে জড়িত বিভিন্ন অপারেশন সম্পর্কে জানতে পারে। প্রদর্শনীর মধ্যে রয়েছে ইউনিফর্ম, অস্ত্র এবং সেনাবাহিনীর ইতিহাস জুড়ে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম। এই বিভাগের একটি বিশেষত্ব হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্রিটিশ ট্যাঙ্কের প্রতিরূপ যা বাংলাদেশী সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করেছিল।

জাদুঘরটিতে নৌবাহিনীর একটি বিভাগও রয়েছে, যা দেশের নৌবাহিনীর সামুদ্রিক সীমানা রক্ষায় যে ভূমিকা পালন করেছে তা প্রদর্শন করে। প্রদর্শনীতে নৌবাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত বিভিন্ন জাহাজের মডেল, সেইসাথে ছবি এবং অন্যান্য নিদর্শন রয়েছে যা বাংলাদেশী নৌবাহিনীর ইতিহাসের একটি আভাস প্রদান করে।
সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রদর্শনী ছাড়াও জাদুঘরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য নিবেদিত একটি বিভাগ রয়েছে। দর্শকরা বিমান বাহিনীর ইতিহাস, এর বিমান, এবং বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন অপারেশনে বিমানবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রদর্শনীর মধ্যে রয়েছে বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত বিমানের মডেল, সেইসাথে ছবি এবং অন্যান্য নিদর্শন যা বাংলাদেশী বিমান বাহিনীর অবদানকে তুলে ধরে।

সামরিক ইতিহাস প্রদর্শনী ছাড়াও, জাদুঘরটিতে সারা বিশ্বে দেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জন্য নিবেদিত একটি বিভাগও রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ অন্যতম বৃহত্তম অবদানকারী, এবং জাদুঘরের এই বিভাগটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় দেশটির অবদানকে প্রদর্শন করে। বাংলাদেশী সৈন্যরা যে বিভিন্ন জাতিসংঘ মিশনের অংশ ছিল, তারা যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল এবং বিশ্বের অশান্ত অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে সে সম্পর্কে দর্শকরা জানতে পারবেন।

বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর, শুধু নিদর্শন ও প্রদর্শনী দেখার জায়গা নয়। এটি তাদের দেশের জন্য চূড়ান্ত আত্মত্যাগকারী সৈনিকদের স্মরণ এবং শ্রদ্ধার জায়গাও। জাদুঘরে একটি ওয়াল অফ অনার রয়েছে, যেখানে মারা যাওয়া সমস্ত সৈন্যদের নামের তালিকা রয়েছে

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারো বলছি দেশে জঙ্গী নেই উহা ছিল আম্লিগ ও ভারতের তৈরী

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮


আওয়ামী নস্টালজিয়ায় যারা অন্তরের ভিতর পুলকিত বোধ করে তাদের কাছে বাংলাদেশ মানেই হলো জঙ্গী, অকার্যকর অথবা পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র। ৩৬ জুলাই পরবর্তী মহা-গণবিস্ফােরনকে কোনাভাবেই মানতে পারেনি তারা ভয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×