somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৪৩

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৪৩

বিলুপ্ত বন্যপ্রাণীঃ
ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের বিশেষ বিশেষ প্রাণী ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব রকমের বন্যপ্রাণীই ছিল। আরো ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যীশুখ্রিষ্টের ১০০০ বছর পূর্বেও এদেশে বন্যপ্রাণীর জন্য হুমকি হতে পারে- এমন পরিবেশ ছিল না। কিন্তু গত ৩০০০ বছরে এদেশ থেকে অনেক প্রাণী জ্যামিতিক হারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। সম্ভবত গত ১০০ বছরে যত প্রাণী হারিয়ে গেছে, তার পূর্বে ১০০০ বছরেও তার অর্ধেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়নি এবং সবই প্রকৃতিগত কারণে। বিগত একশত বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যেসব বন্যপ্রাণী হারিয়ে গেছে তার মধ্যে প্র মেই বলা যায়- তিন প্রজাতির গণ্ডার, বুনো মোষ, বারসিঙ্গা, পারা হরিণ (হগ ডিয়ার), নীলগাই, নেকড়ে, গৌর এবং বান্টিং-এর কথা। পাখির মধ্যে লুপ্ত হয়েছে লাল শির হাঁস ও ময়ূর আর সরীসৃপের মধ্যে মিঠাপানির কুমির। এছাড়াও অনেক প্রাণী বিলুপ্তির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।

বিলুপ্ত স্তন্যপায়ীঃ
বিশ শতকের গোড়ার দিকে এদেশে একশৃঙ্গাগণ্ডার, ওয়ান হর্নড রাইনোসেরোস (Rhinoceros unicornis); দুই শৃঙ্গ টু-হর্নড রাইনোসিরোস (Didermoceros sumatrensis) এবং জাভাদেশীয় গণ্ডার, জাভান রাইনোসেরোস (Rhinoceros sondaicus) ছিল বলে মিত্রের বই, জেলা গেজেটিয়ার, বনবিভাগীয় দলিল-দস্তাবেজ এবং কাজী জাকের হোসেন রচিত এন ইন্ট্রোডাকশন টু ওয়াইল্ড লাইফ অফ বাংলাদেশ (১৯৭৪) বইয়ে উলেখ আছে। একশৃঙ্গ গণ্ডার সুন্দরবনে, গারো পাহাড়ের পাদদেশে, মোমেনশাহী ও সিলেট জেলার টিলাসংলগ্ন জলাভূমির নলখাগড়ার বনসহ জলাভূমিতে বিচরণ করত। পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকা সংলগড়ব জলাভূমিতেও এ গণ্ডার কদাচ দেখা যেত। দুইশৃঙ্গ গণ্ডার বাস করত কুমিল্লা জেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে টেকনাফ অবধি বনভূমিতে। জাভাদেশীয় গণ্ডার অল্পবিস্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় সাংগু-মাতামুহরী রিজার্ভে বিচরণ করত বলে অনেকের ধারণা। এদের এক-দুটি এখনো বেঁচে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

একশৃঙ্গ গণ্ডার পশ্চিমবঙ্গের জলদাপাড়া, আসামের কাজীরাঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এবং চিতাওয়ান নামক নেপালি বনভূমি বাদে এশিয়া মহাদেশে বেঁচে নেই। বোর্নিও থেকে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল দুই শৃঙ্গ গণ্ডার। ভারতবর্ষ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে এ গণ্ডার বিলুপ্ত হয়েছে। কেবল বার্মায় দু থেকে তিন ডজন এই গণ্ডার আছে বলে ধরে নেয়া
হয়েছে, আর জাভাদেশীয় গণ্ডার প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। তবে জাভার উজুংকুলন অভয়ারণ্যে দু-তিন ডজন গণ্ডার বেঁচে আছে বলে প্রমাণ মেলে।

বুনো মোষঃ
বাংলাদেশ ছিল একসময় বুনো মোষের আদর্শ প্রজনন ক্ষেত্র। আর্দ্র জলবায়ু, বিক্ষিপ্ত বনভূমি, জঙ্গলাকীর্ণ জলাভূমি ও নিমড়বাঞ্চলের ঘন ঘাস বুনোমোষের আদর্শ বাসস্থান। বাংলাদেশের এই পরিবেশের জন্যই এদেশে প্রচুর বুনোমোষ পাওয়া যেতো। গত শতাব্দীতেও বাংলাদেশের দক্ষিণভাগের সব চরে, যশোরের ঝিনাইদহে, সিলেট ও মোমেনশাহীর সব বিলে ও হাওড়ে, সুন্দরবনের ভিতর এবং চিরসবুজ বনের সমভূমিতে মোষ ছিল। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে বুনোমোষ এদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হতে শুরু করে। জামালপুর জেলার তাওয়াকুচা থেকে মোমেনশাহী হয়ে সিলেটের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত শালবন এলাকায় ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বুনো মোষ দেখা গিয়েছে, তারপর আর দেখা যায়নি। ৮৩

বারসিঙ্গা বা সোয়াম্পডিয়ারঃ
এশিয়ার পূর্বাঞ্চল বারসিঙ্গার আদি নিবাস বলে জানা যায়। প্রাচীনকালে বাংলার লালমাটির গভীর বনে প্রচুর বারসিঙ্গা ছিল। মানব বসতি বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বারসিঙ্গা ক্র মশঃ নিন্মাঞ্চলের গভীর বনে ছড়িয়ে পড়ে। আধুনিক কালেও এদেশের সুন্দরবনে বারসিঙ্গা পাওয়া যেত। তবে মোমেনশাহীর শালবনে ১৯৪০ এর দিকে এদেরকে দেখেছে বলে নজির আছে। বর্তমানে ভারতের উত্তর ও মধ্য প্রদেশের এবং আসামে বারসিঙ্গা পাওয়া যায়। সম্ভবত ১৯৫৪ সালের বন্যার পর সুন্দরবনে বারসিঙ্গা আর কেউ দেখেনি। শালবনের ভিতর যে বারসিঙ্গা ছিল তা শতাব্দীর শুরুতে শেষ হয়ে গেছে।

পারা হরিণ বা হগডিয়ারঃ
বিগত ১৯৭০-৭১ সালে জার্মান বিজ্ঞানী হুবার্ট হেন্ডরিখ সুন্দরবনের বাঘের উপর গবেষণা করতে গিয়ে প্রথম উল্লেখ করেন যে সুন্দরবনে তিনি পারা হরিণ দেখতে পাননি। বর্তমানে উত্তর ভারতের সিন্ধু ও পাঞ্জাব সমভূমির ঘাসবনে বা দাক্ষিণাত্যের কোথাও এ হরিণের হদিস মেলেনি।

নীলগাই বা ব্লু-বুল:
উত্তরবঙ্গের নিন্ম বনভূমি এলাকা থেকে শুরু করে তেতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার খণ্ড বন নীলগাইয়ের জন্য যোগ্য বিচরণভূমি ছিল, তবে ১৯৪০-এর পরবর্তীকালে আর দেখা যায় না।

গৌর বা ইণ্ডিয়ান বাইসনঃ
বাংলাদেশের উত্তরে শালবন থেকে দক্ষিণের টেকনাফ অবধি চিরসবুজ বনে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত গৌরের বিচরণ পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এরা আজ আর বাংলাদেশের ভূ-সীমানায় বেঁচে নেই।

বান্টিং: বান্টিং নামের বনগরুঃ
একসময় বাংলায় সর্বত্র এবং আধুনিককালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার গভীর অরণ্যে ছিল বলে প্রাণিবিজ্ঞানীরা ধারণা করেন। তবে গেল অর্ধশতাব্দীতে এ প্রাণী বাংলাদেশে দেখা যায় নি। বান্টিং বর্তমানে বার্মা থেকে জাভা পর্যন্ত সবুজ বন এলাকায় পাওয়া যায়।

নেকড়ে বা উল্ফঃ
আদিকালে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই নেকড়ে বিচরণ করতো। বিশেষজ্ঞদের লেখা থেকে জানা যায় যে, শতাব্দীকাল পূর্বেও নেকড়ে বাংলাদেশের নোয়াখালি জেলায় ছিল। বাংলাদেশের কোথাও এখন নেকড়ে বেঁচে নেই। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় নেকড়ে পাওয়া যায়। ভারতীয় সীমানায় তিব্বত ও লাদাখ থেকে মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় অল্পবিস্তর নেকড়ে আছে। আগে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া এবং মেদিনীপুর জেলায় পাওয়া যেত। এখন নেই।

চিতাহ বা হান্টিং লেপার্ডঃ
পৃথিবীর দ্রুততম স্তন্যপায়ী প্রাণী। ঊনবিংশ শতাব্দীতেও চিতাহ বাংলাদেশে ছিল বলে প্রাণিবিজ্ঞানীরা উলেখ করেছেন। চিতাহ বাংলাদেশসহ সারা ভারত, এশিয়া মহাদেশ এবং ইউরোপ মহাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। চিতাহ এখন কেবল আফ্রিকা মহাদেশে বেঁচে আছে। এদেশে অনেকেই ভুল করে চিতাহ এবং চিতাবাঘকে একই প্রাণী বলে ভাবেন।

হরিণ, কৃষ্ণসার বা ব্লাকবাকঃ
গত ১০০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের কোথাও এ প্রাণী দেখা যায়নি। বর্তমানে এই হরিণ আছে ভারতের উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়–, মধ্য ও উত্তর প্রদেশ এবং উত্তর ভারতে।

বিলুপ্ত পাখি
আদিকালে বাংলাদেশে কি কি পাখি ছিল তা জানা যায় না। তবে বিশেষজ্ঞারা অনুমান করেন যে, বাংলাদেশে বসবাসকারী কোনো কোনো পাখি নবাগত এবং এর মধ্য থেকে কোনো কোনো পাখি প্রাকৃতিক কারণেই বিলুপ্ত হয়ে থাকতে পারে। তবে ইদানিংকালে বাংলাদেশ থেকে যে দুটি পাখি চিরতরে বিলুপ্ত হয়েছে তা হলো লালশির বা পিঙ্কহেডেড্ ডাক এবং ময়ূর বা পি-ফাউল।

লালশির:
প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে দেশের হাওড় এবং চিরসবুজ বন এলাকায় কিছু লালশির ছিল বলে অনুমান করা হয়। পাখিটি ভারতের বাইরে অন্য কোথাও ছিল না। সেখানে এটা সর্বশেষ দেখা যায় ১৯৩৫ সালের জুন মাসে। শেষ দেখার খবর এসেছিল বিহার রাজ্যের দারভাঙ্গা জেলা থেকে। ধরে নেয়া হয় বাংলাদেশে এটি ছিল। তবে এ পাখি এখানে কেউ কখনো দেখেছেন এমন নজির নেই।

ময়ূর:
এখনো হাজার হাজার ময়ূর ভারতে বাস করলেও বাংলাদেশের প্রকৃতিতে একটি ময়ূরও বেঁচে নেই। হিমালয়ের ১৮০০ মিটার উচ্চতা থেকে দাক্ষিণাত্যেল কন্যাকুমারী, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে পাওয়া যেত ময়ূর। ময়ূর যমুনার পূর্বদিকে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা অবধি বিস্তৃত ছিল। সর্বশেষ ৮০’র দশকের গোড়ায় ময়ূর দেখা গিয়েছিল ঢাকা জেলার শ্রীপুরের শালবন রাথুরাতে।

বিলুপ্ত সরীসৃপঃ
এপর্যন্ত বাংলাদেশে সরীসৃপ চিকে ছিল কিন্তু গত ২৫-৩০ বছরের মধ্যে মিঠাপানির কুমির, মেছো কুমির বা মাঘার লুপ্ত হয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নদী থেকে সুন্দরবন অঞ্চল পর্যন্ত ছিল কুমিরের বিচরণক্ষেত্র। বর্ষায় নদীর কুমীর অন্যান্য শাখা বা উপনদী এমনকি বিল বাওড়ে পর্যন্ত ঢুকে পড়ত। মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশে যে কুমীর শাহের দরগা তার পাশের বিলে ১৯৫৫-৫৬ সালেও কুমীর পাওয়া যেত। সারা দেশ থেকে সে কুমির গত তিন দশক সময়ের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের জরিপে জানা যায় যে, দেশে এমন নদী নেই, যেখানে একটিও জলার কুমীর বেঁচে আছে। শুধু বাগেরহাটের হযরত খান জাহান আলীর মাজার সংলগড়ব পুকুরে এক গণ্ডা এবং মিরপুর চিড়িয়াখানায় তিনটি এই মোট গোটা সাতেক কুমির এখনো বেঁচে আছে। কুমির ছাড়া সরীসৃপ শ্রেণীর আর কোনো প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে কি না বলা কঠিন। কারণ, এ বিষয়ের উপর অদ্যাবধি কোনো জরিপ হয়নি। তবে অনুমান করা হয়, কোনো কোনো প্রজাতির কেউটে সাপ বোধ হয় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গত ৬০- ৭০ বছরের মধ্যে এগুলো দেখা যায়নি।

বাংলাদেশে যে সাড়ে আটশ প্রজাতির বন্যপ্রাণী আছে তার মধ্যে দশ থেকে বিশ ভাগই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে অত্যন্ত প্রতিকুল পরিবেশে।

বিলুপ্তির পথে স্তন্যপায়ী
আমাদের জাতীয় প্রাণী হচ্ছে ডোরা বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে এ বাঘ দেশের সব বনে এবং প্রায় পঞ্চাশ ভাগ এলাকায় বাস করত। এরা এখন আছে কেবল সুন্দরবনে। অবশ্য দু’একটি বাঘ ভারতীয় সীমানা বরাবর শাল ও চিরসবুজ বনে আসতে পারে। সারা দেশেই চিতা বাঘ বা লেপার্ড ছিল। ১৯৬৫ সালে মধুপুর জঙ্গলে শেষ চিতাবাঘ দেখেছেন জলছত্র মিশনের ফাদার ইউজিন হমরিখ। এখন চিতাবাঘ অত্যন্ত বিরল প্রাণী। সোনালি বিড়াল বা মাররলড্ ক্যাট পাওয়া যেত সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত চিরসবুজ বনে। এদের সংখ্যা কখনো বেশি ছিল না। তবে ১৯৫০ সালের পর থেকে এদেরকে আর দেখা যায় নি। হঠাৎ করে ১৯৮২ এর মে মাসে রাঙ্গামাটির কাছে একটি সোনালি বিড়াল মারা পড়ে। তার চামড়াটি এখন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জাদুঘরে রক্ষিত আছে। ক্লাউডেড লেপার্ড বা গেছো বাঘ বা লামচিতা একসময় সুন্দরবন বাদে দেশের সর্বত্র বনাঞ্চলে পাওয়া যেত। শালবনে এখন এদের কোনো অস্তিত্ব নেই। চিরসবুজ বনেরও কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীরে এদের কদাচিৎ দেখা যায়।

বাংলাদেশের শালবন ও চিরসবুজ বন এবং উত্তরবঙ্গের খণ্ডবনে তিন প্রজাতির ভালুক বাস করতো। এখন কেবল চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বন এলাকায় কদাচ হিমালয়ের কালো ভালুক এবং স্লথবিয়ার নজরে আসে। ভালুক নাচানেওয়ালাদের কাছে দু’একটি নমুনা থাকলেও দেশের কোথাও এরা বেঁচে নেই ঐ চিরসবুজ বন ছাড়া। রামকুত্তা তিন দশক আগেও দেশের শালবন এবং চিরসবুজ বনের সর্বত্র অল্পবিস্তর পাওয়া যেত। এখন সারা সিলেট এলাকায় দু’একটি দল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগে চিরসবুজ বনের তিন চারটি দল মিলে শতাধিক রামকুত্তা (ওয়াইল্ড ডগ) বা বুনো কুকুর আছে বলে জানা যায়। গন্ধগোকুল, ভাম এবং বাগডাস-খাটাশ দলের মধ্যে বাগডাস এখন প্রায় বিরল। গ্রামাঞ্চল থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে বলাই ভালো। বনের ভিতর অল্পবিস্তর বাগডাস নজরে আসে। খেঁকশেয়ালের সংখ্যাও যথেষ্ট কমেছে। এখন আর শেয়ালের হুক্কাহুয়া ধ্বনিতে বাংলাদেশে সন্ধ্যা নামে না বা ভোর হয় না। সন্ধ্যায় শেয়ালের ডাক শোনা আর তার জবাবে কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক যেন গ্রামবাংলার লোকের প্রাণে গেঁথে গিয়েছিল। প্রকৃতির সুন্দরতম প্রাণীর অন্যতম হচ্ছে হরিণ। চিত্রা হরিণ দেশের সর্বত্রই ছিল। অন্তত বাঘ যেখানে ছিল সেখানে এদের বিচরণ পরিলক্ষিত হতো। এখন এদের দশাও হয়েছে বাঘের মতো। বাঘ তো তবু দলছুট হয়ে এদিক সেদিক থেকে কদাচ এ বন সে বনে চলে আসে।, কিন্তু চিত্রা হরিণের ভাগ্যে তাও নেই। ওরা বন্দি হয়েছে সুন্দরবনের সুন্দরীর বাগানে।

ঐ এলাকার বাইরে একটিও চিত্রা হরিণ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাতে ছেড়ে দিয়েও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।সাম্বার সুন্দরবন বাদে দেশের অন্যসব বনে ছিল। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে এবং সিলেট জেলার বনে এদেরকে কালেভদ্রে দেখা যায়।

৮৩ প্রেটার, ১৯৭১


আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×