somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাস_ও_বাংলাদেশ আর অসুস্থ_প্রলাপ

০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার দরজায় কেউ একজন কড়া নাড়ছে। দরজা খুঁলে দেখলাম এক বিধ্বস্ত চেহারাকে। নারী না পুরুষ বুঝতে পারছি না।
.
আমি বললাম, কে আপনি?
মলিন মুখে বলল, আমার নাম বাংলাদেশ, বয়স ৪৫। তবে ইদানিং আমাকে কেউ কেউ আদর করে "বাংলাস্তান" বলে ডাকে।
.
আমি বললাম, কি চান আপনি?
বাংলাদেশ বলল, কিছু চাই না। কেবল কিছু কথা বলে যেতে চাই।
.
- বলুন।
.
- জনাব, আমি ভালো নেই। একদম ভালো নেই।
.
আমি মুচকি হেসে বললাম, কেউ ই ভালো নেই। আপনি কেন ভালো নেই সেটা বলুন।
.
বাংলাদেশ বলল, আমার জন্মের কাহিনী নিশ্চয়ই জানেন। বড় কষ্টের জন্ম আমার। ছোট বেলা কেটেছে অপুষ্টিিতে। পুরো জীবনটাই কাটল ঘাত-প্রতিঘাতে। তবে ইদানিং একটা বড় রোগে আক্রান্ত হয়েছি। রোগের কারণ, উৎস, প্রতিকার কিচ্ছু জানি না।
.
- বলতে থাকুন।
.
- প্রথমে আমার শরীরের আঙুলে পচন ধরল। আমার বর্তমান গার্ডিয়ানরা বললেন এটা তেমন কোন রোগ না। বিচ্ছিন্ন রোগ। এর জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার নাম "বিম্পিকক্কাস শিবিরিনাস"।
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে টিকা নিলেই হবে। আমি আশ্্বস্ত হলাম।টিকা দিয়ে কিছু ব্যাকটেরিয়া মারাও হল। কিন্তু আবার পচন ধরল। আবার বিম্বিকক্কাস শিবিরিনাসকে দাযী করে ব্যবস্থা নেয়া হল। যতবার পচন ধরে ততবার গার্ডিয়ানরা একে বিচ্চিন্ন রোগ বলে একই ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করেন। এখন বিচ্ছিন্ন রোগ এক হয়ে পুরো হাতটাতেই পচন ধরেছে।
.
আমি বললাম, এখন উপায়?
.
- শুনছি আমার জন্য নাকি বিদেশী ডাক্তার লাগবে। রোগটা বিদেশী, ডাক্তারও লাগবে বিদেশী। একজন বড় ডাক্তার আছেন, ডাঃ ন্যাটো আম্রিকা..ওয়াশিংশন চেম্বার। আরেকজন ডাঃ জিউস্ট ইজরায়েল, তেল আবীব চেম্বার। ৩য় আরেকজনের নামও শোনা যাচ্ছে। এই ডাক্তার আমার জন্মের সময় সাহায্য করেছিলেন।
.
- উনারা কেন সাহায্য করবেন?
.
- এই নব্য রোগে উনারা সাহায্য করে মজা পান। এক ধরণের ঔষধ আছে, সেটা কেবল উনারাই বিক্রি করেন। কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকে এই বিশেষ রোগ উনারাই ছড়িয়ে দেন যেন নিজেদের ঔষধ বিক্রি করতে পারেন এই স্বার্থে।
.
- মজা তো!
.
- হাঁ। খুব মজা। আমার অসুখ বেড়েই চলেছে। মনে হচ্ছে তেলআবিব, ওয়াশিংশন বা দিল্লীর চেম্বার ছাড়া আমার কোন গতি নেই।
.
- আপনার গার্ডিয়ানদের মতামত কি?
.
- আমার গার্ডিয়ানরা বরাবরই কিউট হয়ে থাকেন। আমার অভিভাবকত্ব নিয়ে মারামারি করতে করতেই উনাদের দিন পার হয়। অবশ্য আমাকে দুঃচিন্তা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আমার নাম মহাআকাশে উড়ছে। বিশ বছরের মধ্যে আমি ধনী হয়ে যাচ্ছি, আমি দশজন সুখির একজন...
.
- ভালো তো। ভালো না?
.
- হাঁ ভালো। ২০ বছরের মধ্যে ধনী হয়ে যাব। কিন্তু এই বিশ বছর কি আমি বাঁচব?
আমার পকেটের টাকা বারবার চুরি হয়। আমার ঘর থেকে বারবার এটা সেটা চুরি হয়ে যায়। এভাবে কতদিন টিকে থাকা যায় বলেন?
আমি সুখী হতে না, আমি বাঁচতে চাই।
.
- সেটাও তো কথা!
.
- আমার নাম আকাশে উড়বে। আমি যদি বেঁচেই না থাকি নাম দিয়ে কি করব বলেন?
.
- তাও কথা!
.
- ইদানিং বড় বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রোগের নাম জানতে পারছি না। আমার রক্ত ঝরে, আমি কাতরাই। বিটিভি নামের এক ভাঁড় তখনো উচ্চাঙ্গসংগীত গেয়ে ফাইজলামি করে। আমার বংশের কারো এ রোগ হয় নি। কেউ কোন উপায়ও বের করতে পারছে না। বিদেশী ডাক্তাররা হাঁ করে বসে আছে....
.
- বিদেশী ডাক্তারের সাহায্য নিলে সমস্যা কি? আপনি তো এমনিতেই প্রতিবেশী এক ডাক্তার দিয়ে নিয়মিত রুটিন চেক আপ করান।
.
- চেক আপ করারো এক কথা আর পার্মেন্ট ভর্তি হওয়া আরেক কথা। ঐ সব ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে কেউ কোন দিন পুরোপুরি সুস্থ হয় নি। অপারেশন করে পঙ্গু করে দিয়েছে। ইরাকুর রহমান, আফগান হোসেন...
.
- নাম জানি। নাম বলতে হবে না। আপনার রোগ হল কেমনে?
.
- সেটা জানি না। তবে শুনেছি রোগ কামনা করলে নাকি সত্যি সত্যি অনেকের রোগ হয়ে যায়। আমি যখন সুস্থ তখন প্রায়ই কানের কাছে বড় করে শ্বাস ফেলে বলা হত "আহারে! আমার জঙ্গী রোগ হয়ে গেল।" শখ করে আমারে কয়েক দফা ঔষধও খাওয়ানো হইছে। এখন সত্যি সত্যিই হয়ে গেল...
.
- আফসোসের ব্যাপার!
.
- হাঁ আর ভালো লাগছে না। মাঝে মাঝে মনে হয় এই সামান্য বয়সে আর কত সহ্য করি!
.
- আপনার বলা শেষ?
.
- প্রায়। আপনার কাছে কিছু পরামর্শ চাই।
.
আমি হাসতে হাসতে বললাম, বোকার মতো কথা বললেন। আপনি জানেন আমি "ইতিহাস"। সবার রেকর্ড আমার কাছে জমা থাকে। সবার সব কিছু আমি জানি। সবাই আমার কাছে ফেরত আসে। কিন্তু আমার শিক্ষা কেউ নেয় না।
.
- তাও কিছু বলুন।
.
আমি বললাম, আমি জানি আমার কথা কেউ শুনবে না। তাও বলছি। আপনার রোগ জটিল। এই রোগে পড়ে অনেকেই মারা গেছে। বাইরের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চূড়ান্তভাবে শেষ নিঃস্বাস ছেড়েছে। আপনার ইম্যিউনিটি ভালো বলে এখনো টিকে আছেন।
আপনার গার্ডিয়ানদের বলুন এখন অতীত ভুলে যেতে। "বিম্পিকক্কাস শিবিরিনাস" সহ যত লোকাল ব্যাকটেরিয়া আছে সে গুলোকে নিয়ে ইম্যুউনু সিস্টেম ডেভেলাপ করুন। এসব ব্যাকটেরিয়াকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনারই লাভ। হাত পঁচলে মাথার কি ভাবলে চলবে না। পচন পুরো শরীরে যাবে। কিছুই থাকবে না। বুঝতে পেরেছেন?
.
- জটিল কথা।
.
- হু জটিল। তবে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন।
.
বাংলাদেশ উঠে দাঁড়ালো। যাওয়ার আগে বলল, আমি কি এক গ্লাস পানি খেতে পারি?
.
আমি গ্লাসটা এগিয়ে দিলাম।
বাংলাদেশ বলল, এক্সকিউজ মি, গ্লাসটা ভারতের না পাকিস্তানের? আমি আবার একেক সময় একেক গ্লাস বর্জন করি।
.
আমি মিষ্টি হেসে বললাম, আমি ইতিহাস। আমি সব সময়ই নিরপেক্ষ। আমার মধ্যে কোন পক্ষ নেই।
.
বাংলাদেশ দ্বিধান্বিত হয়ে পানি খেয়ে দাঁড়াল।
তারপর বলল, দোয়া করবেন। যাই। বেঁচে থাকলে দেখা হবে।
.
্আমি বললাম, ইতিহাস কাউকে দোয়া করে না। ইতিহাস কেবল সবার কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করে। বেস্ অব লাক।
.
অতঃপর বাংলাদেশ আমি ইতিহাসের কাছে পানি খেয়ে চলে গেল। আমি তার পরবর্তী দর্শনের জন্য অপেক্ষা করছি।
সুস্থ কিংবা অসুস্থ দর্শন...
.
.
#ইতিহাস_ও_বাংলাদেশ
#অসুস্থ_প্রলাপ

সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:২০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×