১. "হযরত নূহ (আ: ) এর ছিল তিন ছেলে। হেম, শেম আর যাপেথ।
হেম ছিল কর্মী। সে ততটা বুদ্ধিমান ছিল না। তার গায়ে ছিল প্রবল বল। সে মাঠে কাজ করতে পছন্দ করতো। আর তার গায়ের রঙ ছিল কালো।
শেম ছিল আধ্যাত্মিক ঘরানার। তার গায়ের রঙ ছিল বাদামী। আর যাপেথ ছিল সাদা রঙের। আর সেই ছিল সবচেয়ে বুদ্ধিমান।
পৃথিবীর সকল মানুষ এই তিন ভাইয়ের বংশধর। আফ্রিকান নিগ্রোগুলো হেমের বংশধর। আরব আর ইহুদিরা শেমের। এশিয়া ও ইউরোপের লোকজন যাপেথের বংশধর!"
মধ্যযুগে দাসপ্রথা আর বর্ণবাদের যুগে এই গল্প শুনিয়ে তথাকথিত ধর্মগুরুরা পশ্চিমা পুঁজিপতিদের অমানবিকতার সাফাই গাইতেন। আফ্রিকানরা যেহেতু বলবান মাঠকর্মী হেমের বংশধর, তাই তাদের জন্মই হয়েছে শারীরিক পরিশ্রমের জন্য। আর সাদারা যেহেতু বুদ্ধিমান যাপেথের বংশধর, তাই মানবজাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা শুধু তাদেরই রয়েছে।
একই প্রজাতির মানুষ প্রাকৃতিক নিয়মে বিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠির জন্ম দিয়েছে এটা মেনে নিলে সাধারণ বিশ্বাসী জনতার কাছে হোয়াইট সুপ্রিম্যাসি থিওরী বিক্রি করা সম্ভব হবে না।
২. মানুষই সকল সৃষ্টির আদি কারণ। মহাবিশ্ব সৃষ্টিই হয়েছে মানুষের জন্য। প্রকৃতিতে যা কিছু রয়েছে, সবই মানুষের সুবিধার্থে তৈরী হয়েছে। মানুষই প্রকৃতির প্রকৃত মনিব।প্রকৃতিকে মানুষের সুবিধার্থে ইচ্ছামত ব্যবহার তাই মোটেও অযৌক্তিক নয়।
এই চরম অ্যান্থ্রোসেন্ট্রিক দৃষ্টিভঙ্গী প্রচারের উদ্দেশ্য হচ্ছে পুঁজিবাদী সমাজের প্রকৃতিকে যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরী করা। মানুষ প্রকৃতির সন্তান, প্রকৃতিক অংশ, এটা মেনে নিলে মানুষকে দিয়ে পরিবেশ ধ্বংশকারী কর্মকান্ড করানো কষ্টকর হয়ে পরবে।
আর একারণেই, মানুষও অন্যান্য প্রজাতির জীবের মত বিবর্তিত হয়ে এসেছে, এই তত্ত্বের বিরুদ্ধে অর্থলোভী পুঁজিবাদীদের পে-রোলে থাকা ক্রিয়েশনিস্টদের এত অপপ্রচার।
[চলবে.....]