বিবর্তনের সহজ পাঠ ১: জৈব-বিবর্তন পরিচিতি
মিউটেশন কি?:
আগের পর্বেই উল্লেখ করেছিলাম ডিএনএ রেপ্লিকেশন প্রক্রিয়ায় অনুরুপ ডিএনএ তৈরী করতে পারে জীবদেহে। এই ডিএনএ ই আমাদের জেনেটিক কোডের ধারক ও বাহক। এখন কোন প্রক্রিয়াই ১০০% নিখুঁত নয়। ভুল ঘটে। আর এই ভুলের কারণে ডিএনএ রেপ্লিকেশনের সময় জেনেটিক কোডে পরিবর্তন হতে পারে। আর সেই পরিবর্তিত কোড প্রজন্মান্তরে স্থানান্তরিত হতে পারে। যদিও রেপ্লিকেশনের সময় মিউটেশন ঘটার হার পারফেক্ট প্রতিরুপ তৈরী হওয়ার চেয়ে অনেক অনেক কম।
মিউটেশনের প্রভাব কী হতে পারে?:
মিউটেশনের প্রভাব সাধারণত তিন ধরণের হয়
১. জীবের জীবনে কোন প্রভাব থাকে না: অনেক জিন রয়েছে যেগুলো জীবের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে কোন ভুমিকা রাখে না। এসকল জিন-কোড পরিবর্তিত হলেও জীবের ওপর কোন প্রভাব থাকবে না।
২. জীবের ওপর খারাপ প্রভাব রাখে: এধরণের মিউটেশন জীবের জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ন কোন বৈশিষ্ট্যের খারাপের দিকে পরিবর্তন ঘটায়। ভালো মিউটেশনের চেয়ে খারাপ মিউটেশন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মিউটেশন যেহেতু ড়্যান্ডম, তাই সুসজ্জিত অবস্থার চেয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থায় পৌছানোর সম্ভাবনা সবসময়ই বেশি।
৩. জীবের ওপর ভালো প্রভাব রাখে: এই মিউটেশনের কারণে জীবের জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ট্যের ভালো পরিবর্তন ঘটে।
ফলাফল যাহাই হোক না কেন, মিউটেশন প্রক্রিয়ায় বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়।
প্রাকৃতিক নির্বাচন:
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মূল সুত্র হচ্ছে 'সারভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট'। আর এই ফিটনেস এর অর্থ হচ্ছে প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা। মিউটেশনের মাধ্যমে যেসকল বৈচিত্র্যের উদ্ভব হলো, সেগুলোর মধ্যে ভালো বৈশিষ্ট্যধারী জীবগুলো সফল প্রজননের মাধ্যমে তাদের জিন পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তর করতে পারে। আর যারা খারাপ বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারে না, তারা জিন রেখে যেতে ব্যর্থ হয়।
কৃত্রিম নির্বাচন: মানুষ নিজে যখন প্রাকৃতিক নির্বাচনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, তখন তাকে কৃত্রিম নির্বাচন বলা হয়। কৃষিকাজ ও পশুপালন শুরু হওয়ার পর মানুষ ভালো অর্থাৎ মানুষের জন্য উপকারী বৈশিষ্ট্যধারী উদ্ভিদ ও প্রাণী বেশি করে চাষ করেছে, ভালো বৈশিষ্ট্যধারী দুটি প্রকরণের মধ্যে সংকরায়ণ করেছে। এভাবে মানুষ নিজেই অনেক প্রকরণকে বাঁচিয়ে রেখেছে, আর অনেক প্রকরণকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে দিয়েছে।
[চলবে....]