ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছে মিম ( ছদ্মনাম ) ।
দেখতে বেশ সুন্দরী । ক্লাশ শুরু হতে না হতেই এসে
পড়েছে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টের ঝড় । যেই ফ্রেন্ড
লিষ্টে মানুষ ছিলো ১০০ কিছু দিনের ভিতরেই সেই
ফ্রেন্ডলিষ্ট হয়ে গেলো ৫০০ । চলছে ক্লাশ বিকালে
আড্ডা ।আর রাতভর চ্যাটিং ।
মিমের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী রিমা (ছদ্মনাম) ।
রিমা হচ্ছে মিমের রুমমেট । সেই রকম চলে দুই
বান্ধবীর আড্ডাবাজি । রাতে বসে একসাথে
চাঁদ দেখা । কখনো বা চলে সারারাত ধরে মুভি
দেখা আর ভোড়ে ঘুমানো । কখনো মাসের শুরুতে
বাসা থেকে ৫০০০ টাকা এসে পড়লে দুই
বান্ধবীর শপিং এ গিয়ে ৪০০০ টাকা শেষ করে
দিবারও অভ্যাস আছে । এমনি পাগলামি আর
মজায় চলছিলো মিম । ক্যাম্পাসে অনেক সিনিয়রদের
প্রপোজ উপেক্ষা করেই মিমের ভালো লাগে একটি
ছেলেকে নাম সোহেল ( ছদ্মনাম ) । সোহেল মিমেরই
ব্যাচমেট । একসময় সোহেলের ডাকে সাড়া দেয় মিম
। দুইজনে মিলে এটে ফেলে জীবন সংসারের এক
বন্ধন ,
এভাবেই দুইবছর চলে যায় তাদের প্রেম জীবনে ।
মিমের পরীবার মিমকে বেশ চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য ।
মিম বিয়ের জন্য একদম অপ্রস্তুত । কিন্তু মিমের মা
একদম নাছোড়বান্দা মেয়েকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে ।
মেয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু করে দিছে । মিম
প্রতিবার বাসায় গেলেই মায়ের সাথে ঝগড়া
করে আসে তাই মেয়েটা আর বাসায় যেতেই
চায়না ।
মিম সোহেলকে সব খুলে বলে । সোহেল শুনে হতবাক ।
এখন কি করে সে মিমকে বিয়ে করবে । কেবলতো
ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করতে শিখছে
সোহেল । কিন্তু সোহেলও যে মিমকে চায় !! এক
চিন্তার সাগরে মগ্ন সোহেল । কি করবে কি বেছে
নিবে !!! ক্যারিয়ার না মিম !!! অবশেষে
ক্যারিয়ারেই পথেই ছুটলো সোহেল ।
আজকাল মিমকে ইগনোর করছে সোহেল । দেখে না
দেখার ভান করছে । ফোন ধরছে না । সোহেলের এই
ব্যবহার এর জন্য মিম আরো বেশী সোহেলের প্রত
দুর্বল হয়ে পড়ে । কিন্তু সোহেল সব শেষ করে নিজের
ফোন নম্বর চেঞ্জ করে ফেলে । সে চায়নি মিম কষ্ট
পাক । সে চায় এখন কষ্ট পেয়ে তাকে ঘৃণা করে
ভুলে যাক ।
দেখতে দেখতে ৩ মাস চলে যায় ।
মিম অনেক কান্নাকাটি করছে । রিমাকে জড়িয়ে
কাদছে । বান্ধবীর কান্না সহ্য করতে না পেরে
আজ রিমাও কাদছে । অবশেষে এই জীবন থেকে
মুক্তি পেতে মায়ের কাছে চলে গেলো মিম । হ্যা সে
বিয়ে করবে । মা খুশী । বিয়ে দিলো মিমের একটি
ছেলের সাথে নাম আজাদ ( ছদ্মনাম )।
আজাদের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানেনা মিম ।
পরিবারের মতে বিয়ে করছে । বিয়ের পর সব কিছু
ভালোই চলছিলো । ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবদের
সাথে ক্লাশও করছে ঠিক মত । সব ভালোই চলছে ।
এভাবেই চলে গেলো ৬ টি মাস ।
আজাদ বিয়ের সময় বলেছিলো সে এম বি এ করছে ।
একটি কোম্পানিতে চাকরী করে । .
কিন্তু সব ফ্যাকাশে হয়ে যায় একসময় । আসলে
আজাদ এইচ এস সি পাশও না । ভার্সিটিতে
একসময় ইভটিজিং ও করে বেড়াতো সে । নিজের
অফিসে যৌণ হয়রানির দায়ে সে বিতারিত এক
বেকার যুবক বর্তমানে । শুধু এই নয় মিমের তার বিয়ে
করা ২য় বউ ।
আজাদের সাথে মিমের প্রায় ১ মাস ধরে তেমন
কোন যোগাযোগ হয়না । আজাদের সাথে ডিভোর্সের
চেষ্টা করছে সে । মিম ভার্সিটির হলেই থাকে ।
নিজেকে নিয়ে খুব অস্থিরতায় ভুগে সে । কেন হলো
এমন তার সাথে ? তার ভালোবাসাকেও সে
পেলোনা । আবার সামীর ভালোবাসাও সে
পেলোনা । কেন ? কিসের জন্য তার সাথে এই
প্রতারণা !! সে মেনে নিতে পারেনা । আবার সেই
প্রায় ৪ বছর পর মিম কাদছে । রিমাকে জড়িয়ে
কাদছে । রিমাও কাদছে তার এই প্রিয় বান্ধবীর
জন্য । সেই মিম আজ ভুলে গেছে একসাথে রাত
জেগে চাঁদ দেখার কথা । রাতভর মুভি দেখার
কথা । মিমের জীবনই যে আজ একটা চলচিত্রের
কাতারে চলে গেছে ।
কাহিণীটা এইখানেই শেষ হতে পারতো । কিন্তু
এটা কোন কাহিনী না যে সুন্দর করে বানিয়ে
লেখা যায় । এ এক বাস্তব জীবনের কাহিনী ।
মিম আজও লড়াই করছে নিজের জীবনের এই নিয়তির
সাথে । তার বন্ধুরা তার সাথে আছে । কিন্তু
হয়তো জানেনা । সে লজ্জায় বলতে পারেনা
কাউকে । শুধু রিমাকে কাদতে কাদতে জড়িয়ে ধরে
সব বলে দেয় । বড় নির্দয় এই প্রকৃতি । নির্মম এই
সমাজ । যাতে পিষে মরছে মিমের মত কোমল জীবন ।
“ আমাদের সমাজের মা-বাবার মেয়েকে
কেবল নির্দিষ্ট সময়ে বিয়ে দিতে পারলেই বেচে
যায় । মেয়ের বয়স পেড়িয়ে যাবে । কেউ বিয়ে
করবে না এইভেবে অনেক সময় যাচাই
বাচাই ঠিকমত না করে একটি ছেলের হাতে
তুলে দেয় নিজের মেয়েকে যার পরিণতি এমন
হয়ে যায় কখনো কখনো । সংবাদপত্র কিংবা
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে থাকে এখন প্রতারণার
ফাদ । নিজেকে নিয়ে অনেককিছুই লিখে থাকে
প্রচারকারীরা কিন্তু ওনেক সময় বাস্তব
পুরাই ভিন্ন থাকে । মেয়ের পরিবার ছেলের
সার্টিফিকেট,বন্ধু-বান্ধব,আত্নীয়-সজন এর
খোজ খবর ঠিকমত নেয় না ছেলের পরিবারের
সম্মানার্থে । এভাবেই মিমের মত কোমলমতি
মেয়েদের জীবনে ঘটে যায় দুর্ঘটনা । আর এর
থেকে অনেক সময় বের হতে পারেনা এর
কারণও ঐ সমাজ যারা এদের বলে
অপয়া !!! থু থু মারতে ইচ্ছা করে এই ঘুণে
ধরা সমাজব্যবস্থাকে ।