একটি মুমূর্ষ জাতিকে বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন, রক্তের রং সবুজ। জীবন এর জন্য রক্তের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই জানি। রক্ত শূন্যতা আমাদের প্রথমে অসুস্থ করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমরা আমাদের পরিচিত অপরিচিত কাউকে রক্তের অভাবে মরে যেতে দিতে চাই না, আর সেইজন্য আমরা নিজের শরীর থেকে রক্ত দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করি একটি জীবন। আমাদের শহর আজ ভয়াবহ রক্ত শূন্যতায় ভুগছে। জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দেয়া না গেলে মৃত্যু অবধারিত। আমরা যারা অন্যের প্রয়োজনে নিজের শরীর থেকে রক্ত দিতে দ্বিধা করি না, এই শহরের জীবন বাঁচাতে তাদেরকে প্রয়োজন। আমরা এবার সবুজ রক্ত দিবো আমাদের শহরকে বাঁচাতে। হ্যাঁ আমি গাছ লাগানোর কথা বলছি। গাছ কেমন করে শহরের রক্ত হয় এই প্রশ্ন অবান্তর, উত্তর আমি দিতে পারব না যেমন আমি উত্তর দিতে পারব না রক্ত কেমন করে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। রক্তের সঞ্চালন, পরিচালন ও পরিশোধন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার জন্য বিজ্ঞানে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা জরুরি যা আমার নেই। শহরের রক্ত শূন্যতার ছবি প্রকাশিত হয়েছিল প্রথমআলো পত্রিকায়, জাতিসংঘ ও বিসিএএস এর গবেষণায় উঠে এসেছে সেই ভয়াবহ চিত্র।
১৯৫১ সালে ঢাকার আয়তন ছিল ৬০ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার, ১৯৭৪ সালে ঢাকার আয়তন প্রায় ৪.৬ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮০ বর্গকিলোমিটার আর তার বিপরীতে জনসংখ্যা বেড়েছে ৪.৮ গুণ। পরবর্তীতে ২০০১ সালে ঢাকার আয়তন ৩৫৩ বর্গকিলোমিটার যা কিনা ১৯৭৪ সালের তুলনায় ১.৩ গুন, বিপরীতে জনসংখ্যা বেড়েছে ৫ গুন। ভয় পাওয়ার মত বিষয় বটে। পরের চিত্রটি আরও ভয়ঙ্কর ২০১২ সালে এই পরিসংখ্যান দাড়ায় এইরকমঃ আয়তন বেড়েছে ১.৪ গুন জনসংখ্যা ৩ গুণ। আপনি কি এইটা ভাবছেন যে ৫ গুণ থেকে ৩ গুণ ভয়ঙ্কর কেমন করে হয় ?১৬ লক্ষের ৫ গুণ আর ৮৪ লক্ষের ৩ গুণ অবশ্যই বেশি ভয়ঙ্কর। সবুজ নিয়ে কথা বলছিলাম, জনসংখ্যার পরিসংখ্যান দিচ্ছি, আমি মনে হয় ধান বানতে শিব এর গীত গাচ্ছি ? মোটেও না আয়তন, জনসংখ্যার সাথে সবুজের প্রয়োজনীয়তা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমি পরিসংখ্যান টি বিশ্লেষণের আগে ফলাফল এর জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলাম না।
১৯৭৪ সালে ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকাতে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষের জন্য যে পরিমাণ সবুজ ছিল আজ ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাতে ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ এর জন্য সেই পরিমাণ সবুজ নেই। ১৯৭৪ অনেক পুরনো কথা ২০০১ সালের একটা তুলনা মূলক চিত্রঃ আয়তন ৩৫৩ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ৮৪ লক্ষ, সবুজ ২৮০ বর্গকিলোমিটার।
২০১২ সালঃ আয়তন ৫০০ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ২ কোটি ৫০ লক্ষ, সবুজ ৭০ বর্গকিলোমিটার। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলার প্রয়োজন আছে কি?
গত ১২ বছরে ঢাকার আয়তন বেড়েছে ২৪৭ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি ৬৬ লক্ষ আর সবুজ কমেছে ২১০ বর্গকিলোমিটার।
এই আড়াই কোটি মানুষ এর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ঢাকার বাতাছে আছে কি।।? অপরন্ততু প্রতিদিন কার্বনডাইঅক্সাইড, কার্বনমনোক্সাইড, সি আফ সি, উৎপাদন কারি গাড়ি, এয়ারকন্ডিশন, ফ্রিজ এর সংখ্যা বারছে জ্যামিতিক হারে।
তাহলে আমরা বেঁচে আছি কেমন করে ? হ্যাঁ বিস্ময়কর বটে। আমরা কেমন করে বেঁচে আছি এই বিষয়ে এক বিদেশি কূটনীতিক কিছুদিন আগে ঢাকা সফর শেষে উম্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন “আমি নাস্তিক, কিন্তু ঢাকা ভ্রমণ করে আমি বিশ্বাস করি কেবল মাত্র গড-ই পারেন তাদের কে বাঁচিয়ে রাখতে” কৌতুক হিসাবে চায়ের আসরে এই নিয়ে আমরা গল্প ও করেছি।নিজের শরীরের ক্যান্সার নিয়ে ও আমরা কৌতুক করতে পারি, আমরা রসিক বটে। কিন্তু কৌতুক করে কালক্ষেপণ করার সময় নেই বন্ধু, রক্তশূন্যতা আমাদের দেহের রন্দ্রে রন্দ্রে ক্যান্সার তৈরি করছে, আমারা ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছি। আমার মনে পরে ছোটবেলায় বাংলা সিনামায় ক্যান্সার নামক একটা অসুখ এর কথা শুনতাম। তখন থেকে জানি ক্যান্সার একটি ভয়ঙ্কর অসুখ মৃত্যু আবধারিত। আজ যদি একটু চারপাশে চোখ ভুলায় নিজের আত্মীয় স্বজন এর মধ্যে কয়েকজন ক্যান্সার রোগী দেখতে পাই।ব্লগে, সোশ্যাল মিডিয়াতে, মার্কেটে ক্যান্সার আক্রান্তের সাহায্যের জন্য মানবিক আবেদন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই ক্যান্সার কি শুধু ক্যামিক্যাল যুক্ত খাবার এর জন্য ??? বাতাসের সিসা, কার্বনমনো অক্স্যাডের কি কোন ভূমিকা নেই? খাবারে বিষ(ফরমালিন) মেশানোর মত নৈতিক অবক্ষয়, ভালবাসার মানুষকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করার জন্য যে বিকৃত মানসিকতার প্রয়োজন তার পিছনে কি সবুজ বিহীন ইট কাঠ পাথর এর কোন প্রভাব কি থাকতে পারে? আমাকে ভাবাচ্ছে আপনি ও ভাবুন। গাছ লাগান যেইখানে পারেন গাছ লাগান। একটা সুস্থ, সবুজ পৃথিবী হোক আমার সন্তানের কাছে আমার অঙ্গীকার।