somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা হলেই কি মুটিয়ে যেতে হবে?

১১ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের একটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে মেয়েরা মা হলেই মুটিয়ে যাবে। অনেককে দেখেছি বছরের পর বছর এমনকি বাকি জীবন এই বাড়তি ওজন বয়ে বেড়াতে। আমেরিকা এসে দেখলাম এমন সব মায়েদের যাদের দেখে বিশ্বাস করা কঠিন যে এরা দু'টো তিনটে বাচ্চার মা। ব্যাপারটা কি? ব্যাপার দেখলাম তেমন কিছুই না!

বাবু হবার আগে দেশ বিদেশ থেকে আত্মীয়-স্বজনেরা উপদেশ দিতেন বেশি করে যেন খাই, দু'জনের কথা মাথায় রেখে যেন খাই। কি ভুল ধারণা! ধারণা যে ভুল তা টের পেলাম ডাক্তারের কাছে যাবার পর। ডাক্তার বলেছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা - বেশি যেন না খাই, ওজন যেন একটা সীমার ভিতর থাকে এবং সবসময় যেন হাঁটাচলা, হালকা ব্যায়াম করি।

বাবু হবে জানবার পর মা আর বাচ্চা বিষয়ক বইপত্র আর নানা ধরণের মেডিক্যাল আর্টিকেল পড়া শুরু করলাম। যা পাই, তাই পড়ে ফেলি। পড়ে পড়ে জানলাম যে গর্ভবতী একজন মহিলার প্রথম তিন মাস তেমন কোন বাড়তি পুষ্টিরই প্রয়োজন নেই! মায়ের প্রতিদিনকার খাদ্যই শিশুর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু খাদ্যগুলো হতে হবে পুষ্টিকর। মায়ের বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয় দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার থেকে। তাও তেমন বেশি কিছু না। প্রতিদিন মাত্র বাড়তি ২০০-৩০০ ক্যালোরী গ্রহণ করলেই যথেষ্ট। এই ২০০-৩০০ ক্যালোরী পেতে মা'কে শুধু বাড়তি এক গ্লাস দুধ আর দুই স্লাইস পাউরুটি খেলেই চলে। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রয়োজন ২,০০০ ক্যালোরী।

বাবু হবার আগে খেলে মোটা হয়ে যায় এমন খাবার ছেড়ে দিয়েছিলাম। ফাস্ট ফুড, সফট্‌ ড্রিংকস, চা, কফি এগুলা বলতে গেলে একেবারেই খাইনি। ডাক্তাররাও মানা করেন। ফাস্ট ফুড আর সফট্‌ ড্রিংকস এমনিতেও তেমন খাওয়া ঠিক না। ইউটিউবে ভিডিও দেখে দেখে প্রিন্যাটাল ইয়োগা করতাম। এগুলা কিন্তু একটু কষ্ট করে মেনে চলা খুব কঠিন না।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন হাঁটতাম। এমনকি বাচ্চা হবার একদিন আগেও বর আর এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে ঘন্টাখানেক হেঁটেছি। ঢাকায় যদি পার্কে গিয়ে হাঁটা সম্ভব না হয়, ছাদে বা বাসার ভিতরে ১৫ মিনিট হাঁটুন। দেখবেন অনেক ভাল লাগছে।

আমাদের দেশে আর একটি ভুল ধারণা হচ্ছে বেশি খেলে বাচ্চা বড়সড় হবে। সবাই বড় বাচ্চা চায়! এখানকার ডাক্তাররা কিন্তু বলেন বাচ্চার ওজন বেশিরভাগ সময় নির্ভর করে তার বাবা, মা কত ওজন নিয়ে জন্মেছিল তার উপর।

আমেরিকাতে আগের চাইতে অনেক বেশি সি-সেকশন হচ্ছে। যদিও অনেক ভাল ভাল ডাক্তাররা সিজারিয়ান সেকশনে একেবারেই বিশ্বাসী নন। সি-সেকশন একটি বড় ধরণের সার্জারি তাই নিতান্ত প্রয়োজন না হলে এখানকার ডাক্তারারা এটি করেন না। কিন্তু রুগী চাপাচাপি করলে হয়তোবা তারা রাজি হন। তাছাড়া সি-সেকশনে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়, তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের হারও বেশি।

নরমাল ডেলিভারির অনেক সুবিধার একটি হচ্ছে মা খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন এবং আগের ওজনে ফিরে যান। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করলে, পুষ্টিকর খাবার খেলে সাধারণত ৬ মাসের মধ্যে মা ফিরে যেতে পারেন আগের ওজনে। ঢাকায় আমার চেনাজানা বন্ধু, আত্মীয়দের মধ্যে গত ১০ বছরে কারও শুনিনি স্বাভাবিক উপায়ে ডেলিভারি হতে। সবাই ভয় পান, প্রচন্ড ব্যথার ভয়। আমাদের মা, খালারা মনে হয় আমাদের জেনারেশনের মেয়েদের চাইতে সাহসী ছিল। আবার ডাক্তাররাও অনেক সময় ভয় ঢুকিয়ে দেন মনে। তাছাড়া সি-সেকশন লাভজনক। ডাক্তারদের রুগীকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষ করতে হয় না। ডাক্তার তার সুবিধা মত একটি তারিখ দেন আর রুগী তার পরিবারসহ উপস্থিত হন হাসপাতালে।

মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও সচেতন থাকা প্রয়োজন। যে বাবা হবেন তারও দায়ীত্ব মায়ের সুসাস্থ্য নিশ্চিত করা।

অতিরিক্ত না খেয়ে, হাঁটাহাটি এবং হালকা ব্যায়াম করে একজন মা পারেন গর্ভকালীন এবং গর্ভপরবর্তী সময়ে সুস্থ থাকতে। একই সাথে খুব দ্রুত পারেন আগের ওজনে ফিরে যেতে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:২২
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×