প্রায় প্রতি বিকালেই হাঁটতে বের হই। বৈকালিক ভ্রমন।ঘুম-কাতুরে বলে প্রাতভ্রমন সম্ভব হয় না।নির্দিষ্ট একটা সময়ে নির্দিষ্ট একটা পথ ধরে হাঁটা আমার অভ্যাস কারন এসব রাস্তায় গাড়ী চলাচল অনেক কম।
এই হাঁটার পথের পাশেই একটি ছোট প্লট আছে যার আয়তন খুব বেশি হলে ৩০ হাত বাই ৩০ হাত।কিছু শিশু কিশোর এই প্লটটাকে মাঠ বানিয়ে ক্রিকেট খেলে। সোজসুজি পিচ বানানো যায়না তাই কোনাকুনি পিচ বানিয়ে খেলতে হয় কোনাকুনিতেও বোলারের জন্য কিছুটা জায়গা হলেও উইকেট কিপিং এর জন্য পাশের বাসার দেওয়ালই ভরসা।প্লটটির দুইপাশে রাস্তা দুই পাশে বাড়ী অতএব ব্যাটসম্যনকে খুব হুশিয়ারে খেলতে হয় কারন কারও দরজা জানালায় বল লাগলেই আউট। মাঝে মাঝে এখানে টান টান উত্তেজনায় "টেন-টেন" টুর্নামেন্টও হয় ।
আর একটু সামনে গেলেই ইষ্টার্ন হাউজিং এর দক্ষিন বনশ্রী প্রজেক্টে ঢোকা যায়। এই প্রবেশ পথের পাশেই একটি ৫ কাঠা পরিমান খালি প্লট আছে সেখানে কিছু কিশোর-যুবক ফুটবল খেলার কসরত করে।
এই ক্রিকেট বা ফুটবল যারা খেলছে তারা সবাই নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। বনশ্রী সহ এই পুরো অঞ্চলটি নিম্ন মধ্য বা মধ্যবিত্ত পরিবারে বাস অথচ এই বিশাল অঞ্চলের কোথাও একটি খেলার মাঠ নেই। পরিকল্পিত নগরী হিসাবে গড়ে উঠা ইষ্টার্ন হাউজিং এর বনশ্রী প্রকল্পে না আছে খেলার মাঠ না আছে পার্ক না আছে কোন পুকুর একই অবস্থা বসুন্ধরা সহ অন্যান্য হাউজিং প্রকল্পগুলিতে। সরকার কি এসব ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দিয়েছে ? বিনোদনের কোন ব্যবস্থা ছাড়াই এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কি ভাবে সম্ভব হচ্ছে ?
মেধা বিকাশের জন্য আমরা উত্তরা-আইডিয়াল-ভিকারুন্নেসা খুঁজে বেড়াই এ+ সংখ্যা বাড়াই কিন্তু মানসিকও শারীরিক শক্তি বিকাশের জন্য আমাদের যে মাঠ+পার্ক+পুকুর+ দরকার সেদিকে আমাদের মনযোগ শুন্যের কোঠায় অতচ এসবের জন্য আমাদের কোন বৈদেশিক মূদ্রার দরকার নেই। দরকার শুধু বৈদেশিক মনোভাব।
মন ও শারীরিক শক্তির বিকাশ ছাড়া সৃজনশীল শক্তির বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয় ।
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদের সন্তানদের জন্য উত্তরা- আইডিয়াল-ভিকারুন্নেসার পাশাপাশি মাঠ-পার্ক-পুকুর খুঁজে বেড়ানো।
আমাদের দেশের শাসক শ্রেনী গনতন্ত্র বিকাশে যত উৎসাহী এসব গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলি বিকাশে মোটেই উৎসাহী নন বরং আনুসাঙ্গিক অনুসঙ্গগুলি ভরাটে ও দখলে অতি-উৎসাহী।
ঢাকা সহ দেশের বড় বড় শহরগুলিতে যদি কোন বড়ধরনের ভূমিকম্প হয় মানুষের তখন আত্মরক্ষার জন্য খোলা জায়গা আছে কি ? ঢাকাতো এখনই একটা মৃত্যু ফাঁদ।দুর্যোগের সময় এই ফাঁদ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের এসবের অনেক বেশি প্রয়োজন।
আমরা আসলে আত্মরক্ষায় নয় আত্মধংসের প্রতিযোগিতায় নেমেছি।
স্বয়ং বিধাতা তার অপশন শেষ করে দিয়েছেন নাহয় তিনি আমাদের জন্য হয়তো কাউকে পাঠাতেন!!!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১২:১৮