১৯৭১ সালে আমি স্কুল পডুয়া।মফস্বল শহরে থাকি।স্কুলে যাওয়া আসা পাঁয়ে হেঁটেই চলতো। তখনকার সময়ে সবশ্রেনীর স্কুল ছাত্ররদের একা একা এভাবে স্কুলে যাওয়া আসাটা ছিল স্বাভাবিক ।অভিবাবকরা ছেলে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্য কালে ভদ্রে দু- একটা চোখে পড়তো ।
স্বাধীনতা আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সারাদিন মিছিল মিটিং।জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত চারিদিক।উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে সবাই। আমরা ছোটরাও কম উত্তোজিত নই ।মিছিল দেখতাম মিটিং দেখতাম কিনতু যোগ দেওয়ার সাহস হতো না।অজানা একটা ভয় কাজ করতো্।তাছাড়া মফস্বল শহরে তখন অচেনা মনুষের চেয়ে চেনা মানুষের পরিধি অনেক বড় ছিল তাই যদি কেউ দেখে ফেলে এই ভয়টাও কাজ করতো।
একদিন এই ভয়টা আর রইল না। একটা মিছিলে ঢুকে পড়লাম ,চিৎকার দিয়ে শ্লোগান দিয়ে উঠলাম জয়য়য়য়য় বাংলা।
পরে বুঝেছিলাম সেদিন ঐ শ্লোগান দিয়ে আমি আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অংশীদার হয়ে গিয়েছিলাম।এটাই আমার জীবনের সবচেয়েে বড় গর্ব।
৭ ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষন স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্য মাত্রা যোগ করলো।আরো বেশি দুর্বার হয়ে উঠলো বাঙালি। ২৫শে মার্চে পাকিস্তানি হানাদারদের চরম নৃশংসতা বাঙালির সেই দুর্বার আন্দোলনকে ঠেকাতে পারলো না।স্বাধিনতা আন্দোলন পরিণত হলো স্বাধীনতার যুদ্ধে।
আমরা বিজয় নিয়ে ফিরলাম।
আমরা স্বাধীনতা নিয়ে ফিরলাম। মাত্র নয় মাসে যুদ্ধের ময়দান থেকে স্বাধীনতা নিয়েই ফিরলাম।
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ ,জন্ম হলো একটি নতুন দেশের একটি নতুন স্বপ্নের।
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ আমাদের স্বপ্ন দেখা শুরু।
১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ স্বপ্ন ভাঙ্গার শুরু।
ফিরে আসলো পাকিস্তানি স্টাইলের দুষ্ট সামরিক শাসন ও পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা !! সাথে যুক্ত হলো নষ্ট রাজনীতি ।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও সেই নষ্ট রাজনীতি আর পাকিস্তানি প্রেতাত্মার হাত থেকে আমাদের মুক্তি মিললো না। সমাজের -রাষ্ট্রের-ধর্মের আপদমস্তক ঢাকা পড়ে গেল দুর্নীতীর চাদরে।
২২ পরিবারকে হটিয়ে ২২ হাজার পরিবারের জন্ম হলো।
নয় মাসের মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কার দেওয়া ৪৩ বছরেও শেষ করতে পারলাম না। তৈরী করে চলেছি ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনে শেষ কথাটি ছিল "এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"। যার শেষটা আমরা পেয়েছি কিন্তু শুরুটা পাইনি।
আজ আমরা ৪৪তম স্বাধীনতার বিজয় দিবস পালন করছি কিন্তু মুক্তির বিজয় আমাদের অধরাই থেকে গেল।
স্বাধীনতা আন্দোলনে সল্প উপস্থিতির যে গর্ব আমার আছে তা আমৃত্যু অমলিন হয়ে থাকবে।
কিন্তু ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখার শুরু করেছিলাম তা এখন আর অমলিন নেই !
আসলে "নয় মাস" স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য হয়তো যথেষ্ট সময় কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের জন্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৫