একটা সময় চিন্তা করতাম সবাই ক্রিটিক্যালি, র্যাশিওনালি চিন্তা-ভাবনা করলে আর টলারেন্ট হলে কতই না ভালো হত! কিন্তু এখন আমার যেটা মনে হয়, সমাজের বেশিরভাগ লোকই ক্রিটিক্যালি চিন্তা-ভাবনা চর্চা করতে পারবে না, পারবে না মানে সমাজ তাকে সে ফুসরতটা দিবে না আর মানুষ নিজেও প্রয়াস পাবে না।
তাই তারা আর্গুমেন্ট করবে বয়ান বা ন্যারেটিভ নিয়ে, রেটরিক নিয়ে। ফেইসবুকে বিভিন্ন পাবলিক গ্রুপ বা পেইজে যেসব তর্ক-বিতর্ক হয় সেসব এক বয়ান বনাম আরেক বয়ানের লড়াই।
একটা উদাহরণ দেই। কয়েকদিন আগে আমি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নিয়ে আগ্রহী ছিলাম। ফিজিক্স আমার পড়ার বিষয় না, আমি ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট করছি, চর্চার অভাবে ক্যালকুলাস ভুলে গেছি। তাই ম্যাগাজিন, ইউটিউব আর ব্লগের সাহায্যে কনসেপ্টটা জেনে নিলাম, বন্ধুদের সাথেও আলোচনা করলাম। আমরা জানি, বিজ্ঞান প্রকৃতির কোন ঘটনাকে বিশ্লেষণ করার জন্য হাইপোথিসিস বা মডেল দাঁড় করায়। তারপর ডাটা সংগ্রহের (সেটা হতে পারে এক্সপেরিমেন্ট করে) মাধ্যমে ঐ মডেলের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে। সব ডাটা যদি মডেলটাকে সমর্থন না করে তাহলে মডেল বা হাইপোথিসিসটাকে অ্যাডজাস্ট করে নেওয়ার অপশনও খোলা আছে। আবার মডেলটা টিকে গেলেও অনেক সময় সব ঘটনার ব্যাখ্যা হাজির করতে পারে না। আরও ভালো কোন মডেলের অভাবই ঐ মডেলটাকে টিকিয়ে রাখে।
কিন্তু মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নিয়ে জানার সময় ঐ মডেলের কোন খুঁত আছে কিনা জানার সুযোগ নেই আমার, কারণ মূল রিসার্চ পেপার পড়ে বোঝার যোগ্যতা বা ফুসরত কোনটাই নেই্ আমার। তাই আমি যেটা জানলাম সেটা সায়েন্স না, সায়েন্স নিয়ে মিথোলজি- যেটা বিজ্ঞান সাংবাদিকেরা সব অসামঞ্জস্য ঝেড়ে-পুছে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন। একই বিষয় রাজনীতি, ইতিহাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করুন।
স্কুল-কলেজে তাই বয়ান গেলান হয়, যারা আরেকটু মেধাবী তারা বয়ানকে ডিফেন্ড করা শিখে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বয়ানের সাথে আবেগ যুক্ত হয়, আর আবেগের বশে মানুষজন ভিন্ন বয়ানের লোকদের শত্রুজ্ঞান করে।
সম্ভবত সমাজের চাকা চালু রাখার জন্য এই বয়াননির্ভরতা একটি অতিআবশ্যক উপাদান।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪৪