মুরাদ টাকলামি নিয়া ছোটখাট ফাইজলামি হইতে পারে, কিন্তু ফাইজলামি করাটারে কেউ বাংলা ভাষা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব মনে করলে আমি লগে নাই। এজন্য আমার নিজস্ব একটা ব্যাখ্যা আছে, সেটা শেয়ার করতে চাই।
অনেক মিডিওকার আর টপারদেরই একটা লুজার ফ্রেন্ড থাকে- যার কিনা সমাজের মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য অ্যাচিভমেন্ট নাই্, যে নিজেরে নিয়া সবসময় হতাশ। এরকম একটা লুজার ফ্রেন্ড সাথে থাকার ফজিলত হইল, তার উপস্থিতিতে নিজেরে সুপিরিয়র মনে হয়; আবার তার প্রতি করুণা দেখায়া, দুইটা উৎসাহব্যঞ্জক কথা বইলা নিজেরে মহৎপ্রাণ মনে করা যায়, চাইলে তারে সর্বক্ষণ দিকনির্দেশনা দিতে দিতে একেবারে নির্ভরশীল বানায়া তার উপর অথরিটিও উপভোগ করা যায়।
বাঙালি কেন্দ্রবাসী (রাজধানী), শহুরে, সংস্কৃতিসচেতন, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত/উচ্চ মধ্যবিত্ত সমাজেরও লুজার ফ্রেন্ড আছে- সেটা হইল কেন্দ্র থেকা দূরে, গেরাইমা, তথাকথিত আনকালচার্ড, স্বল্প বা অশিক্ষিত প্রান্তিক/নিম্ন/নিম্নমধ্য/মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত স্বেচ্ছায় এই দ্বিতীয় জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়া দাঁড়ায়, তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুইলা ধরে, তাদের সমাধানের পথ বাতলায় দেয় ইত্যাদি। এইটা একটা ভালো জিনিস। শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কাছে এটার ফজিলত হইল, এতে তার সেলফ অ্যাকচুয়ালাইজেশন তৃপ্তি পায়, তারে গিল্ট কমপ্লেক্স থেকা মুক্তি দেয়, সে মোরাল হাই গ্রাউন্ডে অধিষ্ঠিত হইতে পারে- যেখান থেকা সে হলিয়ার-দ্যান-দাউ হয়া উচ্চবিত্তগোরে দুইটা গালি দিতে পারে।
আসল সমস্যা হয়, যখন সেই লুজার ফ্রেন্ড যখন কোনভাবে লেভেলে উইঠা সমান-সমান হয়া যায়- সেই্ সুপিরিয়রিটি, মহত্ব, অথরিটি তখন জলাঞ্জলি দেওনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
তথাকথিত আনকালচার্ড নিম্নবিত্তরাও যখন ফেইসবুকে আইসাই্ পড়ল, তখন সেটারে কিছুটা সমান-সমান লেভেল ধরা যায়। তারা এখন নিজেরা নিজেরা স্ট্যাটাস আপডেট করতে পারে, পছন্দমত পেইজ লাইক করতে পারে, পেইজ বানাইতেও পারে। তখন কেমনে জানি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের ক্লাস কনফিক্টের কামানের মুখ উচ্চবিত্তগো দিক থেকা সইরা নিম্নবিত্তগো দিকে তাক হইল- নিম্নবিত্তগো যখন আর করুণার দরকার নাই্, তখন তাগোরে লয়া মজা করা যাইতে পারে- যেমন, তারা মুরাদ টাকলা ভাষায় স্ট্যাটাস আপডেট করে, তারা রেডিও-মুন্নায় লাইক দেয়, তাদের লাইকড পেইজের লিস্ট দেখলে দেখা যায়, কুরআন-হাদীসের পেইজ আর চটির পেইজ পাশাপাশি ইত্যাদি। প্রাক্তন করুনার বিষয় যখন বর্তমান তামশার বিষয়ে পরিণত হয়- তখন পুরো ব্যাপারটা বীভৎস চেহারা লয়।
তাই বলি, এই মুরাদ টাকলা লয়া ফাইজলামি কোন মহৎ কিছু থেকা উৎসারিত না, বরং সংস্কৃতিসচেতন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ইনসিকিওরড সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সের ডিফেন্স মেকানিজম।
আর এই টসটসা বাংলা লেখা সুপিরিয়র জনগোষ্ঠীর বুদ্ধিমত্তা, মনন আর নৈতিকতার বড় বড় ছ্যাঁদা আবিষ্কৃত হইসে অশ্লীল ডিএসইউ গ্রুপে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:১২