somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পানির রঙ লাল

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১)
- এত্তো কান্নাকাটির কি আছে?

- ভাইয়া, তুই এইটা বলতে পারলি?

- ঢং করিস না তো! যা সামনে থেকে !

- ভাইয়া, তোর বোনের বুকে হাত দিয়েছে, আর তুই কিচ্ছু বলবিনা ওদের? আমাকে দোষ দিচ্ছিস ?

- বুকে হাত দিয়েছে, তো হয়েছেটা কি, হ্যাঁ ? ওরা আমাদের এলাকায় থাকতো না? ওরা তো আমাদের চেনা মানুষই ! আর তোর কী এমন বুক, যে হাত দেয়া যাবেনা !

- ছিঃ ভাইয়া ! তুই আমার ভাই! তোরা জন্মের সময় আমার মুখে লবন দিয়ে দিতে পারলি না?

- সামনে থেকে যাবি নাকি চড় খাবি ?

রূপা কিছুক্ষন আগে কলেজ থেকে আসার আগে হানিফের শিকার হয় রাস্তায়। হানিফেরা এই এলাকায় থাকতো, গত মাসে ফ্ল্যাট কিনে চলে গেছে। রুপাদের সাথে হানিফদের বেশ খাতির, সে সুত্র ধরেই হানিফ রূপাকে প্রথমে বাড়ির কাছেই এক গলিতে নিয়ে যায় এবং আরও দুই সহযোগীর সমন্বয়ে তার বুকে, পেটে হাতাহাতি করে। প্রযুক্তির কল্যানে মোবাইল দিয়ে সে সব ভিডিও করা হয়! শেষে ঠোঁটে এক চুমু খেয়ে রূপাকে হাসিমুখে বিদায় দেয় হানিফ।

২)
“ রূপা ! এই রূপা ! “
রূপা’র বাবা রূপাকে সমানে ডেকে চলেছে। তার ইচ্ছে করছে গলায় ফাঁস দিয়ে মরে যেতে। আজকে কোরবানীর ঈদ, হানিফের বাবা আর হানিফ গরু জবাই দিয়ে গোশত নিয়ে এসেছে তাদের বাসায়। নাস্তা দেবার জন্য রূপার বাবা রূপাকে ডেকেই যাচ্ছেন। রূপা সর্বশক্তি দিয়ে কানে বালিশ চাপা দিয়েছে, সেই বালিশ ভেদ করে সে শুনতে পাচ্ছে, “ রূপা! এই রূপা! কই গেলি ?”

রূপা’র মা হুট করে দরজা খুলে দাড়ালেন।

- নবাবের বেটি হয়েছিস ? এতোবার ডাকতে হয় কেনো?

- আম্মা, তুমিও ? তুমি না একজন মেয়ে মানুষ! তুমি কিভাবে আমাকে ওখানে যেতে বলো?

- রঙ্গ করবিনা আমার সাথে! তোর বাপ ডেকেছে, যা ! আমি কি রাজরানী যে আমার দশটা-পাঁচটা কামের বেটি আছে? নাস্তা কে দিয়ে আসবে ? তোর দাদী ? যা!

- মা, আমি কিন্তু বিষ খাবো!

- তোকে বিষ আমি নিজে এনে দিবোনে, তুই এখন যা রান্না ঘরে! কলিজা ভূনা আর রুটি দিয়ে আয়! আর একটা মিনিট দেরী করবিনা, খবরদার!

রূপা কাঁদবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে! তার আপন মা, যে মায়ের পেটে সে হয়েছে, তারও কি কোনো মায়া দয়া নেই তার জন্য?

৩)
ড্রয়িং রুমে কলিজা ভূনা আর গরম চালের রুটি নিয়ে রূপা গেলো, তার ইচ্ছে করছে হানিফের মুখে এই গরম কলিজা ভূনা ছুড়ে মারতে। কিন্তু সে পারবেনা, কারণ তারা গরীব। কে যেনো বলেছে, “গরীবের শরম থাকায় বারণ আছে”। আরও ভালো হতো যদি বলতো, গরীবের বেঁচে থাকায় বারণ আছে।

হানিফের বাবা আর রূপার আব্বা বিশাল আলাপ শুরু করে দিয়েছে, কিভাবে সিন্ডিকেট করে এবার গরু আটকে দিয়েছে, কিভাবে তারা গরু কিনলো, অত্র উত্তরার কেউ তাদের মতো এতো বড় গরু কিনতে পারেনি হেন তেন আরও কতো কী! হানিফ এ সবে ধার ধারলোনা, তার সময় আছে নাকি? সে এক নজরে রূপা’র উন্নত বক্ষের দিকে তাকিয়ে আছে আর একটা করে কলিজা মুখে নিয়ে চুষছে। রূপা এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে সাথে সাথে চোখে পানি এসে গেলো! দৌড়ে বাথরুমে গেলো সে। কল ছেড়ে চিতকার করে কাঁদতে লাগলো রূপা, সে চিতকার কলের পানির সাথে অনেক দূরে কোথাও হারিয়ে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে তার বাবা’র শেভ করবার ক্ষুরটা তার চোখে পরলো। চোখ মুছে উঠে দাড়ালো সে।

বালতি উপচে পানি পরছে। সে বর্নহীন পানি লাল রঙ হয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে মিশছে। বুড়িগঙ্গার লাল পানি দেখে কেউ হয়তোবা বলবে, ”ইশশ! নদীটা মরে গেলো, কেউ বাঁচানোর চেষ্টা করলোনা”

৪)
(এটা সম্পুর্ন আলাদা একটা ঘটনা। কেউ যদি উপরের ঘটনার সাথে মিল পান, তাহলে আমিই দায়ী থাকবো, কেননা আমি ইচ্ছাকৃতভাবে মিল ঘটিয়েছি)

রাত ৩টা বাজে। গগন বিদারী শব্দে দরজা কেঁপে কেঁপে উঠছে। মেয়েগুলা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁপছে ভয়ে। দরজাটা ভেঙ্গে গেলো, প্রায় ২০-২৫ জন সবুজ ইউনিফর্ম পরিহিত আর্মি রুমে ঢুকলো। ভীত মেয়েগুলোর চোখের পানি রাতের আঁধারে ধ্রুবতারার মতো চিকচিক করতে লাগলো।

১৯৭১, ২৭শে মার্চ সূর্য উঠার আগে, পবিত্র একটি ভোর বেলায় পাক হানাদার বাহিনী ইডেন কলেজের হল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল থেকে শত শত শিক্ষিত সম্ভাবনাময় বহ্নিশিখার মতো তরুনীদের গনধর্ষন করে এবং ফজরের আজানের কিছুক্ষন আগেই ঢাকার বিভিন্ন সড়কের আশে পাশে তাদের লাশ ফেলে রেখে যায়। তাদের লাশ চেনার একটা নির্মম বৈশিষ্ট্য ছিল। লাশগুলোর নিতম্বের ও বুকের মাংস কেটে ফেলা হয়েছিলো। পৃথিবীর বুকের সবচেয়ে নৃশংস অপরাধের সাক্ষ্মী হয়ে রইলো, এই বাংলাদেশের মাটি।

কয়েক বছর পর, ঐ এলাকার ( তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান ) কিছু মানুষ এই এলাকায় আসলো। আগের গল্পের মতোই এবারও সেই মেয়েগুলোর ভাই-বাবা-মা’রা তাদের আপ্যায়ন করাতে লাগলো। তারা সাইনবোর্ড নিয়ে গেলো, গালে পতাকা আঁকিয়ে নিয়ে গেলো। ক্রিকেট খেলার মাঠে যখন এক বাঙ্গালী খেলোয়ার আউট হয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরছে, রূপা’র বাবা-মা-ভাই এর মতোই এক মানষিকতার পরিচায়ককে দেখলাম গ্যালারি থেকে তাকে তাড়াতাড়ি বিদায় হবার জন্য তাড়া দিচ্ছে !

৫)
পাকিস্তান বাংলাদেশে খেলতে এসেছে, তাদের সাপোর্ট করা যেতেই পারে, কারণ তারা আমাদের মেহমান। ঠিক যেমনটি হানিফেরাও রূপাদের মেহমান। বাঙ্গলার মুখে মল ক্ষেপন করে পাকিস্তানকে সাপোর্ট দেয়া যেতেই পারে, যেমন রুপা’র উপর উলঙ্গতা চাপিয়ে হানিফের মুখে কলিজা ভূনা তুলে দেয়া হয়েছিলো! আর, দরিদ্র বাংলাদেশকে এতো পাত্তা না দিলে দোষের কিছুই নেই, তার অবস্থা না হয় সেই বুড়িগঙ্গার পানির অবস্থাই হবে! হলে কার কি ক্ষতি! আমরা “বুম বুম আফ্রিদী” লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে যাবো। আমাদের রুপবতী মেয়েরা গালে পাকি পতাকা একে নিয়ে যাবে। মেহমানদারীতে আমরা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ, রুপাদের পরিবারের মতো আমরাও প্রমান করে ছাড়বো। এখন আমার কথা হলো, রূপার মতোন বাংলাদেশকেও হত্যা করতে এতো বড় ক্ষুর কোথায় পাওয়া যেতে পারে?



সংকলিতঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২৩
১৬টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×