somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নৈতিকতা কি ধর্মের উপর নির্ভরশীল (প্রমান ভিত্তিক আলোচনা)/পর্ব-২

১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




যারা প্রথম পর্বের আলোচনা পড়েননি তাদেরকে নিচের লিঙ্কটি দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
নৈতিকতা কি ধর্মের উপর নির্ভরশীল (প্রমান ভিত্তিক আলোচনা)

আমাদের দেশে যে পরিমান ওয়াজ-নসিহত হয় পৃথিবীর কোথায় এত বেশি হয় না । বাৎসারিক ওয়াজ, মাসিক ওয়াজ, শবে বরাত, শবে মেরাজ, শবে কদর, রবিউল আউয়াল ইত্যাদির ওয়াজ, প্রতি শুক্রবারের ওয়াজ, ইসলামী টিভির ওয়াজ,বাসায় আরবী শিক্ষকের ওয়াজ সহ অসংখ্য ধর্মীয় আলোচনা, শিক্ষা-প্রশিক্ষন আমাদের দেশে দিনরাত চলে । অপরদিকে নৈতিকতাই আমরা পাশ্চাত্য দেশ থেকে বহু পিছিয়ে । শুধু পোষাকি নৈতিকতাই তাদের তুলনাই আমরা এগিয়ে, অথচ পোষাকি নৈতিকতা না থাকলে মানবতার জন্য কতটুকু ক্ষতিকর তা বিতর্কের অবকাশ রাখে । কিন্তু আসল নৈতিকতা তথা ওয়াদা পালন, প্রতারনা করা, ঠকবাজি, ছলচাতুরি, জোচ্চুরি, অহংকার, খুনাখুনি, হানা হানি, চুরি-বাটপারি ইত্যাদিতে আমরা বিশ্ব চ্যম্পিয়ান । ওয়াজে যেমন আমরা বিশ্ব চ্যম্পিয়ান, হীন কর্মেও আমরা বিশ্ব চ্যম্পিয়ান ।
আমি বলছিনা যে পাশ্চাত্যরা ছল-চাতুরি,চুরি ইত্যাদি মোটেই করে না। তারাও করে, তবে প্রতিযোগিতায় তারা আমাদের অনেক পিছিয়ে। আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে দেখা যায় সাইকেল চালাতে, সাধারনের সাথে মিশে বাজার করতে, আমাদের দেশের একজন সামান্য এমপিরও এমন মান তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাস্তায় প্রয়োজনে গাড়ি চলাচল করা বন্ধ করে, আপনাকে দুর্বিষহ যানজটে ফেলে, আপনার সঠিক সময়ে অফিসে/প্রোগ্রামে যাওয়া বিনষ্ট করে তাদের রাস্তায় চলাচল করতে হয়।  
এবার আসি মসজীদ-মাদ্রাসায় যারা পড়েন ও পড়ান তাদের নৈতিকতা নিয়ে। যারা দেশবাসিকে ধর্মের আলোকে দিনরাত নৈতিক হওয়ার জন্য ওয়াজ করেন তাদের নৈতিকতা নিয়ে । তার আগে বলে নেই যে আমার এ আলোচনার উদ্দেশ্য এ নয় যে মাদ্রাসার ছাত্র ও মসজীদের ইমামদের বিরুদ্ধে কোন কিছু বলা। ‍আমার শিরোনামক্ত আলোচনার প্রাসঙ্গিক হওয়াই আলোচনার ধারাবাহিকতার স্বাভাবিক অংশ ।
সাধারণভাবে মাদ্রাসার ছাত্র আর ইমামদের মনে করা হয় চরিত্রবান ও ভাল মানুষ হিসাবে। তবে বাস্তবে তাদের চরিত্রের মান কিরুপ তা সবচেয়ে ভাল করে বুঝতে পেরেছে তারাই যারা তাদের সাথে খুব কাছ থেকে মিশতে পেরেছে । আমি নিজে মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করার কারনে তাদের সম্পর্কে অনেক কাছ থেকে জানার সুযোগ পেয়েছি। আমি নিজে মাদ্রাসার হোস্টেলে ছিলাম । একজন দু’জন নয়, বহু ছাত্র ও শিক্ষককে দেখেছি সমকামিতায় লিপ্ত । বহু ইমাম-মুয়াজ্জিনও সমকামিতাই লিপ্ত । মাদ্রাসার শিক্ষকরা পরস্পরের সাথে বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দ্বন্দে লিপ্ত। মাদ্রাসার ছাত্রী-শিক্ষকের সাথে আর পুরুষ শিক্ষক সহকর্মী শিক্ষিকার সাথে অবৈধ যৌনতায় লিপ্ত, পারস্পরিক ঠকবাজি, প্রতারণা, কারসাজি সহ হেন কাজ নয় যে তারা লিপ্ত নয় । এটা আমি নির্দিষ্ট একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি না । আমার দেখা প্রায় ২০/২৫ টি প্রতিষ্ঠান থেকে নিজ চোখে দেখা ও ছাত্র -শিক্ষকদের থেকে শোনার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
অনেকে পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলেন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কেউ কেউ খারাপ থাকলেও বেশিরভাগ ভাল । এ কথা সত্য নয় । আমি বলব ৮০% এর নৈতিক অবস্থা খারাপ আর ২০% ভাল। পরিসংখ্যানকে সংখ্যাগত বিচার করা হয়, তা পার্সেন্টে দেখা হয় না । মনে করুন সারাদেশে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংখ্যা যদি হয় ১০০, তাহলে মাদ্রাসার ছাত্র সংখ্যা হবে ২০ । এখন যদি পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে মাত্র ৫ জন মাদ্রাসার ছাত্র অনৈতিক কাজে জড়িত আর সাধারণ শিক্ষার ২০ জন ছাত্র অনৈতিক কাজে জড়িত, তাহলে শতকরা দৃষ্টিতে বিচার করলে কাদের সংখ্যা বেশিই হবে? নিশ্চিত সাধারণ শিক্ষার্থিদের চেয়ে শতকরা হারে মা্দ্রাসার ৫ জন ছাত্রই বেশি হবে,নয় কি?
কিন্তু পরিসংখ্যান দেখতে গেলে সেখানে আরো কয়েকটি বিষয় থেকে যায় যা বিবেচনায় আনা হয় না । সাধারণ ছাত্ররা অনৈতিক কাজ যা করে থাকে বাস্তবতার কারনে তারা যতটুকু গোপনীয়তা রক্ষা করে, মাদ্রাসার ছাত্ররা তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি গোপনীয়তা বজায় রাখতে চেষ্টা করে । মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক,ইমাম, মুয়াজ্জিনদের নিজস্ব পরিবারগুলো বেশি কনজার্ভেটিভ হওয়ায় তাদের অনৈতিক কাজগুলো তারা গোপন করার পাশাপাশি তাদের পরিবার ও অন্যান্যরা চেষ্টা করে গোপনীয়তার মধ্যে রাখতে। মাদ্রাসার কোন ছাত্র মাদ্রাসার কোন ছাত্রীকে ধর্ষন করলেও মা্দ্রাসার ছাত্রী তা বিচারের কোন আশা করে না, প্রকাশও করে না। সাধারনের মধ্যেও গোপনীয়তার চেষ্টা থাকে, কিন্তু মাদ্রাসা-মসজীদ সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টা সাধারণের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। অতএব তাদের বিষয়টি মিডিয়াতে কম আসে, যার কারনে পরিসংখ্যানেও কম আসে । আবার সারাদেশের সাধারন মানুষের সংখ্যা বনাম মাদ্রাসার ছাত্র, ইমাম,মুয়াজ্জিনের সংখ্যা অনুপাত করুন দেখবেন সে অনুপাতে তাদের সংখ্যা কত নগন্য। অতেএব পরিসংখ্যান দেখিয়ে যে বলা হয় মাদ্রাসার ছাত্ররা সাধারণ ছা্ত্রের তুলনায় ভাল, সেটা সঠিক নয়।
আবার বলা হয় মাদ্রাসার ছাত্ররা চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে না । এ কথাও ভূয়া । সাধারণের তুলনায় অতি নগন্য সংখ্যাক মাদ্রাসার ছাত্র এটা করে- এ কথা সত্য । তবে সেটা এমন যে -ভাই আমি কখনও ঘুষ খাই না, প্রশ্ন করা হল আপনাকে কি কেউ ঘুষ দিতে চায়, উত্তর হল না। মাদ্রাসার বেশিরভাগ ছাত্র দরিদ্র হওয়ায় এ ধরনের অপরাধ করার সুযোগই তারা পায় না । সে যাই হোক । আমার পর্যবেক্ষনে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র শিক্ষকদের তুলনায় মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের চরিত্র, আচার-ব্যবহার ও নৈতিক অবস্থা নিম্নতর। তবে এখানে মাদ্রাসা বনাম সাধারণ ছাত্রদের চরিত্রের তুলনা বিষয়ে বিতর্ক করা মুল উদ্দেশ্য নয়। মুল উদ্দেশ্য হল যে নৈতিকতা ধর্মের উপর নির্ভরশীল নয় তার কিছু প্রমান দেয়া।
সুতরাং ধর্ম মানুষের নৈতিকতা নিয়ন্ত্রনে সামান্যই ভূমিকা পালন করে যা না থাকলেও সমাজের জন্য কোন সমস্যা নয় । তাহলে মানুষের নৈতিকা কিসের উপর বেশি নির্ভরশিল সে বিষয়ে পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো । তারপর কিছু প্রমান দেখাব ধর্ম মানবতার জন্য কি কি ক্ষতি বয়ে আনছে।
যারা যুক্তি দিয়ে সুন্দর পরিবেশ বজায় রেখে সমালোচনা করতে চায় তাদের সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। যারা আমার ভূল দেখিয়ে দেয় তারা আমার শত্রু নয় বরং সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সবাই ভাল থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:০৭
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×