এক হাতে তালি বাজে না
এক হাতে তালি বাজে না। মেয়েরা ছোট ছোট কাপড় পরে ঘুরে বেড়াবে, আর ছেলেরা কিছু করলেই দোষ।পুরুষদের কিছু দোষ থাকলেও মূল দোষটা আসলে মেয়েদের, মেয়েরা ঠিক থাকলে এত ধর্ষণ হয় না। ঠিকঠাক মত পর্দা করলে কখনোই রেপ হয় না…..
ধরেন আপনি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হলেন। ছিনতাইকারীর ছুরির মুখে সাধের মোবাইল আর মানিব্যাগটা তুলে দিলেন। তবে আশার কথা হচ্ছে ছিনতাইকারী ধরা পড়লো। বিচার ও হলো। কিন্তু আদালতে উকিল এক অদ্ভুত যুক্তি দেখালো। যেহেতু এক হাতে তালি বাজানো যায় না সুতরাং এই ছিনতাইয়ের পেছনে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যাক্তিটিরও সমান অবদান আছে।
পোশাকের কারনে মেয়েরা ধর্ষিতা হয়
একজন মানুষকে জোর-জবরদস্তি করে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে যখন তার পোশাকটা দোষ দেন বলেন এক হাতে তালি বাজে না, মেয়েরও দোষ আছে। তখন আমার কাছে বড় অদ্ভুত লাগে সেই যুক্তি। সেই আপনাকেই একাত্তরের তিন লক্ষ ধর্ষণের কথা বললে বলেন পাকিস্তানিরা খারাপ ছিলো পুরান প্যাচাল ছাড়েন। শিশু ধর্ষণ হলে বলেন সিক মেন্টালিটির মানুষ। হিজাব পরা মেয়ে ধর্ষিত হলে বলেন পাগল।
আমাকে একটু বোঝান কোন ধর্ষকটা ভালো ??
আমাকে শুধু একটা কেইস দেখান যে খুব নম্র, ভদ্র, বিনয়ী একটা ছেলে, যার নামে কোন মামলা নাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র, বাবা-মার গৌরব। একটা উগ্র পোশাক মিনি স্কাট পরিহিতাকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ঝোপে ফেলে ধর্ষণ করলো। এরকম একটা কেইস দেখান।
পোশাকের কারণে ধর্ষিত হয়েছে এরকম শুধু একটা কেইস দেখান।
আমি কয়েকটা কেইস দেখাই।
আপনারা বলেন;
অনেক দিন পর পর মা’কে দেখার জন্য ১৯৯৫ সালের ২৪ আগষ্ট ঢাকা থেকে বাড়ী যাচ্ছিল গার্মেন্টস কর্মী কিশোরী ইয়াসমিন। পথমধ্যে ইয়াসমিনকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে পুলিশ, এবং তাকে হত্যা করে লাশ দিনাজপুর শহরের পাঁচ কিলোমিটার দূরে রাস্তায় ফেলে দেয়। বলেই এই মেয়েটার কি দোষ ছিলো । মিনি স্কাট পরে কি সে পুলিশের সামনে…
২৮ অক্টোবর ২০১৩, ইয়াং ওয়ান গার্মেন্টস এর এক কর্মী সকালে কর্মস্থলে যাবার উদ্দেশ্যে সাভার বাস স্ট্যান্ড থেকে আনন্দ সুপার পরিবহনের একটি গাড়িতে উঠে। ওই গার্মেন্টস কর্মী গাড়িতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অন্যযাত্রী না নিয়ে দরজা বন্ধ করে গাড়ি ছেড়ে দেয় সুপারভাইজার। গাড়িটি সাভারের আমিন কমিউনিটি সেন্টার ছেড়ে আসার পর গাড়ির হেলপার ও সুপারভাইজার গার্মেন্টস কর্মীকে জড়িয়ে ধরে তার গলায় থাকা চেইনটি ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাকে ধর্ষণ করে। বলেন এই ঘটনায় কিভাবে জড়াবেন মেয়েটার পোশাক ?
৩০-১১-২০১২, সাজিয়া দক্ষিণখানের নোয়াপাড়া আমতলার একটা ক্লিনিকের খণ্ডকালীন চিকিৎসক ছিলেন। ঘটনার আগের রাত বৃহস্পতিবার ওই ক্লিনিকে তাঁর রাতের পালায় দায়িত্ব ছিল। কাজ শেষে রাত ১২টার দিকে ওই ক্লিনিকের বিশ্রামাগারে ঘুমাতে যান। এরপর দুবিত্তরা ধর্ষণ করার চেষ্টা করে তাঁকে এরপর হত্যা করা হয় রাজিয়াকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে রাজিয়া নিয়মিত হিজাব করতেন। হিজাব করার কারণে রাজিয়াকে ছেড়ে দেয়নি ধর্ষক।
পরিমল জয়ধর রাজধানীর একটি নামকরা স্কুলের শিক্ষক। নিজের ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তার ভিডিওচিত্র ধারন করে। পরবর্তীতে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নির্যাতিতা মেয়েটাকে আরও অনেকবার নির্যাতন করে। মেয়েটার জীবন থমকে গ্যাছে। ক্লাস এইটের মেয়ে, পোশাক কে কিভাবে দুষবেন বোঝান..
এভাবে একটার পর একটা লিখতে থাকলে রাত পার হয়ে যাবে। আমি মাত্র কয়েকটা ঘটনার উদাহরণ দিলাম। এই সবগুলো ঘটনাই আলোচিত। আপনি আমাকে শুধু এমন একটা ঘটনার কথা বলেন যেখানে শুধুমাত্র পোশাকের কারণে একটা মেয়েকে রেপ করা হয়েছে এবং ছেলেটা নিরীহ ছিলো।
সুব্রত শুভ’দার অনেক পুরনো একটা লেখা থেকে খানিকটা কোট করছি ;
“ভাইয়েরা আমার!!! পিলিজ বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না দয়া করে।
আমরা চলাফেরার সময় আপনারা অসচেতনার সহিত অনেক কিছু গায়ে জড়িয়ে বের হন, যা আপাদের করা উচিত না। যেমন- আপনারা ফরমাল ড্রেস পরে বের হন। একবার ভাবুন আপনাদের পেছনের শেপ বোঝা যায়, আপনাদের বুকের মাপ বোঝা যায় আপনাদের অনেক আর্কষনীয় লাগে এতে মেয়েরা আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবং এর জন্য মেয়েটি দায়ী নয় বরং আপনি দায়ী কারণ আপনি এমন পোশাকটি পরে আসছেন।
ভাইয়েরা, একবার ভেবে দেখুন; আপনি যখন টি র্শাট গায়ে দেন তখন আপনার বাহু দেখা যায় তাতে একটি মেয়ে উত্তেজিত হতে পারে তাই এমন পোশাক অবশ্যই পরা উচিত না। আর যদি আপনি বডি বিল্ডার বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোন তাহলে তো কথাই নেই প্রতিটি মেয়ে আপনাকে ডেব ডেব করে দেখবে। আপনি কেন আপনার বাপ, ভাই কে এমন টি শার্ট গায়ে দিয়ে রাস্তায় বের হতে দেন। একবার ভাবুন তো কেউ আপনার ভাই ও বাবার দিকে তাকালে আপনার কেমন লাগবে? আসুন এই পোশাক পরিহার করি।
ভাই একবার ভাবুন আপনি যখন থ্রি কোয়াটার পরে বের হোন তখন আপনার সুন্দর পা দেখে কী মেয়েরা খাদকের মতন তাকিয়ে থাকে না? তাহলে কেন আপনি সেই পোশাকটি পরেন। অনেকেই না বুঝে পরে তাই পোশাক বাছাইয়ে সাবধান হোন এবং সুন্দরের পথে আসুন। ভাইয়েরা আপনার গরম লাগে বলে হাফ হাতা জামা পড়েন যা একেবারেই উচিত না। কারণ আপনার বাহু বের হয়ে থাকে যা একদম অনুচিত। আপনে ধর্ষিত হলে কিন্তু মেয়েটার দোষ নেই বরং আপনার পোশাকটি ও আপনি দায়ী।
ভাইরা আমার, চুল দেখিয়ে হাঁটবেন না প্লিজ। আপনার সুন্দর সিল্কি চুল দেখলে মেয়েরা চুলে হাত বুলাতে চাইবে। আপনার চুলের দিকে তাকিয়ে থাকবে। প্লিজ ভাইয়েরা মাথা ঢেকে চলাফেরা করুন।
ভাইয়েরা, আপনারা স্টাইল করে বুকের বোতাম খুলে চলা ফেরা করেন। একবারও কি ভেবে দেখেছেন আপনার খোলা বুক সাথে যদি পশম থাকে তাহলে মেয়েদের কেমন অবস্থা হয়। ধর্ষন হলে কিন্তু আপনাকে দায় নিতে হবে। কারণ যে কোন মেয়ে খোলা বুক দেখলে উত্তেজনা অনুভব করবে। এটাই স্বাভাবিক। লক্ষ্মী ভাইরা আমার প্লিজ বুকের বোতাম লাগিয়ে রাস্তায় বের হোন। কোন মেয়ে যাতে উত্তেজিত না হয় সে রকম পোশাক পরে বের হোন। একটি মেয়ে আপনার বাপ, ভাইয়ের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকুক তা নিশ্চই চান না। আসুন ভাইয়েরা আমরা সত্যের পথে আসি, সুন্দরের পথে আসি।“
সংগৃহীত:সুত্র:view this link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৩