somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবপাচার এখন ই বন্ধ করতে হবে

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে সংবাদের বিশেষ শিরোনাম ছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে অবৈধ মানাব পাচার । থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সীমান্তে গভীর জঙ্গলে গণকবর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার থেকে মানবপাচারের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পায় । সে সাথে সন্ধান মিলে পাঁচ শতাধিক গনকবরে যেখান থেকে উদ্ধার করা হয় শতাধিক বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মরদেহ৷ এদের সবাই নৌকায় ভেসে মিয়ানমার বা বাংলাদেশে থেকে জীবনের প্রয়োজনে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মালয়েশিয়ায় পারি দিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য তাদের সাথে অসম্ভব ভাবে প্রতারণা করেছে। এরপর আন্তর্জাতিক চাপে নিজেদের ইজ্জত রক্ষার জন্য থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সরকার যথেষ্ট কঠোর হয়েছিল। তাতে আমরা ধরে নিয়েছিলাম সমুদ্রে নৌকায় ভেসে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ড যাওয়ার প্রবনতা প্রায় কমে আসবে। বাস্তবে তা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। গত ১০ ফেব্রুয়ারী ১২০ জন বা তার অধিক যাত্রী নিয়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাবার সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরের ইঞ্জিন বিকল হয় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। আমি যখন এই লেখা লিখছি তখনকার সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ১৫ জনের মৃতদেহ ও ৬৫ জনকে জীবিত সগর থেকে উদ্ধাট করা সম্ভব হয়েছে। আর প্রায় চল্লিশ জন বা তার অধিক মানুষের সন্ধান এখনো মিলেনি। তবে মৃত্যের সংখ্যা বরো বাড়ার সম্ভবনার কথাই বলছেন আমাদের কোস্টগার্ড। সাগর থেকে জীবিতের সকলেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী মুসলমান রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে নির্বিচারে গণহত্যা ও নির্যাতন চালানোর কারণে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এ ছাড়া আগে থেকেই বাংলাদেশে চার লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। সব মিলিয়ে উখিয়া-টেকনাফে অশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি, যারা কর্মহীন ও অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ অবস্থান করছে উখিয়ায়। তাদের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে মানব পাচারকারী চক্রগুলো আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারে টার্গেট করা হচ্ছে এসব রোহিঙ্গাকে। এই মানব পাচারে বাংলাদেশী ছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারের নাগরিকরা জড়িত রয়েছে বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আর রোহিঙ্গাদের পাচারের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা শিবির গুলিতে আছে একাধিক চক্র। ইতোমধ্যে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্হা সরকারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। যেখানে দেশী বিদেশী মানব পাচারকারী চক্রগুলো বিস্তারিত দেওয়া ছিল। তার পর ও অবৈধভাবে মানব পাচার বন্ধ করা সম্ভব হয় নি।

সাগর পথে অবৈধভাবে মান পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্তরা আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। কিছুদিন আগে আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জাতে পেরেছি মাদক ও মানব পাচারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কক্সবাজারের অনেকেই আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। কিছুদিন আগেও যাদের কেউ রিক্সা বা ভ্যান চালক ছিলেন কেউ না লবন ক্ষেতের দিন মজুর। তাদের সকলের ই মুল হোতা নাকি টেকনাফের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি ও তার পরিবার। অবশ্য বদিকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যম থেকে জাতীয় সংসদ সব খানে আলোচনার ঝড় উঠলেও আমাদের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তার টিকিটি পর্যন্ত ছুতে পারে নি। উল্টো দুর্নীতি দমন কমিশন বদিকে দায় মুক্তির সনদ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এমন কি আমাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক শ্রেণীর অসাধু সদস্য ও মানব পাচারকারীদের সহায়ক-শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে ।

আমাদের সরকার মানবপাচার রোধে যথা সাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আট বিভাগে মানবপাচার প্রতিরোধ ট্রাইবুনাল করার কথা ও ভাবছে সরকারব। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ৬০১টি মানব পাচারের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭টি মামলা ঝুলছে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। আটটি বিভাগের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৬৪টি মানব পাচার মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৭৯টি, রাজশাহী বিভাগে ২৩৫টি, খুলনা বিভাগে ৮৩৩টি, বরিশাল বিভাগে ৩৮৫টি, সিলেট বিভাগে ২২৬টি, রংপুর বিভাগে ৫৮টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১২১টি মানব পাচার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তবে বাস্তব সত্য পাচারকারীরা এতটাই শক্তিশালী যে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় তাদের বেশীর ভাগকেই বিচারের মাধ্যমে সাজার ব্যবস্হা সম্ভব হয় না বলেই পাচারকারীরা বীরদর্পে তাের কার্যক্রম চালায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

অবৈধ পথে বিদেশ পারিদিতে গিয়ে প্রায়ই পৃথিবীর বিভিন্ন স্হানে বিভিন্ন ভাবে জীবন দিতে হয় আমাদের দেশের মানুষকে সেই সাথে বর্তমানে যোগ হয়েছে রোহিঙ্গা সংকট। সামাজিক ভাবে অবৈধ পথে বিশেষ বিদেশ যাত্রাকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকারকে এই ব্যাপারে কঠিন থেকে কঠিনতম ব্যবস্হা গ্রহন করতে হবে। আর যাতে একটু মানুষকে ও এই পথে জীবন দিতে না হয়। তা না হলে সরকারের সমস্ত উন্নয়ন দেশে ও বিদেশে পুরোপুরি ম্লান হয়ে যাবে।


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×