অতিসম্প্রতি বহুল আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার রায় দিয়েছেন দ্রুতবিচার আদালত। এ মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাবস্ত করে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আবরার হত্যার রায়ের পর ই এর পক্ষে বিপক্ষে উত্তাল আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে বেশির ভাই নেটিজেন ই এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে সমর্থন করেছেন। আবার অনেকের প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিঃসন্দেহে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহন করেছেন বিশ্বসেরা অনেক প্রকৌশলী। আবরার ও মেধাবীদের ই একজন জন। কিন্তু ভগ্যের নির্মম পরিহাস মেধাবী আবরার কে খুন হতে হয় পথভ্রষ্ট বেশ কয়েকজন মেধাবী ছাত্রের হাতে। একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার বেশ কয়েক জন নেতা কর্মী অমানুষিক ভাবে আদিমযুগীয় কায়দায় হত্যা করে আবরার কে। আবরারে হত্যাকারীদের বর্তমান আদালতের রায় নিয়ে অনেকেরই মন্তব্য আবরারের মত একজন মেধাবী ছাত্রকে খুনের জন্য ২৫ জন মেধাবীর জীবন নাকি শেষ করে দেওয়া হলো। এই তাদের এই কথার সথে আমি কোন ভাবেই এক মত হতে পারি না বা পারবো না। প্রকৃত মেধাবী কি বাস্তবিক ভাবে কি আমরা সেটাকে উপলব্ধি করতে পারছি। মেধাবী হতে হলে তাকে মননশীল একজন প্রগতিধারার মানুষ হতে হবে পুঁথিগত মেধাই একজন মানুষকে প্রকৃত মেধাবী হিসেবে মাপার এক মাত্র মাপকাঠি নয়। একজন মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এটা তার মৌলিক গনতান্ত্রিক অধিকার। তার সেই অধিকারে কোন মানুষের হস্তক্ষেপ করার অধিকার একটি সুষ্ঠু গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কোন নাগরিককে ই দেওয়া হয়নাই। যতক্ষণ না তা ঐ মত রাষ্ট্র বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর না হয়। আর যদি তার সেই মতামত রাষ্ট্র বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয় তার জন্য রাষ্ট্রের সঠিক আইনের আওতায় এনে তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা ও রাষ্ট্রের ই দায়িত্ব। আবরারের ফেইসবুক পোস্ট দেখে নাকি তার হত্যাকরী ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের কাছে তাকে শিবির কর্মী হিসেবে মনে হয়েছে আর তারই প্রেক্ষাপটে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি জামাত শিবিরকে এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে? আর যদি কোন সংগঠনের নেতা কর্মী তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে তার জন্য কি কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা কোন সভ্যসমাজের মানুষের কাজ? জামাত- শিবিরের রাজনীতি তো নতুন কিছুই নয়। আজ জামাত- শিবিরের আর্দশের ধারক ও বাহকদের অনেকের ই রাজনৈতিক ভাবে স্হান হয়েছে আওয়ামিলীগে। হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন হওয়ার পর ও ঢাকার শহরের বিভিন্ন দেওয়ালে দেওয়ালে ঝুলতে দেখাযায় হিযবুত তাহরীরের পোষ্টার! আজ পার্যন্ত কত জন হিযবুত তাহরীরে নেতা কর্মীকে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। আর গ্রেফতার হলে ও তাদের আইনের মাধ্যমে বিচার করেই সাজার মুখোমুখি করতে হবে। অপরাধী যেই হউক ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ই আছে।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের ইতিহাস ঘটলে দেখাযায় ছাত্ররাজনীতিতেই অধিক খুনাখুনি হয়েছে। বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এর তালিকা দীর্ঘ হলেও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ গুলিতে এর সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য। এর আগে ২০০২ সালের ৮ জুন, টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলির মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের মেধাবী ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি। তার মৃত্যুতে সেদিন জ্বলে উঠেছিল গোটা দেশ। শোকে, বেদনায় স্তব্ধ হয়ে যায় সবাই। এর পর ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী হাতুর চাপাতি দিয়ে মাথায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আরিফ রায়হান দীপকে পরে ২০১৩ সালের ২ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ই মারা যায় দীপ। সনি ও দীপের হত্যাকারীরা আজো বিচারের বাহিরের ই রয়ে গেছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সকালে পুরান ঢাকার জজকোর্টের সমনে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ দাসকে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া বদৌলতে বিশ্বজিৎ হত্যার ভয়াবহ দৃশ্য সরাসরি দেখতে হয়েছিল বিশ্ববাসীকে। বিশ্বজিৎ হত্যার সাথে ও জরির ছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামিলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রীলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের ই কয়েকজন। বিশ্বজিৎ হত্যা সম্পর্কে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক ঘাতকরা জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন রাতে তারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারির সঙ্গে গোপন বৈঠক করে। ঐ গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে অবরোধের পক্ষে কেউ মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলা চালাতে হবে। এর পর ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। বাকি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, এবং প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। তবে আসামীদের মধ্যে মাত্র আটজন গ্রেপ্তার ছিলেন, এবং বাকি ১৩ জন ছিলেন পলাতক।পরবর্তীতে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড পাওয়া ৮ জনের মধ্যে ২ জন বেকসুর খালাস, ৬ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং মাত্র ২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট[৮]। সেই সাথে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া দুইজন আসামীকেও খালাস দেওয়া হয়।মূল আসামীদের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের পরে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সংখ্যা ২১ থেকে ১৭তে নেমে আসে। গ্রেপ্তার হওয়া মাত্র একজনের মৃত্যুদন্ড, এবং ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড রায় বহাল আছে। বাকি ১৩ জন এখনও পলাতক। রায়ের প্রতিক্রিয়াতে বিশ্বজিতের পরিবারের মত হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ। এর আগের ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের অনেক কুকর্মের কথা জাতিকে নাড়া দিয়েছিল তার মধ্যে ছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মানিকের ধর্ষন সেঞ্চুরির। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে টিএসসিতে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে শ্লীলতাহানি শিকার হন শাওন আক্তার বাধঁন নামের এক নারী। পররে দেশের দেশের বিভিনৃন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হলে তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সচেতন নাগরিক সমাজের মাঝে। পরবর্তীতে অভিযোগ নাকি সন্দেহাতীত প্রমাণ করতে না পারায় আসামিদের খালাস দেয়া হলো। অথচ শাওনকে লাঞ্চিত করা সেই ছবি আজো সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ অনলাইনে এখন বিদ্যমান। এই চিত্র যে শুধু আওয়ামীলের তেমন টি নয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকায় প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ই এমন আমল নামা আছে। এর আগে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্হায় এমন ঘটনা কম ঘটে নি। অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদকে কোপানো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আফতাবকে হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে খুন, চট্টগ্রামে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ তাহের হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হল সামসুন্নাহার হলে রাতের আধারে ছাত্রদল ও পুলিশের যৌথ হামলা সহ এমন অনেক ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটছে ছাত্রদল ও ছা্ত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা। তবে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামিলীগ দীর্ঘদিন বিভিন্ন কৌশলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে রাকার কারনে তাদের দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের আচরন চালচলন এতটাই উগ্র ও অপ্রতিরোধ্য যা দীর্ঘ ৫০ বছরে এমনটা দপশের মানুষ দেখেছে বলে আমার মনে হয় না। বর্তমানে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গ সহ সাধারন মানুষের মাঝে বহুল আলোচিত ব্যক্তি সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান। যদি ও আমার আগে লেখায় তাকে নিয়ে ই অনেকটা ই বলেছি তার পর ও বলছি মুরাদ নিঃসন্দেহে একজন মেধাবী ছাত্র আর মেধাবী বলেই নটরডেম কলেজ ও পরবর্তীতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে লেখা পড়া করে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালের নবম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের মন্ত্রীসভায় তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। শুরুতে মুরাদ হাসান এতটা অপ্রতিরোধ্য ছিলেন বলে আমার মনে পরে না। কিন্তু যখনই তিনি উপলব্ধি করলেন রাজনীতিতে যতটা অপ্রতিরোধ্য ততোটাই ক্ষমতা। অবশ্য আমাদের মহান সংসদ অধিবেশনে থেকে ও অশালীন কুরুচিপূর্ণ লাগাম মন্তব্য কম শুনতে হয় নি। আমাদের আজকের রাজনৈতিক এমন অশ্রাব্য কথা বার্তা অপ্রতিরোধ্য লাগাহীন ভয়ংকর চালচলন ও কাজ কর্ন তার জন্য যারা করছে তারা না যতটুকু দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী রাজনীতির নামে তাদের ঐ শক্তিতে তারা বলীয়ান করছেন।
এবার আসি আবরার হত্যা নিয়ে আবার হত্যার বিচারের তার পরিবার অসন্তোষ প্রাকশ করলে ও একজন আাসামীর যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পরিবারের পক্ষথেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পরবর্তীতে আবরার হত্যাকারিদের চুড়ান্ত বিচার কি হবে তা নিয়ে মনের ভিতর একটা খুট খুট ভাব জন্ম হয় যখন বিশ্বজিৎ হত্যার বিচারের রায় সামনে চলে আসে। বাঁদনের শ্লীলতাহানির বিচারের রায় সামনে চলে আসে। আজ যারা আবরার হত্যাকারীদের মেধাবী বলে প্রশ্ন রাখছেন একজন মেধাবী হত্যার জন্য এত মেধাবীর জবীন কি ধ্বংস হয়ে যাবে? তাদেরকে বলতে চাই পৃথিবীতে অনেক মেধাবীর মেধাই আমাদের মানবতাকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে এনে দিয়েছিল। হিটলার ও কিন্তু কম মেধাবী ছিলেন না। আর আবরারকে যারা হত্যা করছে ওরা কখনোই মেধাবী হতে পারে না। ওরা ভয়ংকর মানুষ রুপী জানোয়ার। আর ঐ সকল জানোয়ার ও তাদের এমন ভয়ংকর কর্মকান্ডে মদদ দাতা ও সৃষ্টিকারীদের যদি উপযুক্ত বিচার কর্যকর করা হয় তা হলে আর কোন আবরারের পরিবারকে চিরদিন শোক কান্না কাঁদতে হবে না। আশা করি আমাদের রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্হা ঐ সকল তথকিত মেধাবী জানোয়ারদের উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে যাথাযথ শাস্তি কার্যকর করে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন।