প্রতিটি সম্পর্ক মূল্যবান। প্রতিটি সম্পর্ক স্বতন্ত্র। একটি সম্পর্ক অন্যটির সাথে প্রতিযোগিতা করে না, করা উচিত না। একটি সম্পর্ক গড়তে আরেকটি সম্পর্ক ভাঙতে হয় না, যদি না তা একই সম্পর্ক হয়। একটি সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে আরেকটি সম্পর্ককে অপমান করতে হয় না। প্রতিটি সম্পর্কেরই প্রয়োজন আছে। প্রতিটি সম্পর্কেরই আলাদা মর্যাদা আছে। একটিকে পেয়ে অন্যটিকে হেয় করা অথবা একটিকে না পেয়ে অন্যটিকে মূল্যহীন ভাবা অপরাধ।
কিন্তু মানুষ সময়ে সময়ে ভুল করে, উচিত-অনুচিতের সীমাবোধ হারিয়ে ফেলে। মানুষ বদলে যায় ঋতুর মতো। মানুষ স্বার্থপর হয়, মানুষ অকৃতজ্ঞ হয়, মানুষ ভুলে যায় সোনালী অতীত। কারণ মানুষের কাছে বর্তমানটাই মুখ্য, মানুষের কাছে আপন স্বার্থটাই বড়, মানুষের কাছে আত্মতুষ্টি বেশি পছন্দের।
কিছু মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। অন্যকে ভালবাসা বলতে তারা শুধু কোন একজনকে ভালবাসা বোঝে। স্বার্থত্যাগের কথা বললে তাদের কল্পনায় শুধু একজনেরই ছবি ভাসে। কিন্তু এই পৃথিবী শুধু দুজনকে নিয়ে নয়, অন্যদের জীবনে যেমন তেমনি তাদের জীবনেও অন্যদেরও প্রয়োজন আছে।
মানুষ অন্যের ইতিবাচক বদলে যাওয়া কামনা করে, কিন্তু নিজের কোন বিষয়টা বদলানোর প্রয়োজন সেটা উপলব্ধি করে না। মানুষ সবসময় অপরকে দোষারোপ করতে ভালবাসে, কিন্তু নিজের দোষগুলো অন্য কেউ আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলে তাকে শত্রু মনে করে। অথচ শুদ্ধ সমালোচকই শ্রেষ্ঠ বন্ধু।
যেহেতু মানুষ 'পারফেক্ট' নয় তাই সম্পর্কে টানাপড়েন আসবেই। সম্পর্কে ভালবাসা থাকলে মান-অভিমানও হবে। অধিকারের সম্পর্কে বিবাদ হতেই পারে। এখানেই নিজেকে প্রমাণের পালা। এখানেই দেখিয়ে দেওয়ার পালা সম্পর্কের প্রতি কে কতোটা বেশি সংকল্পবদ্ধ। কে কতোটা বেশি ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখে। কে কার চেয়ে বেশি সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। এখানে জয় তারই হবে যে সবচেয়ে বেশি স্বার্থত্যাগী। এখানে পরমুখাপেক্ষী হওয়া যাবে না। ত্যাগ-তিতিক্ষার বেলায় নিজেকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিঃস্বার্থ হয়ে অপরের সুখে সুখ উপলব্ধি করতে জানতে হবে। যার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা হচ্ছে, যার জন্য সবকিছু সহ্য করা হচ্ছে- তারও বোধদয় হতে হবে। সারা জীবন সে একরকম থেকে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। শুধু নিজের কথা ভাবলে হবে না, তাকে অপরের কথাও ভাবতে হবে। অন্যের কাছ থেকে সে যে গুরুত্ব পাচ্ছে তাকেও সম্মানের সাথে অন্যকে পাল্টা গুরুত্ব দিতে হবে।
যে কোন সম্পর্কের বেলায় বলা কথাগুলো প্রযোজ্য। প্রতিটি সম্পর্কের বেলায় আমরা মূল্যায়ন করবো কতোটুকু দিলাম, কতোটুকু ত্যাগ করলাম; কতোটুকু পেলাম বা কতোটুকু হারালাম তা নয়। সরাসরি নিজের দিকে না তাকিয়ে অন্যের দৃষ্টিতে নিজেকে দেখবো। অন্যকে দেখবো তার অবস্থান থেকে।
আমরা সম্পর্ক ভাঙার জন্য ছুতো খুঁজব না, আমরা সম্পর্ক রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবো, শেষ খড়কুটো আঁকড়ে ধরবো। এটাই হওয়া উচিত যে কোন সম্পর্কের প্রধান সংকল্প।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৭