ভানু আপন মনে আরো ভাবিতে লাগিল কি কি কার্যসুচী গ্রহন করিবে এইবার ঈদে। বাংলাদেশের টেলিভিশন অনুষ্ঠান অবশ্যই দেখিবে কারন এই দেশের চ্যানেল তো আর ভারতে দেখা যায় না! কেনাকাটার তো আগেই অন্ত ঘটাইয়াছে তাই খুব একটা টেনশিত নহে তবে এইবার নীলক্ষেতে একবার যাইতেই হইবে। কলকাতায় বসিয়াই ভানু শুনিয়াছে তার অনেক বই নাকি এইখানে ফটোকপি করিয়া অত্যাধিক কম মূল্যে বিক্রয় করিয়া থাকে। তাহারা কেমন করিয়া তা করে, স্বচক্ষে তাহা দেখিবার বড় আশা জাগিয়াছে এইবার। তবে টুকটাক কতিপয় কেনাকাটা যে করিবেনা তাহা নয়। কেনাকাটা অবশ্যই করিবে। লোকমুখে এবং পত্রিকার মারফত ভানু শুনিয়াছে যে ঈদের সময় অত্যাধিক যাত্রী তোলার কারনে এই দেশে অনেক নৌকা/লঞ্চ ডুবি ঘটিয়া থাকে, লঞ্চ ডুবিতে কেউ অক্কা পেলে আবার নাকি ক্ষতিপুরন হিসেবে রামছাগল দেয়া হয়, এবং সাথে সাথেই কিছু তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাহার রিপোর্ট দেশবাসী আর জানিতে পারেনা আর দুর্ঘটনাও কমেনা! তার স্বীয় “নৌকাডুবি” উপন্যাস এর সেই বিখ্যাত নৌকাটি কেন আচমকা ডুবিয়াছিল? কার গাফিলতি মাঝির না অন্য কারুর ? সেখানে কাউকে ছাগল বা অন্যকিছু দেয়া হয়েছিল কিনা সেটির জন্য একটি কার্যকরি তদন্ত কমিটি গঠন করাও ভানুসিংহের এইবারকার বাংলাদেশে আসার উদ্দেশ্য।
এই বার ঈদের ছুটিতে ভানু টিভি অনুষ্ঠান ত দেখিবে বলিয়া মন স্থির করিয়াছে কিন্তু একের পর এক ,অনবরত বিজ্ঞাপন এর কারনে আদৌ পারিবে কিনা সে বিরাট ভাবনায় বিষয়। এই দেশের কবি সাহিত্যিকদের সহিত দেখা করিবার ব্যাপক ইচ্ছাও আছে। ভানু অনেক শুনিয়াছে এই দেশের বড় ,ছো্ট, মাঝারি, কিংবা আদৌ কবি নয় এমন কবি সাহিত্যিকদের প্রতিভার কথা। হেন বিষয় নাই যাহা নিয়া তাহারা লিখিতে পারেনা, বলতে পারেনা, প্রত্যেকে যেন একেকজন জীবন্ত এন্সাইক্লোপিডিয়া !! ভক্তদের সাথেও একটি সভা করিবার ইচ্ছা করিয়াছিল রবীন্দ্র সরোবরে। আচমকা মনে পড়িল, ঢাকার রাস্তা ঘাটে যে জ্যাম ইতোপূর্বে দেখিয়াছে! তাহাতে গৃহ হইতে বাহির হইবার সাহস করিতে পারিতেসে না। উপরন্তু এইখানে প্রয়োজনের সময় কোন যানবাহন পাওয়া যায় না, আর কবি গুরু হিসেবে লম্বা জোব্বা পরিয়া বাসে ঝুলিবার মত দুঃসাহসও করিতেও মন চাহিতেসে না, কারন বাসে রডে ঝুলিয়া যাইবার সময় আচমকা দমকা বাতাসে জোব্বা সামলানো বিপদজনক হইতে পারে, পাছে আবার কোন দুষ্টু অনলাইন সাংবাদিক রিপোর্ট করিয়া দিলে ইজ্জত তো আবার ফাতা ফাতা হইয়া যাইবে। তাহাকে পাইয়া অনেক টিভি চ্যানেলই লাইভ টকশো আয়োজন করিতে চাহিবে, কোন টিভি চ্যানেল এর টক শো তে যাইবেনা বলে স্থির করিয়াছে কারন, ওইখানে অনেক বিব্রতকর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে বলে শুনিয়াছে। দুইদিন ধরিয়া ভানু কমলাপুরে টিকিটের সন্ধানে লোক পাঠাইয়াছে। কিন্তু টিকিটের টিকিটাও দেখা সে পায়নাই! সব নাকি ব্ল্যাকে চলিয়া গিয়াছে! এই দুরঃঅবস্থায় সর্বশেষ ভানু উপর মহলে ফোন করিতে লাগিল শুনিয়াছিল দেশের অনেক বড় বড় হর্তা কর্তা নাকি তাকে দিয়েই তাদের দিন শুরু করে ! তার জন্মদিনে গুরু গুরু বলে মুখে ফেনা তুলিয়া ফেলে ! কিন্তু কেহই তাহার ফোন ধরিলনা উলটা মোবাইল কোম্পানীগুলো তারে কিছু ভ্যালু এ্যাডেড সার্ভিস আর ওয়েল্কাম টিউন গছায়া দিল। অবশেষে ভানু ভাবিয়া দেখিলো তবে কি এই দেশেই থাকিয়া যাইবে ? কেননা সারা রাত্রি সজাগ থাকিয়া, কমলাপুরে লাইনে দাড়াইয়া টিকিট করিবার মত বয়স এবং শক্তি এখন আর নাই...
Saturday, October 8, 2011 at 11:50pm
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭